parbattanews

মানিকছড়িতে এক অসহায় গৃহিণীর আর্তনাদ

সুখের আশায় জন্মস্থান ছেড়ে প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে শহরে এসেও সুখ দীর্ঘস্থায়ী হলো না মোহাম্মদ চৌধুরীর! প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করে মানিকছড়িতে এসে এক যুগ অতিবাহিত করতে না করতেই হঠাৎ ছোট ছেলের পুরো শরীর অবশ হওয়ার মধ্য দিয়ে সংসারে নেমে আসে মানবিক বিপর্যয়ের হাতছানি। ছেলের পুরো শরীর অবশেষে প্রতিবন্ধী রূপ ধারণ করার বছর চারেক পর মোহাম্মদ চৌধুরীও মিনি স্ট্রোকে জীবন অসাড় হয়ে পড়েন! ফলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে মানিকছড়ি’র অসহায় মোহাম্মদ চৌধুরীর পরিবারে ! মানুষের দান-খয়রাতে নিভু নিভু জীবন প্রদীপে বহমান গৃহিণী এখন বেঁচে থাকার আর্তনাদ করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ৪নং তিনটহরী ইউপি’র রাঙ্গাপানি এলাকার মোহাম্মদ চৌধুরীর জন্মস্থান চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার কাচিয়াপাড়া গ্রামে। পিতা মোহাম্মদ আলী ও মাতা মোহরা বেগমের সংসারে ২ বোন ও ৪ ভাইয়ের মধ্যে মোহাম্মদ চৌধুরী মেঝো। পিতার সংসার ছেড়ে সুখের দুঃস্বপ্ন নিয়ে ১৯৮০ সালের প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে ছুঁটে আসেন মোহাম্মদ চৌধুরী (৫৫)।

শ্রমিকের পেশায় চলা সংসারে একে একে চার পুত্র সন্তানের আগমন। হঠাৎ ২০০৮ সালের পরবর্তীতে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুতে সাজানো সংসার এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন মোহাম্মদ চৌধুরী। এক পর্যায়ে (২০০৬) নতুন সংসারে আরেকটি পুত্র সন্তানের আর্বিভাব। ফলে ক্ষুদ্র আয়ে সংসার চালাতে বেগ পাওয়ায় ২০১১ সালে মানিকছড়িতে ছুঁটে আসা। এদিকে প্রথম সংসারের ৩ পুত্র সন্তান প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়েই শহরে গ্যারেজ ও মিল-কারখানায় কাজে লিপ্ত হয়।

ফলে দ্বিতীয় স্ত্রী জীবন নাহারও পুত্র মো. আকাশকে নিয়ে নিকটাত্মীয়ের .১০ শতক জায়গায় বেড়া ঘরে সুখ খুঁজতে বসবাস শুরু করেন। কর্ম হিসেবে বেছে নেন সিএনজি চালক পেশা। কিন্তু কিছুতেই সুখ নামক সেই অধরা পাখিকে আপন করতে ব্যর্থ হন মোহাম্মদ চৌধুরী।

২০১৪ সালে উঠানে হোঁচট খেয়ে বাম হাতে ব্যাথা পান শিশু পুত্র মো. আকাশ। এ থেকেই ধীরে ধীরে শিশু আকাশের দু’হাত, দু’পা অবশ হতে থাকে। প্রথমে বিষয়টি তেমন আমলে না নিয়ে ব্যাথা-বেদনার ঔষধ প্রয়োগ করলেও তাতে হিতে বিপরীত হয়ে অল্প সময়ে শিশু আকাশ পঙ্গুত্ববরণ করে। ধীরে ধীরে শিশু আকাশ বয়সে কিশোর (১৪) হলেও বাস্তবে সে চিরপ্রতিবন্ধী! মুখে দু’চারটা কথা বলার সাধ্য ছাড়া হাত-পা বা শরীরের কোন অঙ্গ-পতঙ্গ নাড়াচাড়া করার সাধ্য তার নেই!

এদিকে ২০১৭ সালে মোহাম্মদ চৌধুরীও মিনি স্ট্রোকে জীবন অসাড় হয়ে পড়েন! তার পুরো শরীর অবশ হয়ে টানা ৩ বছর এক বিছানায় (চৌকিতে) তার অমানবিক জীবন! একমাত্র মুখের বুলি ছাড়া শরীরে কোন অনুভুতি নেই।

ফলে ওই পরিবারের নেমে এসেছে মানবিক বিপর্যয়! একমাত্র গৃহিনীর বেচে থাকার আর্তনাদে প্রতিবেশীরা সাধ্য অনুযায়ী মাঝে-মধ্যে দান-খয়রাত দিলে চুলোয় আগুন জুটে। একটি অসহায় পরিবারে অমানবিক জীবন প্রদীপের খবরে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেল অত্যন্ত অমানবিক বা বিপর্যস্ত পরিবেশে নিভু নিভু বহমান জীবন প্রদীপ নিয়ে গৃহীনি জীবন নাহার ক্ষণে পুত্র ও ক্ষণে স্বামীর সেবাযত্নে ব্যস্ত রয়েছে। চুলোয় ঠিকমতো আগুন জ্বলে না প্রতিদিন!

ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ স্থানীয় সমাজকর্মী মো. মাঈনুদ্দীনের মাধ্যমে খবর পেয়ে সম্প্রতি গৃহিণী জীবন নাহারকে একটি ভিজিডি রেশন কার্ড করে দিয়েছেন। আর প্রতিবন্ধী পুত্র মো. আকাশ উপজেলা সমাজে সেবার মাধ্যমে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছেন। এছাড়া সংসারে আয়-রোজগারের আর কোন উৎস নেই!

ফলে বেঁচে থাকার একটু আকুতি, আর্তনাদ করে জীবন নাহার বললেন, স্বামীর অভাবী সংসারে পুত্রের চিকিৎসায় একটু অবহেলা ও স্বামীর মিনিস্ট্রোকে আজ আমি মানবিক বিপর্যয়ে দিনাতিপাত করছি।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি ওই পরিবারের অসহায়ত্ব ও বিপর্যস্ততা দেখে মানবিক কারণে একটি ভিজিডি কার্ড এবং করোনাকালে কিছু ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। এই অসহায় পরিবারের জন্য আর কিছু করা যায় কী না আমি সে বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান এর সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেবো।

Exit mobile version