parbattanews

মানিকছড়িতে রাতের আঁধারে সংঘবদ্ধ চক্র কেটে নিচ্ছে সরকারি গাছ

মানিকছড়ি উপজেলায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বন উজারে সংঘবদ্ধ চক্রের দুর্বৃত্তায়ন মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে! গত কয়েক বছরে উপজেলা ও এর পাশ্ববর্তী বনাঞ্চল থেকে কয়েক কোটি টাকার সেগুন, আকাশমনি, কড়ই, কাঁঠালসহ সৃজিত গাছ রাতের আঁধারে প্রতিনিয়ত কেটে নিলেও এখনো ধরাছোঁয়ার অন্তরালে থেকে চালিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তায়ণ! শুক্রবার ভোরেও সাপমারা ইউনিয়ন সড়কে মূল্যবান কয়েকটি গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দাবি উঠেছে বন উজার চক্র সন্ধানের।

গাড়ীটানা বনবিভাগ ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি উপজেলার কোথাও বনবিভাগের নিজস্ব বন সম্পদ বা রিজার্ভ ফরেস্ট নেই। তবে পাশ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার বিশাল সম্পদ (ধুরং বিট) রয়েছে। উপজেলার বেশির ভাগ বনভূমিতে ব্যক্তি মালিকানায় সৃজিত ও প্রাকৃতিক গাছ-গাছালিতে ভরপুর। মানুষজন পারিবারিক প্রয়োজন ও বিপদে- আপদে গাছ কেটে বিক্রি করে সময়ে- অসময়ে। তবে বেশির ভাগই সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে চোরাই পথে কাঠ পাচারে অভ্যস্ত। ২০% ক্ষেত্রে কয়েকজন ব্যবসায়ী জোত পারমিটে কাঠ কেটে সমতলে পাচার করে।

সম্প্রতিকালে একটি সংঘবদ্ধ চক্র উপজেলার ও এর বাইরে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সবুজ অরণ্য ধ্বংসে মেতে উঠেছে! ফলে এখন কারো বাড়ি বা বাগানে সৃজিত গাছেরও নিরাপত্তা নেই! বিশেষ করে তিনটহরী দক্ষিণ,পশ্চিম থেকে শুরু করে গাড়িটানা, গরমছড়ি, সাপমারা, যোগ্যাছোলা, কালাপানির সর্বত্র কাঠ চোরা কারবারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে রাতের গভীরে করাত দিয়ে মূহুর্তের মধ্যে বড় বড় গাছ সাবার করে নেয়।

শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) ভোর আনুমানিক ৪টায় গাড়ীটানা-যোগ্যাছোলা সড়কের রোয়াজা পাড়া মন্দির ও মূল সড়কের পাশের ৩টি বড় আকাশমণি গাছ এক দেড় ঘণ্টায় কেটে, ছাটাই করে ট্রাক তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা! গাছ কাটার শব্দে রোয়াজা পাড়ার দুইটি পরিবারের লোকজনের ঘুম ভেঙে গেলেও তাঁদেরকে শব্দ না করার ভয় দেখায় ওই চক্র! ফলে অনায়াসে সরকারি ও মন্দিরের গাছ হজম।

সকালে খবর পেয়ে সরজমিনে ছুঁটে যায় যোগ্যাছোলা ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. ইদ্রিস ইসলাম রাজু। পরে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগকে অবহিত করেন এবং বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লাইফ দেন। এর পর তোলপাড় শুরু হলেও সরকারি সম্পদ বেহাত বা রক্ষায় দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে কেউ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

ইউপি সদস্য মো. ইদ্রিস ইসলাম রাজু এ প্রসঙ্গে বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই জনপদে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি বন সম্পদ অবাধে কেটে নিচ্ছে! এতে কোটি কোটি টাকার বন সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে! কিছুদিন আগেও সাপমারা এলাকায় একজন অবসরপ্রাপ্ত একজন শিক্ষকের সৃজিত স্বপ্নের বাগানের সেগুন, গামারী গাছ কেটে নিয়েছে এই চক্রটি! আজ পর্যন্ত প্রশাসন বা বন বিভাগ ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।

গাড়ীটানা বন বিভাগের বন কর্মকর্তা উহ্লামং চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই উপজেলায় বন বিভাগের কোন রির্জাভ বন নেই। এছাড়া বন বিভাগে জনবল সংকটে উপজেলার ফাঁড়ি সড়কে আমরা নজরদারী বাড়াতে পারি না। ফলে দুর্বৃত্তরা সময়ে, অসময়ে বন সম্পদের বিনাশ করেন। গত রাতে সড়ক ও মন্দিরের কয়েকটি আকাশমণি গাছে দুর্বৃত্ত কর্তৃক কাটার খবরে সরজমিনে লোক পাঠিয়ে সত্যতা পেয়েছি। কিন্তু এটি সড়ক কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এসে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। এখানে বন বিভাগের কিছু করার সুযোগ নেই।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহনূর আলম বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে সরজমিনে পুলিশ পাঠিয়ে সত্যতা পেয়েছি। কেউ লিখিত অভিযোগ না করায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

Exit mobile version