parbattanews

মাদ্রাসা সুপারের অর্থ আদায়: ছাত্রীর ফেইসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল

ছাত্রীর ফেইসবুক স্ট্যাটাস

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে ছাত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশ হওয়া মাদ্রাসা সুপার ছৈয়দ হোসেন আবারো আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। এবার একই মাদ্রাসার আরেক ছাত্রী তার শিক্ষা গুরু সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন অন্যায় ভাবে অর্থ আদায়ের। ওই ছাত্রীর কাছ থেকে সার্টিফিকেটের জন্য ৫০০টাকা অর্থ আদায়ের স্ট্যাটাস ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মন্তব্য ছাড়াও অনেকে স্ট্যাটাসটি শিয়ার, স্কিন শর্ট নিয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপারের শাস্তি চেয়ে সমালোচনায় মেতে উঠেছে।

স্ট্যাটাসে অনেকে মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাইফুদ্দিন শিমুল নামে একজন লিখেছেন- ‘পড়ে আমি অবাক হইনি, কারণ এই সুপারের কু-কৃর্তি আমরা আগে থেকে জানি’। সাগর নামে একজন লিখেছেন- টাকা টা দেওয়া মোটেও উচিত হয়নি। সার্টিফিকেটটা তোমার নিজের অর্জন। তুমি নিজের যোগ্যতায় এটা অর্জন করেছ। এক্ষেত্রে টাকা বিনিময়ের প্রশ্নই আসেনা।

বাসু দে লিখেছেন- বর্তমানে আমাদের দেশে যারা এভাবে প্রতিবাদ করে তাদের কোনো মূল্য নেই। কারণ একজন প্রতিবাদ করলে কি দেখবে তোমার সাথে পড়ে তারই মধ্যে কিছু আছে স্যারদের কাছে ভালো হওয়ার জন্য তোমার বিপক্ষে কথা বলবে এবং তোমাকে নিয়ে সমালোচনা করতে বসবে। কিন্তু শুধু তোমার জন্য করো নাই এই প্রতিবাদ সবারই জন্য করেছো।

জান্নাতুল ফেরদৌস কেয়া’ নামে ওই ছাত্রীর ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-
আরে কেমি যে! কি জন্য আসছো?
: হুজুর, দাখিলের সার্টিফিকেটের জন্য।
: অহ্। টাকা এনেছ?
: জ্বি হুজুর। কত দেওয়া লাগবে?
: ৫০০ টাকা।
একটু অবাক হলাম।
একজন স্টুডেন্ট পাবলিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যত খরচ লাগে তা সরকারিভাবে ফরম পূরণের আগেই নিয়ে নেওয়া হয়। এরপরও এডমিট কার্ড দেওয়ার সময় শিক্ষকরা অবৈধভাবে অনেক টাকা নিয়েছে। এখন আবার সার্টিফিকেটের জন্য ৫০০ টাকা, নাম্বার পত্রের জন্য ৩০০ টাকা? মনেমনে হিসাব কষলাম, সরকারি বাজেট বেড়েছে বলেই কি ঘুষের বাজেটও বেড়েছে? না।এই প্রতিষ্ঠানে তো ঘুষ কখনোই কম ছিলো না।

সেই ২০১৪ সালের কথা: মাদ্রাসায় অতিরিক্ত পরীক্ষার ফিঃ, বাধ্যতামূলক কোচিংয়ের টাকা আদায়, ডায়রি ক্রয়ে বাধ্য করা এবং অতিরিক্ত মাসিক ফিঃ আদায়ের কারণ জানতে চেয়েছিলাম মাদ্রাসার সুপারের নিকট।

সেদিন তিনি আমার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।
রেগে আগুন হয়েছিলেন ঠিকই।আর আমাকে বলেছিলেন, “আমার কাছে জবাবদিহি চাস? কি করে এত সাহস? অ+ পেয়েছিস বলে? এই ধরনের এ+ আমি ছিঁড়ে ছিঁড়ে পানিতে ফেলি যে।” তখন হাসছিলাম আমি। আসলেই যে যেটার মূল্য বুঝে না, সেটাতো সে ছিঁড়ে ফেলতেই পারে? পরে আমাকে আবার ডেকে পাঠালেন। আর বলেছিলেন, আমি যেন চুপ থাকি। এবং স্টুডেন্টসদের হাতে নিয়ে রাজনীতি যেন না করি! সেদিন তিনি আমার লেখাপড়ার খরচও বহন করতে চেয়েছিলেন!! আমি সকলের পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম। এই ঘৃণিত অনুদান পাওয়ার জন্য নয়।আমার বাবার আয় আমার লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো। সেদিন বুঝেছিলাম, অর্থের লোভ মানুষকে কতটা নিচে নামায়! তারপর হুজুর একদিন আমার বাবাকে ফোনে বললেন, “মেয়েকে দিয়ে আমাকে ব্লেকমেল করছেন কেন?”
অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে ব্লেকমেল হয়ে যায়! সেটা জানা ছিলো না। তখন থেকেই ঐ মাদ্রাসার প্রায় টিচারদের নিকট আমি এক ভয়ঙ্কর প্রাণি।

আজ এতো বছর পর আবার সেই ভয়ঙ্কর রুপ তাঁদের দেখাতে চায়নি। প্রশ্ন করিনি “এই টাকা গুলো কেন নিচ্ছেন?” তাই টাকা গুলো বের করে দিয়ে চলে আসলাম।
এই প্রসঙ্গে ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস কেমি বলেন- ব্যক্তিগতভাবে আমি ফেইসবুকে স্ট্যাটাসটি দিয়েছি। এই হয়রাণির শিকার আমি একা নয়। ওখানকার প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী এই হয়রাণির শিকার।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাদ্রাসা সুপার ছৈয়দ হোসেনর ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, নাইক্ষ্যংছড়ি মদিনাতুল উলুম মডেল ই: দা: মাদ্রাসার সুপার ছৈয়দ হোসেন ইতোপূর্বে নানা ঘটনার জন্মদিয়েও এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সর্বশেষ মাদ্রাসার এক ছাত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ওই মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য হন মাদ্রাসা সুপার ছৈয়দ হোসেন। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় অনিয়ম, দুর্নীতিসহ একাধিক অভিযোগের তদন্তও হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু বার বার বিতর্কিত ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়লেও অদৃশ্য শক্তির বলে তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। যার কারণে মাদ্রাসার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

Exit mobile version