মাহফুজুর রহমান : মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান, নাকি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দালাল? 

fec-image

গতকাল চট্টগ্রামের চেরাগী মোড়ে বান্দরবানের ম্রো সম্প্রদায়ের কতিপয় ব্যক্তি ও তাদের পক্ষে চিহ্নিত কিছু দালালের দাবীকৃত তথাকথিত সম্পত্তির উপর পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের প্রতিবাদে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আপনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।‘ এটি শোনার পরে আমি যতটা না ক্ষুব্ধ হয়েছি, তার থেকে বেশি হতাশ হয়েছি এই কারণে যে আপনি মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানেন না।

আসলে আপনার মত জ্ঞানপাপীদের কারণেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিভিন্ন সময় বিকৃত হয়েছে এবং বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে না। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান হিসেবে আমার তো মনে হচ্ছে, আপনি মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভূমিকা সম্পর্কে হয় কিছুই জানেন না অথবা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নিকট থেকে টাকা-পয়সা খেয়ে অসত্য বক্তব্য প্রদান করছেন। তাই সকলের জ্ঞাতার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের সময় কি ভূমিকা পালন করেছিলো সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরার জন্য কিছু বিষয়ের অবতারণা করছি:

প্রথমত: আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন সার্কেল চিফ বা রাজার মধ্যে দুইজন সার্কেল চিফ তথা বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটির সার্কেল চিফ সরাসরি আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করেন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ নেন। এর মধ্যে রাঙ্গামাটির চাকমা সার্কেল চিফ ও শীর্ষ রাজাকার ত্রিদিব রায়ের ভূমিকা সর্বজনবিদিত, যিনি আজন্ম এ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে গেছেন এবং তার সুযোগ্য পুত্র জনাব দেবাশীষ রায়ও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছেন। একইভাবে, বান্দরবানের তৎকালীন সার্কেল চিফ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করেন। প্রথাগতভাবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী তাদের সার্কেল চিফদের দেবতা জ্ঞান করে থাকে।

কাজেই এটা সহজেই অনুমেয় যে, বেশিরভাগ পাহাড়ি জনগোষ্ঠী রাজার আদেশ শিরোধার্য করে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে হয় নিষ্ক্রিয় ছিল অথবা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। অথচ আপনি মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান হিসেবে মূর্খের মতো বক্তব্য রাখলেন যা সত্যিই হাস্যকর। তবে, মং সার্কেল চিফসহ কিছু সংখ্যক উপজাতীয় ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ অথবা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলন। আমরা তাদের এই অবদানকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি।

দ্বিতীয়তঃ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও এসকল ব্যক্তিবর্গের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুণর্গঠনে যখন সকল সম্প্রদায় এবং দল-মত-নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার কথা ছিল, ঠিক সেই সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগোষ্ঠী দেশের পিঠে আরেকবার ছুরিকাঘাত করে স্বাধীকারের নামে একটি অযৌক্তিক সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে তুলে। এর ফলে হাজার হাজার নিরাপরাধ পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠীকে জীবন দিতে হয়েছে এবং পাহাড়ের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

অবশেষে, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শীতা ও যুগান্তকারী পদক্ষেপে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়। শান্তিচুক্তির অন্যতম শর্ত হিসেবে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা তথা শান্তি বাহিনীর সকল অস্ত্র ও সদস্যদের আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও তারা শুধুমাত্র লোক দেখানো কিছু অস্ত্র জমা দেয় এবং গুটিকয়েক সদস্যের আত্মসমর্পণের অভিনয়ের মাধ্যমে দেশের জনগণের বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করে। বর্তমানে এই গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন ‘জুম্ম ল্যান্ড’ তৈরির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

আমার মনে হয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ষড়যন্ত্রের অংশ আপনিও এবং আপনার মত কিছু অর্থলোভী বিবেকহীন তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, যাদের কাছে দেশের থেকে নিজের স্বার্থই বড়। শান্তি চুক্তি পরবর্তী সময়ে সরকার যখন এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ইত্যাদি স্থাপনসহ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করে যাচ্ছে, ঠিক তখনই আপনাদের মত কিছু মানুষ ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার মানসে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ঢালাওভাবে এর বিরোধিতা করছেন।

তৃতীয়তঃ শান্তিচুক্তি পরবর্তী সময়েও সার্কেল চিফ এবং পাহাড়ি নেতৃবৃন্দকে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে কোন ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। আর শান্তি চুক্তির ফসল হিসেবে রিজিওনাল কাউন্সিল তৈরি হয়েছে যার চেয়ারম্যান হিসেবে জনাব সন্তু লারমা গত ২৩ বছর ধরে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা নিয়ে আরামে বসবাস করছেন। অথচ তিনি বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কোনো জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন না। এমনকি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কোন অনুষ্ঠানে যোগদান করেননি।

তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে সব ধরনের হত্যা মিশনে নানাভাবে নেতৃত্ব দান করেছেন যার যথাযথ প্রমাণ দেশবাসীর কাছে আছে। কখনো কি জিজ্ঞাসা করেছেন, এ সকল উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কি ভূমিকা পালন করছে? এমনকি, চলমান করোনা সংকটকালেও এসকল উপজাতি নেতৃবৃন্দকে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

এতকিছুর পরও আপনি বলেছেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এককালীন বড় অংকের টাকা অথবা নির্দিষ্ট অংকের মাসোহারার বিনিময়ে আপনার মত কিছু দালাল দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক আখন্ডতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আপনার এই বক্তব্য থেকে সহজে প্রমাণিত হয় যে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যানের পদকে অলংকৃত করার মত কোন যোগ্যতাই আপনার নাই এবং আপনি উপজাতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দালাল ছাড়া আর কিছুই না।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন