parbattanews

মানিকছড়িতে মাদ্রাসা সুপারের প্রতারণার শিকার ১৬ পরীক্ষার্থী

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার গাড়ীটানা নেছারিয়া ইসলামি দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাহমুদুল হাসানের প্রতারণা শিকার হয়েছেন ১৬ জন দাখিল পরীক্ষার্থী! পরীক্ষার দিন সকালে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে নিজের বাসায় বসিয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও ভূয়া এডমিড কার্ড ধরিয়ে অটোপাস করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে তিনি লাপাত্তা! ঘটনা জানাজানির পর অভিভাবক মহলে চলছে তোলপাড়!

দাখিল পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও কমিটির বক্তব্যে জানা গেছে, উপজেলার পশ্চাৎপদ জনপদ গাড়ীটানা নেছারিয়া ইসলামি দাখিল মাদরাসাটি ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও অভিজ্ঞ ও দায়িত্বশীল সুপার না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। এই যাবৎকালে ৪/৫জন সুপার দায়িত্ব নিলেও কেউই আন্তরিকভাবে কাজ না করে লুটেপুটে খেয়ে দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে অথবা পালিয়ে গেছে!

সবশেষ ২০১৮ সালে মাও. মো. মাহমুদুল হাসান(আলিম) নামের এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে নিয়োগ দেন সাবেক কমিটি। পরে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য এফডিআর’সহ বিভিন্ন কাজে কমিটির সদস্যরা তাকে টাকা-পয়সা দিয়ে অফিসিয়ালী প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির দায়িত্ব দেন। কিন্তু ওই প্রতারক সুপার গত ৪ বছরে প্রতিষ্ঠানের কোন অগ্রগতি না করে বরং চলতি ২০২০ সালের ১৬ জন দাখিল পরীক্ষার্থীর সাথেও প্রতারণা করতে দ্বিধা করেনি!

প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ১৬ জন শিক্ষার্থীর( ছাত্র-৮,ছাত্রী-৮) রেজিস্ট্রেশন ফি, ফরম ফিলাপ ফি ও কেন্দ্র ফি সবকিছু নিয়ে পরীক্ষার জাঁকজমকভাবে বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে সুপার! পরীক্ষার দিন ১৪ নভেম্বর সকালে সকল শিক্ষার্থীদের গাড়ীযোগে উপজেলা সদরস্থ দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রে আসেন সুপার মাও. মো. মাহমুদুল হাসান। এর পর শিক্ষার্থীদের তাঁর বাসায় বসিয়ে রেখে পরীক্ষা দিতে হবে না! তোমরা অটোপাস হয়ে যাবে! বলে বাড়ি পাঠিয়ে দেন শিক্ষার্থীদের। পরে শুক্রবার পরীক্ষার্থীরা জানতে পারেন, তাদেরকে দেওয়া এডমিট কার্ড ভূয়া এবং তাদের রেজিস্ট্রেশনও ভূয়া ! এঘটনা জানাজানি হলে গা ঢাকা দেন অভিযুক্ত সুপার মাও. মো. মাহমুদুল হাসান!

পরীক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম রুমান, জবনিকা জেরিন, আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, স্যার আমাদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে! তিনি আসলে একজন প্রতারক। তিনি আমাদের নিকট থেকে ফরম ফিলাপ ও কেন্দ্র ফি বাবদ গড়ে ১৫০০ টাকা নিয়েছে। আমাদেরকে কোন দিন বুঝতেও দেয়নি, যে আমাদের রেজিস্ট্রেশন ও এডমিট ভূয়া! তিনি যথারীতি পরীক্ষার দিন(১৪ নভেম্বর)সকালে গাড়ীযোগে আমাদেরকে নিয়ে কেন্দ্রের কাছে ওনার বাড়িতে নিয়ে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে বলেন, তোমাদের এ বছর পরীক্ষা দিতে হবে না, তোমরা অটোপাস হয়ে যাবে, তবে বিষয়টি এখন জানাজানি করলে সমস্যা হবে। তোমরা বাড়িতে চলে যাও। এরপর থেকে আর স্যারকে ফোনেও পাচ্ছি না।

অভিভাবক মো. তৌহিদুল আলম বলেন, মাদরাসার একজন সুপার যদি এমন চরিত্রহীন হয়! তাহলে আমরা সন্তানদের কোথায় নিরাপদ ভাববো! ফরম পূরণ না হলে আগামী বছর পরীক্ষা দিতে পারবে, আর যদি রেজিস্ট্রেশনও ভূয়া হয়, তাহলে এই ১৬ জন শিক্ষার্থীর ভবিষৎ কী হবে? আমরা এই প্রতারক সুপারের বিচার চাই।

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাহী সদস্য মো. জসিম উদ্দিন ঘটনাটিকে অমানবিক, দুঃখজনক ও নেক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পর পরিচালনা কমিটি বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অচিরেই ভারপ্রাপ্ত সুপারের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করবো। ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি( মোবাইল বন্ধ)।

মানিকছড়ি দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব মাও. মো. বেলাল উদ্দীন এ প্রসঙ্গে বলেন, এ বছর গাড়ীটানা নেছারিয়া ইসলামি দাখিল মাদরাসার ৬ জন অনিয়মিত শিক্ষার্থী এ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। এছাড়া আর কারো নামে কোন এডমিট আমার কেন্দ্রে আসেনি।

Exit mobile version