বিল উত্তোলনে উৎকোচ বাধ্যতামূলক করায় ভোগান্তি চরমে

মানিকছড়ি হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা দু’মাস কর্মস্থলে নেই!

fec-image

তৃণমূলে সরকারি অফিস-আদালতে জনসেবায় উপজেলা হিসাব রক্ষক অফিস জনগুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। মাসের বেশির ভাগ সময়ই ব্যতি-ব্যস্ত থাকতে হয় ওই অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ভাতা, পেনশন, উৎসবভাতাসহ সরকারি সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিল উত্তোলনে হিসাব রক্ষক অফিসে জনসমাগম নিত্যচিত্র।

মানিকছড়ি উপজেলা হিসাব রক্ষক অফিসে ঘুষ বাণিজ্যের খবর নতুন কিছু নয়! তবে নতুন হলো এখানকার কর্মকর্তা ক্ষমতার দাপট! তিনি কোন প্রকার ছুঁটি-ছাটা ছাড়াই টানা গত দু’মাস অফিসে না এসে শহরে লকডাউনে থেকে দিব্যি রাজকীয় হালে অফিস থেকে ফাইল শহরে নিয়ে সই-স্বাক্ষর করছেন।

সরকারি চাকুরীর বিধি-নিষেধ, ভয়-ভীতির তোয়াক্কা না করেই জনদূর্ভোগ বাড়িয়ে হাল-হকিকতে চাকুরী করছেন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দীন!

জনপ্রশাসনের জনগুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মধ্যে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস একটি দপ্তর। এই অফিসে সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তদের আসা-যাওয়া বাধ্যতামূলক। চাকুরীর শুরু থেকে শেষ এবং অবসর কালীণ সময়েও হিসাব রক্ষণ অফিসে লেফরাইট করতে হয় সরকারি চাকুরীজীবীদের।

পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ঠিকাদারদের কাজের বিল উত্তোলনে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ভাতা, পেনশন সুবিধা, উৎসব ভাতা, টাইম স্কেল, শান্তি বিনোদন বিল পেতে হিসাব রক্ষণ অফিসের দ্বারস্থ হওয়ার বিকল্প নেই।

এই সুযোগে মানিকছড়ি হিসাব রক্ষণ অফিসটি দীর্ঘদিন ধরে নিরব ঘুষ বাণিজ্যে খ্যাতি অর্জণ করেছে! গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার দেশব্যাপি বৈশ্বিক মহামারী ‘করোনা’র প্রতিরোধে লকডাউন ঘোষণা করলেও সরকারি অফিসে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেন। যার ফলে উপজেলা সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা কম-বেশি কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জনপ্রতিনিধিদের সরকারি কাজে সহায়তা অব্যাহত রাখলেও একমাত্র ব্যতিক্রম এখানকার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দীন।

বৃহস্পতিবার(২৮ মে)পর্যন্ত একদিনও তিনি অফিসে আসেনি! লকডাউনের অজুহাতে চট্টগ্রাম শহরে বাসায় অবস্থান নিশ্চিত করে অফিস সহকারীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে প্রাইভেটকার যোগে ফাইলপত্র আনা-নেওয়া করিয়ে বিভিন্ন বিলে সই-স্বাক্ষর করছেন ওই দাপটি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দীন!

শান্তি বিনোদন বিলে উপজেলার প্রায় অর্ধশত প্রাথমিক শিক্ষক এবার জনপ্রতি ৩‘শ টাকা হারে উৎকোচ দিয়ে বিল অনুমোদন করিয়ে আনতে হয়েছে। এছাড়া সরকারি উন্নয়ন কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা বিল উত্তোলন করতে গিয়ে নির্ধারিত কমিশনের পাশাপাশি ফাইলপত্র শহরে আনা-নেওয়ায় গুনতে হয়েছে প্রাইভেটকার ভাড়া!

গত ২ মাসে অন্তত ১৫বার প্রাইভেট কার শহরে পাঠিয়ে বিলে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার সই-স্বাক্ষর নিতে হয়েছে উপজেলা ৫/৭ জন ঠিকাদারের।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশিষ্ট ঠিকাদার মো. রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ হিসাব রক্ষণ অফিসে এভাবে জনদূর্ভোগ পোহাতে হলে সরকারের জনসেবা প্রশ্নবৃদ্ধ হয়ে উঠে! প্রতিনিয়ত কাজের বিল অনুমোদন করতে শহরে গাড়ি পাঠিয়ে দান-দক্ষিণা(কমিশন) দিয়ে বিল উত্তোলন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা দুর্নীতির বেড়াজাল থেকে বেরুতে পারলাম না। পদে পদে একাউন্স অফিসে হয়রানী মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে!

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও তিনটহরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতিউল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, হিসাব রক্ষণ অফিস দুর্নীতির আখড়া! সরকারি চাকুরীজীবী কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক, ঠিকাদার কেউই এখান থেকে দফা-রফা ছাড়া বিল উত্তোলনে নজির নেই। সমস্যা হলো ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন না। আমি অনেক সময় শিক্ষকদের বিল উত্তোলনে ঘুষ চাওয়ায় মোবাইলে কর্মকর্তার সাথে রাগান্বিত হয়ে অনেক শিক্ষককে বিপদ থেকে বাঁচিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি শহরে লকডাউনে আছি। এছাড়া আমি জটিল রোগে ভুগছি। বিষয়টি আমার উর্ধ্বতনরা অবগত। তাহলে ছুঁটি নিচ্ছেন না কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিন বলেন, ছুঁটি নিলে আয়-রোজগার(টাকা-পয়সা) পাবো কই, চলবো কিভাবে!

লকডাউনে জনগুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মস্থলে না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ বলেন, ‘করোনা’র লকডাউনে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। আমি এ বিষয়ে সকল অফিসারদেরকে সর্তক করেছি। কেউ কর্মস্থলে না থাকার কারণে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে কর্মকর্তার অনুপস্থিতির বিষয়ে উর্ধ্বতনকে জানানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, জনপ্রশাসন, মানিকছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন