মানিকছড়ির সফল উদ্যোক্তা দুই নারীর লড়াইয়ের গল্প

fec-image

মনে সাহস ও ইচ্ছা থাকলে জীবনে সফলতা অর্জন করা কঠিন কিছুই না। তাই প্রবাদ বাক্যে বলা হয়েছে ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’। আসলেও তাই। সমাজে নারীরা সাধারণ ঘরে কাজকর্ম ও সৌন্দর্য বদ্ধনে ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু যাদের সংসারে আয়-রোজগার করার মতো পুরুষ নেই। যে সমস্ত সকল নারী আজও সমাজে অবহেলিত। যদিও সরকার তৃণমূল থেকেই নারী উন্নয়নে কাজ করছে। এর পরও সমাজে অনেক নারী নিজ পায়ে দাঁড়াতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অদম্য মনোবল ও ইচ্ছা শক্তি নিয়ে পুরুষের ন্যায় কঠোর পরিশ্রম করছে সকলের দেখা-অদেখায়! এমনই দুই অদম্য নারী সংসারের একমাত্র আয়কর্তা! মানিকছড়ি উপজেলার তিনটহরী ও বাটনাতলীর এই দুই অদম্য নারী মনোবল ও ইচ্ছা শক্তি নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায় করে সন্তানাদির পড়ালেখা ও সংসার চালাচ্ছেন! আর ওদের এই মনোবল ও ইচ্ছা শক্তিতে সাহস জুগিয়েছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস।

কারিতাস সূত্র ও দুই অদম্য নারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার তিনটহরী ইউপি’র ভূতাইছড়ি পুরাতন পাড়া এলাকার স্বামী পরিত্যক্তা অদম্য মনোবল ও ইচ্ছা শক্তি সম্পন্ন নারী শামিমা আক্তার (৩৫)। তার পিতৃভূমি রাউজান। ১৯৯৯ সালে মো. আজম নামক এক ব্যক্তির সাথে পিতা-মাতাহীন এই নারীর পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। ২০০২ সালে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় আরজুমান আক্তার। ২০০৫ সালে স্বামী মো. আজম স্ত্রী শামিমা আক্তার ও শিশু কন্যা আরজুমান আক্তার রেখে লম্পট!

পরে বাধ্য হয়ে বড় ভাই দিল মোহাম্মদ এর ঘরে আশ্রয় নিতে হয় শামিমাকে! একমাত্র কন্যা সন্তানের ভবিষৎ চিন্তা করে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর দুঃস্বপ্ন নিয়ে এগুতে থাকেন শামিমা! পরের জমিতে কাজকর্ম করে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করান। সমাজের ভালো মনের ব্যক্তিদের সহযোগিতায় মেয়ে আরজুমান স্কুল জীবন শেষ করার আগেই ২০১৭ সালে শামিমার বড় ভাইয়ের অকাল মৃত্যু ঘটে!

এতে শামিমার বহমান জীবনযুদ্ধে নেমে আসে আরেক যন্ত্রণা! ভাইয়ের স্ত্রী ও ৩ মেয়েসহ ৫ জনের সকল দায়-দায়িত্ব এসে পড়ে শামিমার ওপর! এ যেন ‘মরার ওপর খাড়ার খা’। একমাত্র এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে আরজুমান ও ভাইয়ের ৩ পিতৃহীন শিশু কন্যার ভারণ-পোষণের চিন্তার শামিমা যখন নাভিশ্বাস অবস্থা! ঠিক সে সময়ে উপজেলার বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বিধবা ,গরীব ও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির দূরাবস্থা দেখে ২০১৮ খ্রি: সালে জরিপের মাধ্যমে কারিতাসের মহিলা কর্ণারে যুক্ত করায় বর্তমান সে স্বাবলম্বী! কারিতাস ধাপে ধাপে প্রায় ২০ হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে ব্যবসায় হাল ধরিয়ে দেন। এতেই অনেকটা পাল্টে যায় শামিমার সংসার। তার একমাত্র মেয়ে আরজুমান আক্তার এখন কলেজ পড়ুয়া কিশোরী।

অপর দিকে উপজেলার ২ নং বাটনাতলী জমির আগা এলাকার আরেক অদম্য সাহসী নারী নাউক্রা মারমা(৫০)।  ২০০৫ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর একমাত্র স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে অভিভাবকহীন নাউক্রা মারমার দূর্বিসহ জীবন শুরু হয়! একমাত্র শিশু কন্যাকে নিয়ে বেছে থাকার স্বপ্নে বনে-জঙ্গলে, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সামান্য শাক-সবজি চাষ ও পরের জমিতে কাজ করে ঘরে ‘নুন আনতে পানতা ফুরায়’ অবস্থায় শিশু কন্যার উজ্জ্বল ভবিষৎ চিন্তা করে মেয়েটিকে স্কুল ভর্তি করান। অদস্য সাহসী নারীর কর্মদক্ষতা ও মনোবল দেখে ২০১৮ সাল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বিধবা ,গরীব ও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম গৃহিণীকে মহিলা কর্ণারে যুক্ত করায় বর্তমান সে স্বাবলম্বী! পাল্টে যেতে থাকে নাউক্রার জীবনযাত্রা! কলেজ পড়ুয়া কিশোরীকে নিয়ে এখন নাউক্রা মারমা কারিতাসের ক্ষুদ্র অর্থায়নে বাটনাতলী বাজারে সপ্তাহে ১ দিন এবং জমির আগায় নিয়মিত শাক-সবজি ও চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে অনায়াসে!

এভাবেই উপজেলার দুই অসহায় ও পিতৃ-মাতৃহীন পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার সেবায় নাম রেখেছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারিতাসের মাঠ কর্মকর্তা মো. সোলেমান এ প্রসঙ্গে বলেন, কারিতাস এর এগ্রো ইকোলজি প্রকল্পে ৭টি কম্পোনেন্ট নিয়ে এ অঞ্চলে কাজ করছি আমরা। এর মধ্যে সমাজে দরিদ্র, অসহায় ও কর্মহীন মহিলাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ‘মহিলা কর্ণার’ নামে একটি কম্পোনেন্ট রয়েছে। যার অধীনে ইতোমধ্যে আমরা উপজেলার দু’জন অসহায় নারীকে আয়বর্ধক কর্মসূচি বা মহিলা কর্নার দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছি। এদের অদম্য মনোবল ও ইচ্ছাশক্তি দেখে সমাজের এ ধরণের আরো অনেক নারী নিজ পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। আমরাও সরকারের পাশাপাশি আমাদের কর্ম এলাকায় পিছিয়ে পড়া নারী গোষ্ঠির ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন