মানিকছড়ি প্রাণী সম্পদ অফিসে চিকিৎসক ও কৃত্রিম প্রজনন কর্মী সংকট, হাতুরে চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় গরুর মৃত্যু

fec-image

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়িতে ছোট-বড় অর্ধশত গো-খামার রয়েছে। এছাড়া এখানকার প্রান্তিক পর্যায়ে ঘরে ঘরে দু’চারটি গাভী, ষাঁড় বা বদল লালন-পালন করা হয়। এসব গবাদি পশু রোগ-বালাই চিকিৎসায় সরকারি চিকিৎসক অপ্রতুল, কৃত্রিম প্রজনন কর্মী পদটিও শুণ্য! ফলে ছোট-বড় গো-খামারী বা কৃষকরা পশু রোগাক্রান্ত হলে কূল-কিনারা না পেয়ে হাতুরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় খামারী। এতে অকালে ও অপচিকিৎসায় পুঁজি হারাতে হয় তাঁদের। গত ২ অক্টোবর হাতুরে চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় ক্ষুদ্র খামারী জমিলা বেগমের দুইটি গরুর অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। উপজেলার প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে চিকিৎসক সংকটে খামারে এমন সর্বনাশ! বিষয়টির প্রতিকার ও চিকিৎসক পদায়ণের উঠেছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষিনির্ভর উপজেলার আশি ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। ফলে সকলের গৃহে কম-বেশি গৃহপালিত পশু হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল থাকা স্বাভাবিক। এছাড়া বিগত এক দশকে এখানে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত গো-খামার। আধুনিকতার এই যুগে গবাদি পশু লালন-পালনে সেবা, যত্ন ও চিকিৎসায় খামারীরা খুব সতর্ক থাকতে হয়। কিন্তু উপজেলার প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় খামারীদের বেগ পেতে হচ্ছে! প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে মোট জনবল ১০টি পদের বিপরীতে এখানে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন! এর মধ্যে কর্মকর্তা-১, ভেটেনারী সার্জন-১ ও সহকারী-১জন। ৩ জনের মধ্যে ২ জনকে পুরো উপজেলা দৌড়াতে হয়! এই দুই চিকিৎসক দিয়ে অর্ধশত গো-খামারী চিকিৎসার আশা-প্রত্যাশা আকাঁশ-কুসুম কল্পনা ছাড়া কিছুই না।

ফলে এলাকায় অদক্ষ হাতুরে চিকিৎসকের পদচারণা বেড়েছে অনেকগুন! গত ২ অক্টোবর ডাইনছড়ির ক্ষুদ্র খামারী জমিলা বেগমের খামারে মাঝারী দুইটি ষাঁড় অসুস্থ হয়ে পড়ে। নিরুপায় হয়ে জমিলা হাতুরে চিকিৎসক আবদুল মমিনের শরণাপন্ন হয়। হাতুরে চিকিৎসক গরুর প্রকৃত রোগ না বুঝে অনুস্থ গরুকে লাল রংয়ের একে একে ৭টি ইনজেকশন পুঁশ করেন! ইনজেকশন পুঁশ করার ১০ মিনিট পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে একটি ষাঁড়ের মৃত্যু হয়! ৫ঘণ্টা পর রাত ২টার দিকে ঠিক একই রকম অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অপর গরুটিও মৃত্যুর কবলে শামিল হন! সর্বনাশ হয় জমিলার স্বপ্ন! এর আগে আল- আশরাফ ডেইরী এন্ড এগ্রো ফার্মেও অপচিকিৎসায় একটি গরু মারা গিয়েছিল!

ফলে পুঁজি হারানো জমিলা হাতুরে চিকিৎসকের বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে ৩ অক্টোবর বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট বিচার দাবি করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না মাহমুদ এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সূচয়ন চৌধুরী ও বাটনাতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম মোহনকে নির্দেশ দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি সরজমিনে গিয়ে ঘটনা সত্যতা পান এবং সামাজিক সালিশে ওই হাতুরে চিকিৎসক মো. আবদুল মমিন এর অপচিকিৎসায় গরুর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম মোহন ও ক্ষতিগ্রস্ত খামারী জমিলা বেগম স্বীকার করেছেন।

এছাড়া ওই হাতুরে চিকিৎসক এখন থেকে আর পশু চিকিৎসা করতে পারবেনা বলে জনপ্রতিনিধি বিষয়টি তাকে জানিয়ে দিয়েছেন। সরকারি পশু চিকিৎসালয়ে চিকিৎসক না থাকায় এভাবে প্রতিনিয়ত হাতুরে চিকিৎসকদের অপচিকিৎসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এখানকার গো-খামারীরা! এ বিষয়ে নামার তিনটহরী ক্ষুদ্র খামারী তাছলিমা খাতুন আজকের পত্রিকাকে অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসকের অভাবে গো-খামারে লাভের মূখ দেখছি না। একজন সরকারী ডাক্তারের স্বাক্ষাত/সান্নিধ্য পাওয়া আমাদের জন্য স্বপ্ন! দুই জন চিকিৎসকের একজন কর্মকর্তা, অন্যজন উপজেলার কোন প্রান্ত থেকে কোন প্রান্তে কখন যাবেন! কাকে সেবা দিবেন? এই যখন অবস্থা তাহলে ডেইরী খামার এখন আমাদের গলার কাটা! উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সূচয়ন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, অপচিকিৎসায় গরুর মৃত্যুর ঘটনার সতত্যা পাওয়া গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান সামাজিক সালিশে বিষয়টির একটা সুরাহা করেছেন। তিনি প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে জনবল সংকটের বিষয়টি ম্বীকার করে আরো বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। আমরা সাধ্য অনুযায়ী খামারীদের পাশে থাকার চেষ্টা করি।

এই প্রসঙ্গে উপজেলা, চট্টগ্রাম বিভাগ ও ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডেইরীতে সরকারি সহযোগিতা ও সেবায় আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে ! সারাদেশে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে চিকিৎসক ও কৃত্রিম প্রজনন কর্মী সংকট ! ফলে পার্বত্য এই জনপদের খামারীরা কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমে পরনির্ভশীল হতে হয়। তাই জরুরী ভিত্তিতে শুন্য পদে চিকিৎসক ও কৃত্রিম প্রজনন কর্মী নিয়োগ দিয়ে ডেইরী খাতে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। ক্যাপশন – মানিকছড়ির তুলাবিল আবদুল কাদের ডেইরী ফার্মে পালিত দেশী গরু।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন