parbattanews

মাটিরাঙ্গায় শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের গণ পিটুনি দিলেন আ.লীগ নেতা

খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুমতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশ্নের উত্তর ও রিডিং পড়তে না পারায় বিরেন্দ্র কিশোর (বিকে) উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণ পিটুনি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও ঘটনার নায়ক প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় কেউই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রাজি হননি। এ নিয়ে তোলপার চলছে।

সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। অথচ খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গার গুমতি বিরেন্দ্র কিশোর (বিকে) উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে বেত দিয়ে শিক্ষার্থীদের পিটানোর ঘটনা। তবে কোন শিক্ষক নন, খোদ ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন নিজেই বেত দিয়ে পিটিয়েছেন ১৬ জন শিক্ষার্থীকে। ঘটনাটি গত সোমবার (১৩ মার্চ) ঘটলেও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার কারণে জানাজানি হয় দেরিতে।

বিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শিক্ষক শারমিন আক্তার জানান, সেদিন (১৩ মার্চ) সকাল সোয়া ১০টার দিকে সপ্তম শ্রেণির ইংরেজি ক্লাস নেয়ার সময় গুমতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন হঠাৎ পিছনের দরজা দিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্ন করলে শিক্ষার্থীরা হতবম্ব হয়ে পড়ে। প্রথমে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একজন ছাত্রীকে প্রশ্ন করেন চেয়ারম্যান। কিন্তু ভাষাগত কারণে ঐ ছাত্র-ছাত্রী উত্তর দিতে ও রিডিং পড়তে না পারায় ক্ষোভে ক্লাসে বেত নিয়ে আসতে বলেন ইউপি চেয়ারম্যান। বিদ্যালয়ে বেত অনুমতি নেই বলে জানালে চেয়ারম্যান ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, আজ থেকে আমি অনুমতি দিলাম। চেয়ারম্যানের নির্দেশে বাধ্য হয়ে রুম থেকে একটি স্কেল এনে দিলে চেয়ারম্যান ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, এটা দিয়ে হবে না। পরে বাধ্য হয়ে একটি বাঁশের কুচি এনে দিলে সেই বেত দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পিটান চেয়ারম্যান আর অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। তখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বহু শিক্ষার্থী।

বিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল হুদা বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে অবহিত করলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেননি এবং শিক্ষার্থীদের কোন অভিযোগ নেই বলেও উড়িয়ে দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তোফাজ্জল হোসেন গোমতি ইউনিয়নেরও আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার ক্ষমতার দাপটে স্থানীয়রা ভীত ও সন্ত্রস্ত ছিলেন।

এদিকে ঘটনার তিনদিন পর বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. সামছুল হক বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে জানান, বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। আগামীতে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি ছাড়া ক্লাসে কাউকে না ঢুকতে পরামর্শ দেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে ঘটনা তদন্তের আশ্বাসও দেন।

অপর দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেননি। তবে স্বপ্রণোদিত ব্যবস্থা নেয়া হলে সাংবাদিকদের জানানো হবে।

খাগড়াছড়ি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা বলেন জনপ্রতিনিধি অনধিকার চর্চা করেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে গুমতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। আর বলেন, আমি ঘটনার জন্য ব্যথিত।

গুমতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন সাংবাদিকদের ফোনে ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমি ঘটনার জন্য ব্যথিত। তবে সুশিল সমাজের দাবি তদন্তপূর্বক বিচার।

 

 

 

নিউজটি ভিডিওতে দেখুন:

খাগড়াছড়িতে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের পেটালেন ইউপি চেয়ারম্যান

Exit mobile version