মানিকছড়িতে দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ

fec-image

দেশব্যাপি হত-দরিদ্র,অসহায় পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে ‘দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়। ফলে পার্বত্য খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে দু’অর্থবছরে উপজেলার ৮২টি দুঃস্থ পরিবারে দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ পেয়ে তাদের‘দুঃস্বপ্ন’ এখন বাস্তবে পরিনত হয়েছে।

যুগের পর যুগ কুঁড়ে ঘরে থাকা পরিবারগুলো এখন সেমিপাকা ভবন পেয়ে আনন্দে বিভোর। এক বাক্যে সকলের বুলি, আমরা জীবনে কখনো ভাবিনি‘ ইটের তৈরি ভবনে’ থাকতে পারবো। এ যেন অসম্ভবকে (দুঃস্বপ্ন)জয় করা,‘রঙ্গিন স্বপ্ন’।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপি হত-দরিদ্র,অসহায় ও কুঁড়ে ঘরে থাকা পরিবারগুলোর জীবনমান উন্নয়নে দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণের উদ্যোগ করেন।

ফলে পার্বত্য খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে ২০১৮-২০২০ অর্থবছরে উপজেলার ৮২টি হত-দরিদ্র ও অসহায়(দুঃস্থ) পরিবারের তাদের জীবনমান উন্নয়নে দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ করায় এখন ওইসব পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৪৬টি এবং চলতি অর্থবছর (২০১৯-২০২০) ৩৬টি ২ কক্ষ বিশিষ্ট(১০ ফুট +১০ ফুট) ঘর, একটি কিচেন রুম( ৬ ফুট+৮ ফুট), ১াট টয়লেট( ৬ ফুট + ৬ ফুট), একটি করিডোর( ৭ ফুট+৮ ফুট) এবং একটি( ৫ ফুট+ ১০ ফুট)বারান্দা বিশিষ্ট টিনসেট বাসগৃহ নির্মাণ শেষ হচ্ছে।

সরেজমিনে পরিদর্শণকালে দেখা গেছে, নির্বাচিত পরিবারগুলোর কারোরই দূর্যোগ সহনীয় কিংবা আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কোন ঘর ছিল না। ছন, খড়, কুটোতে বানানো অনেকটা ঝুপড়ী ঘরে যুগের পর যুগ তাদের বসবাস এবং দিনে এনে, দিনে খাওয়ার সাধ্য ও তাদের ছিল না ৫-১০ শতক টিলা(৩য় শ্রেণির)ভূমিতে জীবনবাজি রেখে বসবাস করছিল তারা।

এসব পরিবারগুলোর কারোরই কল্পনায় কিংবা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি সরকার তাদেরকে সেমি পাকা ঘর তৈরি করে দিবে।

দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ পেয়ে আনন্দে গৃহীনি নুনু চৌধুরী, আফিয়া বেগম, শামসুন নাহার, রোকেয়া বেগম,জয়-ই-বাহার, মেহেরজান বিবি ও মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ মিয়া এক বাক্যে বলেন, জীবনে কোন দিন স্বপ্নেও ভাবি নাই, এ রকম সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত ঘর বানিয়ে ঘুমাতে পারবো! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র আন্তরিকতা আজ আমাদের দুঃস্বপ্ন বাস্তবে পরিনত হয়েছে।

৬৫ বছর বয়সী বিধবা শামসুন নাহার কানা জড়িত কন্ঠে বলেন, আজ ৪০ বছর ধরে এখানে আমার বসবাস। স্বামীর ইচ্ছা ছিল ইটের ঘর বানিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকবে,কিন্তু সে ইচ্ছা পূরণ হতে দেয়নি মরণব্যাধি ক্যান্সার! ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সে মারাই গেল! আজ আমি ঘর পেয়ে মহাখুশি।

৮৫ বছর বয়সী জয়-ই-বাহার আক্ষেপ করে বলেন, কপাল খারাপ, ১৯৮১ সালে সরকার কর্তৃক বন্দোবস্তী পাওয়া জায়গা ছিল, কিন্তু ঘর করার স্বাধ্য ছিল না। ফলে মাসিক একশত টাকা(জায়গার ভাড়া) ভাড়া দিয়ে বুড়ো-বুড়ি’র বসবাস!

একদিন আমাদের এ দূরাবস্থার খবর পেয়ে ইউএনও ম্যাডাম আমাদের’কে দেখতে এসে খোঁজ-খবর নেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে ২ কক্ষ বিশিষ্ট(১০ ফুট +১০ ফুট) ঘর, একটি কিচেন রুম( ৬ ফুট+৮ ফুট), ১টি টয়লেট( ৬ ফুট + ৬ ফুট), একটি করিডোর( ৭ ফুট+৮ ফুট) এবং একটি( ৫ ফুট+ ১০ ফুট)বারান্দা বিশিষ্ট টিনসেট ভবন নির্মাণ করে দেন। আজ ১ মার্চ নতুন ঘরে উঠেছি। এ পরন্ত(শেষ) বয়সে এ প্রাপ্তি’র জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং প্রধানমন্ত্রী’র প্রতি শ্রদ্ধা।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দীন জানান, আমরা প্রথম পর্যায়ে ৪৬টি দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ শেষ করেছি। এখন চলছে ২য় কিস্তির ৩৬টির নির্মাণ কাজ, যা শেষ পর্যায়ে রয়েছে, আশা করছি আগামী ১৭ মার্চের আগে এ অর্থবছরের ৩৬টি ঘর নির্মাণ শেষ হবে ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ বলেন, এ অঞ্চলে অনেক দরিদ্র জনগোষ্ঠির কুঁড়ে ঘর বসবাস। এসব পরিবারে নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। এসব পরিবারে বেশি সংখ্যকদের নিজস্ব রেকডীয় ভূমি না থাকায় বরাদ্ধ দেয়া যাচ্ছে না।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনায় এনে কাজ করছি। নিয়ম-নীতিতে কিছুটা শিথিলতা প্রয়োজন।

উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমির রেকর্ড সংক্রান্ত বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, পাহাড়ের হত-দরিদ্রদের নিজ নামে রেকডীয় ভূমি নেই বললেই চলে। ভূমির বিষয়টি শিথিল করা গেলে সরকারের উদ্দেশ্য এবং ভোক্তাদের দূর্ভোগ শতভাগ সফল হবে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবা প্রয়োজন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কুঁড়ে ঘর, দূর্যোগ, পার্বত্য
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন