parbattanews

মাটিরাঙ্গায় মাধ্যমিকের ফলাফলে ধস: হতাশ অভিভাবক মহল

নিজস্ব প্রতিবেদক, মাটিরাঙ্গা:

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় সদ্য ঘোষিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ধস নেমেছে। কোন প্রতিষ্ঠানই শতভাগ পাস দেখাতে পারেনি। সেইসঙ্গে বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক কম। তবে স্কুল গুলোর চেয়ে ফলাফলের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে মাদ্রাসা গুলো। স্কুলগুলোর গড় পাশের হার যখন ৫০ শতাংশ তখন মাদ্রাসাগুলোর গড় পাশের হার ৭৭ শতাংশ।

ফলাফল বিশ্লেষনে দেখা গেছে, মাটিরাঙ্গার সদ্য জাতীয়করন হওয়া মাটিরাঙ্গা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ২’শ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৯১জন। এ প্রতিষ্ঠানের গড় পাশের হার ৪৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১জন শিক্ষার্থী। মাটিরাঙ্গার একমাত্র নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাটিরাঙ্গা বালিকা বিদ্যায়ের গড় পাশের হার ৪৩.৯০ শতাংশ। এ বিদ্যালয়ের ৮২জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৬ জন। মাটিরাঙ্গা সদরের আরেক প্রতিষ্ঠান মাটিরাঙ্গা মিউনিসিপ্যিাল মডেল হাই স্কুলের ১’শ ৬০জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৫জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটির গড় পাশের হার ৩৪.৩৭ শতাংশ। যা উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। তবলছড়ি কদমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩’শ ৭৩জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১৭৮জন। এ প্রতিষ্ঠানের গড় পাশের হার ৪৭.৭২ শতাংশ। শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১’শ ৩৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৫৩জন। এ প্রতিষ্ঠানের গড় পাশের হার ৩৯.২৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২জন শিক্ষার্থী। আমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৩৯ জন। এ প্রতিষ্ঠানের গড় পাশের হার ৪৬.৪২ শতাংশ। তাইন্দং উচ্চ বিদ্যালয়ের ২’শ ২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১’শ ৩৬ জন। এ প্রতিষ্ঠানের গড় পাশের হার ৫৯.৩৮ শতাংশ। খেদাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১’শ ৩৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৭১ জন। এ প্রতিষ্ঠানের গড় পাশের হার ৫১.৮২ শতাংশ। গোমতি বি.কে উচ্চ বিদ্যালয়ের ২’শ ৪৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১’শ ৬৩ জন। এ প্রতিষ্ঠানের গড় পাশের হার ৬৬.৮০ শতাংশ। যা উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ গড় পাশের হার। এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় ৪৫জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪১জন উত্তীর্ণ হয়েছে। গড় পাশের হার ৯১.১১ শতাংশ।

অন্যদিকে মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে মাটিরাঙ্গা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ৪২জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪০জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের গড় পাশের হার ৯৫.২৩ শতাংশ। তবলছড়ি ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ৮৬জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের গড় পাশের হার ৬৬.২৭ শতাংশ। তাইন্দং মোহাম্মদীয় দাখিল মাদ্রাসার ৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৬জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের গড় পাশের হার ৭৭.৯৬ শতাংশ। খেদাছড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জনই উত্তীর্ণ হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের গড় পাশের হার শতভাগ।

ফলাফলে ধস নামার কারণ হিসেবে শিক্ষকদের শিক্ষা বানিজ্যকে দায়ী করেছেন একাধিক অভিভাবক। তাদের মতে উপজেলার কতিপয় শিক্ষকের প্রাইভেট ও কোচিং বানিজ্যের শিকার হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে হলে অভিলম্বে মাটিরাঙ্গা থেকে এসব প্রাইভেট ও কোচিং বানিজ্য বন্ধ করতে হবে। এমনকি এসব অসাধু শিক্ষকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন হতাশ অভিভাবকমহল।

এদিকে এ ফলাফলে হতাশ মাটিরাঙ্গার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষানুরাগী ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক সোমবার সকালে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ’র সাথে দেখা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এমন ফলাফলের কারণ উদঘাটন করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন।

ফলাফলের বিষয়ে জানতে চাইলে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, এমন ফলাফল কাম্য হতে পারেনা। আমরা খুব শীঘ্রই মাধ্যমিকের শিক্ষকদের নিয়ে একটি সভা করে এমন ফলাফলের কারণ জানতে চাইবো। পাশাপাশি এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনের পথও বের করবো। প্রাইভেট ও কোচিং বানিজ্য বন্ধে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Exit mobile version