parbattanews

মাটিরাঙ্গা পৌরসভায় ‘নাগরিক’ সেবা যেন সোনার হরিণ

পৌরসভায় রাজস্ব আদায় বাড়লেও নাগরিক পরিসেবা বাড়েনি

পার্বত্য খাগড়াছড়ির ‘মাটিরাঙ্গা পৌরসভা’ ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ অতিবাহিত করলেও পৌর ভবনেই আটকে আছে পৌরসভার কর্মযজ্ঞ। এখানে জন্ম নিবন্ধন, জাতীয়তা সনদ আর ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ছাড়া নাগরিক সেবা যেন সোনার হরিণ।

বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুতায়ন, পানি ও পয়োনিষ্কাশন সমস্যাকে সঙ্গী করে পথচলা এ পৌরসভা যেন নাগরিকদের গলার কাটা। বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ পৌরসভায় রাজস্ব আদায় বাড়লেও নাগরিক পরিসেবা বাড়েনি। প্রতিষ্ঠার পর দেড়যুগ পেরুলেও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা বেহাল। বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা নেই। শহরের প্রধান সড়কসহ অধিকাংশ সড়কেরই অবস্থা বেহাল। পৌর শহরের কোথাও নেই ময়লা ফেলার ডাস্টবিন। যত্রতত্র পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড, ৩নং ওয়ার্ডের হাতিয়াপাড়া, ২নং ও ৪নং ওয়ার্ডের একাংশে এখনো বিদ্যুতের আলোর দেখা মেলেনি। যেখানে এখনো হারিকেন বা কুপি বাতিই পৌর নাগরিকদের ভরসা। পৌরসভার প্রধান সড়কসহ কয়েকটি এলাকায় সড়কবাতি থাকলেও বেশীরভাগই জ্বলেনা।

গ শ্রেণী থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পরে সাত বছর পেরিয়ে গেলেও পৌর নাগরিকদের জীবন মানের উন্নয়ন হয়নি। ২৫.৫০ বর্গ কিলোমটার আয়তনের এ পৌরসসভার জনসংখ্যা ৩৫ হাজারেরও বেশী।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এ পৌর শহরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই নাজুক। সামান্য বৃষ্টিতেই মাটিরাঙ্গা পৌর শহরের প্রধান সড়কে পানি জমে যায়। আর তখন ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানির মিতালীও ঘটে এ সড়কে। খোদ পৌরসভার গেইটেই পানি আর ময়লার স্তুপ পৌরসভার বেহাল অবস্থার কথা জানান দেয়।

মাটিরাঙ্গা পৌর শহরের প্রধান সড়কসহ অলি-গলিতে পানি নিষ্কাশনের নালাগুলো বর্জ্য ও আবর্জনায় ভরে আছে। পানি যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। রাস্তা ও নালা যেন একাকার। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য পড়ে আছে। এসব থেকে দুর্গন্ধ বের হয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। শহরের কোথাও ময়লা ফেলার সুনির্দিষ্ট স্থান ও ডাস্টবিন না থাকায় পৌরবাসী পলিথিনে ভরে সড়কে ফেলে রাখে আবর্জনা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে সড়ক ও পাশের নালায়। বেশির ভাগ নালার কোনো ঢাকনা নেই।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত চৌধুরীপাড়া এলাকায় সড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। সামান্য বৃষ্টিতেই সেখানকার কাঁচা সড়কে পানি জমে যায়। নাগরিকদের কাঁদা মাড়িয়েই নিজ নিজ বাড়ি ফিরতে হয়।

মাটিরাঙ্গা পৌর সদরের বাসিন্দা মো. নুরুল হকসহ একাধিক নাগরিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন, নাগরিক সনদপত্র, ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ছাড়া আর কোন সেবা এখানে মেলেনা।

একাধিক কাউন্সিলর পৌর সভার বেহাল দশার জন্য পৌর মেয়র মো. শামছুল হককে দায়ী করে বলেন, মেয়রের মর্জি মতো পৌরসভার কর্মকান্ড পরিচালনার কারণেই কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি।

কাউন্সিলরদের অভিযোগ অস্বীকার করে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক বলেন, বরাদ্ধ অনুপাতে পৌরসভা আয়তনে বড় হওয়ার কারণে কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছেনা। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও উন্নয়ন হচ্ছে। সম্প্রতি ৯টি ওয়ার্ডে নতুন করে প্রকল্প গ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এ পৌরসভা উন্নয়নের গতিধারায় ফিরবে।

Exit mobile version