মিয়ানমারের ছোঁড়া গুলি টেকনাফ বন্দর ও বসত ঘরে, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

fec-image

কক্সবাজার টেকনাফ স্থল বন্দরে ট্রাকের ভিতর ঘুমিয়ে ছিলেন চালক মিজান। হঠাৎ গাড়ির কাঁচে শব্দ শুনে ভয় পেয়ে জেগে উঠেন। দেখতে পায় গাড়ির সামনের কাঁচ ফুটো হয়ে আছে। খুঁজে দেখতে পান একটি বুলেট কাঁচ ভেদ করে গাড়ির ভিতর পড়েছে। এতে সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।

বুধবার (১৮ সেপ্টম্বর) দুপুর দুইটার দিকে টেকনাফ স্থল বন্দরে মিয়ানমার থেকে ছুঁড়ে আসা বুলেটের কথা এভাবেই বর্ণনা করেন ট্রাক চালক মিজান।

শুধুই ট্রাকে নই, গুলি পড়েছে বন্দরের কাস্টমস অফিসের দালান ও দমদমিয়া মো. আয়ুবের বাসায়ও।

এ ঘটনায় দু’টি বুলেট উদ্ধার করা গেলেও বাকি চারটি পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফের নাফনদীর ওপারে মিয়ানমারে দীর্ঘ দিন ধরে তীব্র সংঘাত চলছে। নাফনদীর টেকনাফের জালিয়ার দ্বীপের নিকটবর্তী পূর্ব পাশে অবস্থিত লালদিয়া নামের চরটি মিয়ানমার জলসীমানায় অবস্থিত ।

বুধবার দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে। দুই পক্ষের গোলাগুলির ঘটনায় ইতিমধ্যে গুলি এসে পড়েছে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যালয়সহ একটি পণ্যবাহী ট্রাক ও স্থানীয় এক ব্যক্তির বসত ঘরে। এ ঘটনায় টেকনাফের স্থল বন্দর সহ দমদমিয়া এলাকায় গুলির অব্যাহত শব্দে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় মেম্বার মো. আলী, বন্দর কর্তৃপক্ষ সহ স্থানীয় লোকজন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লালদিয়া চরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরএসও কে হটিয়ে আরকান আর্মি চরটি নিয়ন্ত্রণ নিতে চাই। এজন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর বুধবারও গোলাগুলি হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) আবারও গুলাগুলি চলে।

হৃীলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, বুধবার দুপুরে গুলির শব্দ কাঁপছে দমদমিয়া এলাকা সহ বন্দর এলাকা। ইতিমধ্যে সংঘাতে ছোঁড়া গুলি দমদমিয়ার আয়ুব নামের এক ব্যক্তির বসত বাড়িতে এসে পড়েছে। বাড়িটির জানালা ভেঙে গেছে। বন্দরেও কয়েকটি গুলি এসে পড়েছে।

স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেড টেকনাফের ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, দুপুরে কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় গোলাগুলির শব্দ শুনতে পায়। এক পর্যায়ে কার্যালয়ের জানালায় এসে গুলি লাগে। জানালা ভেঙ্গে যায়। এসময় বন্দর পণ্য বোঝাইকারি একটি ট্রাকের কাঁচে গুলি লেগে ভেঙে গেছে।

তিনি আরও বলেন, এর আগে বুধ-বৃহস্পতিবারও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। গোলাগুলির শব্দের কারণে সকলেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।

এ ব্যাপারে টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবস্থপনা পরিচালক জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে তিন রাউন্ড গুলি এসে পড়ে কার্যালয়ের জানালার গ্লাস ও একটি ট্রাকের গ্লাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে কোন হতাহত হয়নি। এ বিষয়ে ঊধ্বর্তন কতৃপক্ষকে অবিহিত করা হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার বেলা ১২টার দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী গোষ্টির মধ্যে সংঘাতের জেরে ছোঁড়া কয়েকটি গুলি টেকনাফ স্থলবন্দর পড়েছে।

স্থানীয়দের কাছে থেকে ঘটনাটি শোনার পর বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন