মাটিরাঙ্গায় করোনাকালেও ক্লান্তিহীন ইউএনও-এসিল্যান্ড
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। যত দিন যাচ্ছে ততই বাংলাদেশেও করোনার প্রভাব দৃশ্যমান। দেশব্যাপী করোনা আতঙ্কের মধ্যে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গাকে করোনামুক্ত রাখতে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্লান্তিহীন ছুটে চলছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ ও মাঠ প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ফারজানা আকতার ববি। রক্তপাতহীন এ লড়াইয়ে তারা দু’জনই যেন ক্লান্তিহীন।
কলেজ শিক্ষিকা স্ত্রী যখন স্বামীর ঘরে ফেরার অপেক্ষা করছে আর তিন বছরের ছোট্ট মেয়েটা যখন বাবা আসছে কিনা দেখার জন্য বারবার গেটের কাছে ছুটে যাচ্ছে তখন মানবিক সহায়তা নিয়ে কোন মধ্যবিত্তের বাড়িতে ছুটে যাচ্ছেন ইউএনও বিভীষণ কান্তি দাশ। অথবা দুর্গম কোন জনপদে ছুটে গেছেন কর্মহীন, হতদরিদ্র বা দু:স্থ মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিতে।
আবার কখনো ছুটে যাচ্ছেন কোন বিদেশ ফেরতের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত বা কোন হাট-বাজারে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে। এভাবেই দিনরাত লড়াই করে চলেছেন অদৃশ্য এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে।
করোনা মহামারীতে একটি ফোনে অভুক্তদের বাড়িতে খাবার পৌছে দিয়ে ইতোমধ্যে মানবিক ইউএনও পরিচিতি লাভ করেছেন বিভীষণ কান্তি দাশ। অন্যদিকে করোনাকালে যারা অনুরোধ, নির্দেশনা অম্যান্য করছেন তাদের কাছে কঠোর ইউএনও হিসেবেও বেশ পরিচিতি তাঁর। রাত-দিন, সকাল-দুপুর সবই যেন চলছে সমান তালে।
অন্যদিকে মানুষ যখন করোনা ভয়কে উপেক্ষা করে অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন তখন তাদের ঘরে ফেরাতে বাজার থেকে মহল্লায় ছুটে বেড়াছেন মাঠ প্রশাসনের আরেক নবীন কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মিজ ফারজানা আক্তার ববি।
সাধারণ মানুষকে সরকারি নির্দেশনা জানাতে তাঁর চেষ্টার যেন কোন কমতি নেই। চলতি বছরের শুরুতে মাটিরাঙ্গায় যোগদান করা এ কর্মকর্তার প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে যেন মাটিরাঙ্গার মানুষকে নিরাপদ রাখা। বল প্রয়োগে নয়, মানুষকে সচেতন করে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
এছাড়ায় করোনা মোকাবেলায় ইউএনও’র নির্দেশনায় মাঠে কাজ করছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের আট কর্মকর্তা। যারা করোনা প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন অসহায়,হত-দরিদ্রদের মাঝে সরকারি ত্রাণ সহায়তা বিতরণসহ উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদের মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, সরকারি ত্রাণ বিতরণ, মানবিক সহায়তার তালিকা যাচাই, টিসিবির পণ্য বিক্রি তদারকি ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন।
ইতোমধ্যে মাটিরাঙ্গায় করোনার বিস্তার ঠেকাতে বিদেশ ফেরতসহ ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত লোকদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, কোয়ারেন্টিনে থাকা লোকদের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে মাঠে কাজ করছে ৯ সদস্যের ‘কুইক রেসপন্স টীম’।
যারা প্রকাশ্যে খাদ্য সহায়তা নিতে সংকোচবোধ করছেন তাদেরকে ফোন কল, মেসেজ ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ৩৩৩ তে পাওয়া ফোনে খাদ্য সঙ্কটে থাকা লোকদের ঘরে পৌছে দিয়েছেন খাদ্য সহায়তা।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, নিজের জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও গত দুই মাসের বেশী সময় ধরে মাঠে আছি। লক্ষ্য একটাই মাটিরাঙ্গার মানুষকে নিরাপদ রাখা। আমাদের সব প্রচেষ্টা তখনই স্বার্থক হবে যখন মাটিরাঙ্গার মানুষ নিরাপদ থাকবে। করোনামুক্ত থাকবে আমাদের মাটিরাঙ্গা। তিনি সকলকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একদিন আঁধার কেটে যাবে আর উদিত হবে করোনামুক্ত নতুন সুর্য্য।