মা-বাবা তের বছর পর জানলেন, মৃত ছেলে মায়ানমারের কারাগারে বন্দী


সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় মারা গেছেন এমন মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া এক যুগ ধরে মায়ানমারের কারাগারে বন্দী আছেন এমন সংবাদে পরিবারের মাঝে ঈদ আনন্দ ফিরেছে। অথচ মালয়েশিয়া যাত্রা পরবর্তী মৃত্যু হয়েছে সংবাদ শুনে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ছেলের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানও করে ফেলেছিলেন ।
এমন মর্মস্পর্শী চিত্র হচ্ছে, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মাদ্রাসা পাড়ার (বর্তমান বসবাস ৫ নং ওয়ার্ড জুমগর) শাহাব উদ্দিন প্রকাশ বাবুল-রাজিয়া দম্পতি ও তাদের বড় সন্তান শাহজাহানের।
পুত্র শোকে কাতর শাহাব উদ্দিন জানান, গত রমজান মাসে এক মায়ানমার নাগরিক আচমকা তার ঘরে পৌছেন। তিনি নিজেকে মায়ানমারের ইয়াঙ্গুন রাজ্যের বাসিন্দা আব্দুর রহমান পরিচয়ে জানান, তিনি তাদের সন্তান শাহজাহানের খবর নিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মায়ানমারের ইয়াঙ্গুনের মলাবাইন দ্বীপ কারাগারে তাদের ছেলের সাথে তিনিও কারাবন্দী ছিলেন। সেখানে পরিচয় হয় শাহজাহানের সাথে এবং শাহজাহান তার দীর্ঘ কারাগার জীবনের ঘটনা তাকে জানান। দু’জনের কথার ফাঁকে আব্দুর রহমান বলেন, তিনি ব্যবসায়ী কাজে বাংলাদেশের টেকনাফে যান। এ কথা শুনে শাহজাহান তার কাছে অনুরোধ করেন, কারাগার থেকে মুক্তির পর কোন সময় পুনরায় বাংলাদেশে গেলে তার পরিবারকে যেন সে কারাগারে আছেন এ সংবাদটা দেন । এর জন্য শাহজাহান আব্দুর রহমানকে তার ঘরের ঠিকানা এবং পরিবারের সদস্যদের তথ্য দেন।
আব্দুর রহমান মুক্তি পান। পরে গত রমজান মাসে ব্যবসায়ী কাজে আব্দুর রহমান বাংলাদেশে পৌঁছে শাহজাহানের দেয়া তথ্য মতে তার বাড়িতে পৌছেন । নিজের পরিচয় দিয়ে শাহজাহানের কারাগারে থাকার তথ্যটি পরিবারের সদস্যদের জানান।
দীর্ঘ তের বছর পর মৃত ছেলে বেঁচে থাকার সংবাদটি আব্দুর রহমানের মুখ থেকে শুনার পর মা-বাবা সহ পরিবারের সদস্যরা আবেগ আপ্লুত ও হতবাক হন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য মা-বাবা মায়ানমারের এ নাগরিককে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং তার দেয়া উত্তরে নিশ্চিত হন তাদের ছেলে বেঁচে আছেন।
মায়ানমার নাগরিক আব্দুর রহমান চলে যাওয়ার সময় তাকে তাদের মোবাইল নাম্বার দেন এবং তার মোবাইল নাম্বারও নেন। সম্ভব হলে কারাগারে ছেলের কাছে নাম্বারটি পাঠানো এবং সুযোগ হলে ছেলেকে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন সময় আব্দুর রহমানের মোবাইলে কল দিলেও সংযোগ পাননি।হয়ত তার দেয়া নাম্বারটি বাংলাদেশের মোবাইল নাম্বার ছিল। তার চলে যাওয়ার পর থেকে তারা আশায় বুক বেঁধেছেন তাদের সংসারে চার সন্তান এক কন্যার মধ্যে সবার বড় শাহজাহান তাদের বুকে ফিরে আসবেন।
তের বছর পর পুত্র শোকে কাতর শাহাবুদ্দিন ও রাজিয়া দম্পতি ছেলে বেঁচে থাকার সংবাদ পেয়ে আকাশের চাঁদ যেন হাতে পেয়েছেন। তাদের আশা সন্তান একদিন ফিরে আসবে।
তারা তাদের সন্তান বেঁচে থাকার সংবাদটি এক দেশ থেকে অপর দেশে এসে দেয়ার জন্য মায়ানমার নাগরিক আব্দুর রহমানের নিকট কৃতজ্ঞ এবং তার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করেন জানান। এখন তারা প্রহর গুনছেন তাদের নাড়িছেঁড়া ধন কখন তাদের বুকে ফিরবেন এ আশায়।
স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে আকুতি তাদের ছেলেকে দেশে ফিরাতে যাতে সরকার এগিয়ে আসেন।
উপরোক্ত বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক এবং পরিবারের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জানতে হবে। যুবকটি দেশিয় নাগরিক হলে আবেদনের ভিত্তিতে তাকে দেশে ফিরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।