মাটিরাঙ্গা কৃষি কর্মকর্তার অনিয়ম, কৃষি উপকরণ বিতরণে চরম সেচ্ছাচারিতা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের লাগামহীম দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্নসাতের ঘটনা ঘটেছে। কৃষি কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান ও তার একান্ত সহযোগী কৃষি উপসহকারী আমির হোসেনের সেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ স্বয়ং অফিস সহকর্মীরাও।
দীর্ঘ দিনব্যাপী পার্বত্য নিউজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সিমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্নসাতের বাস্তব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের এক ইঞ্চি জায়গা খালি রাখা যাবেনা। সে লক্ষে কৃষককে আর্থিক সহায়তা, সার বীজ,ও কিটনাশক দিয়ে সহযোগিতা উৎসাহিত করতে দেওয়া বরাদ্দে লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সঠিক তদারকি ও বিতরণের অভাবে তার সুফল পাচ্ছেনা কৃষকরা।
কৃষক জানেনা সরকার তার জন্য কি পরিমাণ উপকরণ দিচ্ছে। নয় ছয় আঠারো করে বুঝিয়ে দিচ্ছে কৃষকদের। অনুসন্ধানে এমনি তথ্য বেড়িয়ে এসেছে মাটিরাঙ্গা কৃষি কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান ও উপসহকারী আমির হোসেনের অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে। পারিবারিক পুষ্টি বাগানে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্ম মানের উপকরণ, বীজ ও সার দেয়া হয়েছে কম। কৃষকদের না জানাকে পুঁজি করে পরিচর্যার খরচও দেয়া হয়েছে কম। যা সঠিক তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে থলের বিড়াল।
করমুক্ত রাজস্ব খাতের আওতায় কাজু বাদাম প্রকল্পে প্রতি ৫০ শতক জমিতে ঘেরা ভেড়া ও চারা গাছ বহন খরচ বাবদ ৬ হাজার টাকার স্থলে কৃষককে দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। কপি প্রকল্পে প্রতি ৩৩ শতক জমির জন্য ২ হাজার টাকার স্থলে ১ হাজার ৫০০ টাকা, পুরাতন বাগান পরিচর্যা বাবদ ৩ হাজর দুইশত টাকার স্থলে দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা। সার ও কীটনাশক দেয়া হয়েছে খেয়াল খুশিমত।
সাইট্রাস / লেবু চাষ প্রকল্পে প্রতি ৪০ শতক জমির জন্য ৩ হাজার দুইশত টাকার স্থলে কৃষককে দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। সার ও কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ দেয়া হয়েছে নিজেদের খেয়াল খুশি মত।
কৃষি অফিসের এসব অনিয়ম, দুর্নীতি পার্বত্যনিউজের প্রতিনিধির তথ্য পেয়ে কৃষি উপকরণ বিতরণের তথ্য চেয়ে বিধি মোতাবেক গত ২৪/১/২০২৩ইং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করা হলেও কোন তথ্য না দিয়ে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের ডিপার্টমেন্টে তথ্য দেয়ার মত লোক নাই। তার সেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ অধিনস্থ কৃষি উপ সহকারীগণ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষি উপসহকারী বলেছেন, মোস্তাফিজুর রহমানের সেচ্ছাচারিতা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কৃষক হয়রানি ও অনিয়ম নিয়ে কথা বললে তাৎক্ষণিক উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে বদলি করা হয়। সে ক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক কাজের জন্য উপসহকারী আমির হোসেনকে সুবিধা জনক ব্লকে রাখা হয়।
বড়বিল ব্লকের কৃষক নুরেরজমা বলেন, আমাদের জন্য কি বরাদ্দ তা জানি না, কৃষি অফিস হতে ১৫টি লেবুর চারা, ৪৫টি মাল্টার চারা, ৫ বোতল কীটনাশক ও ১২০০ টাকা দিয়েছে।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কৃষক আব্দুল বারেক বলেন, ১০ শতক জমির জন্য তিন ধরনের সার, ৩ বোতল ঔষধ, লেবুর চারা ১০টা মালটার চারা ২০টা ও নগদ ৬০০ টাকা দিয়েছে।
ঘণ্টারও বেশি সময় দপ্তরে বসে থাকার পর কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি। শুধু বলেছেন, রাসায়নিক সার, জৈব সার ও গাছের চারা বিতরণ করা হচ্ছে। আমার কাজ আছে, এখন কথা বলতে পারবো না। বিতরণকৃত উপকরণের তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিমাণ আমার জানা নাই। কাগজ পত্র খুলে দেখতে হবে।