parbattanews

মানিকছড়িতে আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে স্ত্রী-সন্তান অত্যাচারের অভিযোগ

খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার ৩৩ ব্যাটালিয়ন আনসারে কর্মরত সদস্য রবিন ভট্টাচার্য ধর্মান্তরিত নাম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে স্ত্রী ও দু’বছরের কন্যা সন্তানকে কষ্ট এবং স্ত্রীকে মারধর, নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রামের এনায়েত বাজার এলাকার সালাহ উদ্দীন আহমদের কন্যা মর্জিনা খানম ও চন্দনাইশ উপজেলার কুলালডেঙ্গা গ্রামের অধীর ভট্টাচার্যের পুত্র রবিন ভট্টাচার্য (ধর্মান্তরিত নাম- মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র মধ্যে প্রেমঘটিত কারণে ২০১৮ সালে ৭ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয়। এরপর তাঁদের কোল আলো করে জন্ম নেয় কন্যা সন্তান। আদর করে নাম রাখেন, আঞ্জুমান আরা খানম (২)।

কিন্তু মর্জিনার মনের আনন্দে আকস্মিক নেমে আসে নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন! শুরু হয় ধর্মান্তরিত স্বামী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র তালবাহানা। প্রথমে যৌতুক দাবি, না পেয়ে স্ত্রীকে না জানিয়ে কর্মস্থল থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখে মানসিক ক্ষত সৃষ্টি করে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

এক পর্যায়ে মর্জিনা বেগম গত ২৩ আগস্ট ২০২০ তারিখে স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭, চট্টগ্রামে মামলা করেন। এ মামলায় রবিন ভট্টাচার্য (মোহাম্মদ আবদুল্লাহ) ৩৬ দিন হাজতবাস করেন। এ সময় স্ত্রী, স্বামীকে দেখতে হাজতে গেলে তাকে ফুসলিয়ে আপসের প্রস্তাব দেয় এবং ১৬ মার্চ ২১ আদালতে আপসনামায় জামিনে বেরিয়ে আসেন রবিন ভট্টাচার্য (মোহাম্মদ আবদুল্লাহ)।

কিছুদিন পরিবারে থাকার পর, হঠাৎ তাঁর কর্মস্থল ৩৩ ব্যাটালিয়ন আনসারে ফিরে এসে মামলার জামিনে আপসনামার শর্তানুযায়ী স্ত্রী, সন্তানকে কর্মস্থল রেখে দেখবালের প্রতিশ্রুতিতে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে মানিকছড়িস্থ ব্যাটালিয়ন আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন ভাড়া বাসায় উঠেন। এরপর রবিন ভট্টাচার্য স্ত্রী, সন্তানকে বাসায় রেখে কর্মস্থলে গেলে দু’মাসেও বাসার খবর, কিংবা খাদ্য যোগান দেয় না। ফলে শিশু সন্তানকে নিয়ে মর্জিনা বেগম খেয়ে না খেয়ে বছর পার করছে। স্ত্রী তাঁর স্বামীকে শিশু তাঁর বাবাকে কাছে পেতে বা দু’মুটো খাবার সন্ধানে প্রতিবেশীর দ্বারস্থ হতে হয়।

একাধিকবার স্বামীর সাথে দেখা করতে স্ত্রী মর্জিনা বেগম কন্যা শিশুকে নিয়ে ক্যাম্পে গিয়ে রবিন ভট্টাচার্যের সহযোদ্ধা আনসার সদস্য কর্তৃক নাজেহাল ও অপমানির শিকার হয়েছেন। কিন্তু স্বামীর দেখা পাননি।

স্বামী কর্তৃক খাদ্যের কষ্ট ও নানাভাবে হয়রানির শিকার মর্জিনা বেগম গত ২১ অক্টোবর ২০২১ তারিখে আনসার ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেও কোন সদোত্তর কিংবা সুরাহা পায়নি।

সম্প্রতি মানিকছড়ি প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে মর্জিনা বেগম তাঁর বিবাহিত জীবনে স্বামীর প্রতারণা ও নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি রবিন ভট্টাচার্যের সাথে তাঁর সম্পর্ক ও পরবর্তী করুণ পরিনতির কথা বলে। শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা তুলে ধরে বলেন, ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের আসকার দীঘির পাড় টিউশনিতে আসা-যাওয়ার সময় রবিনের সাথে পরিচয়ে প্রেম হয়।

এক পর্যায়ে মর্জিনা জানতে পারেন রবিন সনাতনী। তারপর মর্জিনা প্রেম প্রত্যাখান করতে চাইলে রবিন ধর্মান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ৪ এপ্রিল-২০১৮ তারিখে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চট্টগ্রামে হলফনামা মূলে রবিন ভট্টাচার্য ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। নাম রাখা হয় মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। এর পর তাঁদের সংসারে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। যতই কন্যা সন্তান বড় হচ্ছে, ততই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ দূরে সরে যেতে নানা ছলচাতুরী করে নিজেকে আত্মগোপন রাখার চেষ্টা করছেন। আমি এখন শিশু কন্যাকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। মামলা করার পর আপোস হওয়া আমার কাল হয়েছে। আমি আবারও আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হব।

এ বিষয়ে জানতে ৩৩ আনসার ব্যাটলিয়নের পরিচালক মো. নাজমুল হক নূরনবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন মর্মে বলেন, রবিন ভট্টাচার্য ধর্মান্তরিত হয়ে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নাম ধারণ করে মর্জিনাকে বিয়ে করার পর তাঁদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি ও স্ত্রীকে নির্যাতন বিষয়ে আদালতে মামলা হয়। পরে উভয়ের সম্মতিতে মামলা প্রত্যাহার হয়। এখন আবারও ঝগড়াবিবাদে তাঁরা লিপ্ত। যেহেতু বিষয়টি আগে আদালতে গড়িয়েছে। তাই এই পর্যায়ে আমাদের অফিসিয়াল কিছু করার নেই। তবে রবিন ভট্টাচার্য আমাকে জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মর্জিনাকে সে (রবিন) তালাক নামা পাঠিয়েছেন।

রবিন ভট্টাচার্য ওরফে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ক্যাম্পে কর্মরত থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি। তবে একাধিকবার তাঁর মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।

Exit mobile version