শুষ্ক মওসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি

মানিকছড়িতে আমনের বাম্পার ফলন : ঘরে ঘরে নবান্নের পিঠা-পায়েসের ধুম

fec-image

মানিকছড়ি উপজেলায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। নবান্নের শুরুতে ঘরে ঘরে চলছে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম। কৃষক বনাম কৃষিবিদ’দের সমন্বয়ে আমনের বাম্পার ফলনে চাষীদের মাঝে আনন্দের বন্যা। শুষ্ক মওসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে কৃষকদের জোর দাবি ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিগত আমন মওসুমের চেয়ে এবার উপজেলায় আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন কৃষিবিদরা। এবারও গত মওসুমের ন্যায় ২ হাজার ৯শত ৭৬ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। কৃষক বনাম কৃষিবিদদের মধ্যে সমন্বয় বাড়তে থাকায় এবার জমিতে উৎপাদিত ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকরা দারুণ খুশিতে মনের আনন্দে জমিতে এখন পুরোদমে ধান কাটছেন।

উপজেলার তিনটহরী হাজী ইকবাল হোসেনের বিল, বড়ডলু বিল, কুমারী বিল, ভোলাছোলা বিল, যোগ্যাছোলা হেডম্যান বিল, বড়বিল মহাজন বিল, ডাইনছড়ি বিল, বাটনাতলী বিল, ধর্মঘর বিল, গচ্ছাবিল, রাঙ্গাপানি বিলসহ উপজেলার আনাচে-কানাচে এবারও ২ হাজার ৯শত ৭৬ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৪শত ৬১ মেট্রিক টন। কিন্তু আমন ধান কাটা অবস্থায় সরেজমিনে এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশংকা ব্যক্ত করছেন কৃষিবিদরা।

ফলে দেশে উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তির তথ্য ও বীজ সংগ্রহ করে কৃষকরা দ্রুত সময়ে তা চাষাবাদ করে চমক সৃষ্টি করেছেন এখানে। সম্প্রতি জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মতুর্জা আলী ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট (বিনা) উপকেন্দ্র খাগড়াছড়ির সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ.বি.এম শফিউল আলম উপজেলায় বিনাধান-১৬ এর উৎপাদন সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এক অনুষ্ঠানে এসব কৃষিবিদরা বলেন, পাহাড়ের এই পাদদেশে বিনাধান-১৬ এর বাম্পার ফলনে আমরা খুশি। হেক্টর প্রতি সাড়ে ৫ মে.টন ধান উৎপাদন নিঃসন্দেহে বাম্পার ফলন।

এ সময় কৃষিবিদরা বলেন, বিনা’র উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পকালীন আমন ধানের জাত বিনাধান-১৬, বিনাধান-১৯, হাইব্রীড এ্যারাইড এজেড ৭০০৬সহ নতুন নতুন ধানের বীজ চাষাবাদে এ অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত কৃষক বনাম কৃষিবিদ’র মধ্যে সমন্বয় থাকলে সরকারের নতুন নতুন উদ্ভাবনে ব্যাপক সফলতার পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ  হবো।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উপজেলায় চারটি ইউনিয়নের ১২টি কৃষিব্লকে দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে চাষাবাদে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনার প্রতিফলন হিসেবে সম্প্রতিকালে উপজেলায় ধান উৎপাদনে দিন দিন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত বছর আমন মওসুমে উপজেলায় উৎপাদনে হয়েছিল ১৩ হাজার ৪শত ৬১ মেট্রিক টন। এবারও ঠিক লক্ষ্যমাত্রা পূর্বের ন্যায় ধরা হলেও বাস্তবে তা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশংকা ব্যক্ত করছেন কৃষিবিদ’রা।

এবার চাষ হয়েছে- বি.আর-১০৬০ হেক্টর, বি.আর-১১,৫১৫ হেক্টর, বি.আর-২২৯১ হেক্টর, ব্রি-ধান-৩৩৬০ হেক্টর, ব্রি-ধান-৪৯,৭৩৫ হেক্টর, ব্রি-ধান-৫১,৪১০ হেক্টর, ব্রি-ধান-৫২,২৮৫ হেক্টর, ব্রি-ধান-৫৬, ১০০ হেক্টর, ব্রি-ধান-৭১,৩৬ হেক্টর, স্বর্ণবাসুরী-২৮৭ হেক্টর, পাইজাম- ২১৪ হেক্টর, হাইব্রীড এজেড ৭০০৬, ২৫ হেক্টর, বিন্নি- ৫৫ হেক্টর ও বিনাধান-১১.১৬, ১৭ ও ২০ চাষবাদ হয়েছে প্রায় ৪০ হেক্টরসহ মোট ২ হাজার ৯শত ৭৬ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষা হয়েছে।

এদিকে উপজেলার বিভিন্ন বিলে গিয়ে ধানের বাম্পার ফলন প্রত্যক্ষ করা গেছে। এ সময় দেখা কৃষকরা নবান্নের মহাআনন্দে দলে দলে জমিতে ধান কাটছে আর বাড়িতে পিঠা-পায়েস তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভোলাছোলার সফল কৃষক কংচাইরী মারমা বলেন, শুষ্ক মওসুমে এখানে সেচ সুবিধা না থাকায় কৃষকরা চাষাবাদে ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়। তাই উপজেলার বড় বড় বিল গুলোতে যদি সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা যায় তাহলে এখানকার কৃষকরা ধান উৎপাদনে চমক সৃষ্টি করবে। আমরা কৃষিবিদ’দের মাধ্যমে সরকারের কাছে সেচ সুবিধা চাই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নাজমুল ইসলাম মজুদার বলেন, এখানাকার কৃষক এবং কৃষিবিদ বিশেষ করে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় ভালো থাকায় এবং প্রকৃতি কৃষক অনুকূলে থাকায় এবার আমন ধান চাষাবাদ ভালো হয়েছে। আমরা বিলে বিলে ধানের ফলন জরিপ করছি। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারবো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন