মিয়ানমারে গুলি-বোমা বিস্ফোরণ, প্রাণ বাঁচাতে এপারে ঢুকছে রোহিঙ্গারা

fec-image

মিয়ানমারের রাখাইনে বোমা ও গুলিতে ঠিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। ইতিমধ্যে সেনা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বোমা ও গুলিতে সেদেশে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। প্রাণ বাঁচাতে এপারে অনুপ্রবেশের সংখ্যা সরকারের তথ্য মতে ৮ হাজার হলেও এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। তারা উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে বিচ্ছিন্নভাবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে টহল আরো জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

মঙ্গলবার স্থানীয় ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প (নং ২৬ ও ২৭) সরেজমিন ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমার থেকে আসা বিকট আওয়াজে এদেশের বাড়ি ঘরগুলো থরথর করে কেঁপে ওঠে। মুহুর্মুহু এ শব্দে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সীমান্তবাসীর মাঝে। রাখাাইনের মংডুতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাত দিন দিন আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এ সংঘর্ষকে ঘিরে সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দালালদের মাধ্যমে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে এদেশে অনুপ্রবেশ করছে শতশত রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নতুনভাবে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে নতুন আসা রোহিঙ্গারা। আবারো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে সীমান্তে বসবাসরত এদেশের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

কয়েকজন নতুন আসা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সেনা ও আরকান আর্মির মধ্যে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। মংডু টাউন দখলে নিয়েছে আরকান আর্মি। মংডু টাউনসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ অন্য এলাকায় চলে গিয়েছে। হঠাৎ করে গুলাগুলি ও বোমার আঘাতে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে। এখন জনশূন্য মংডু। যে এলাকায় লোকজন চলে গিয়ে আশ্রয় নেয়, সেই এলাকায় নতুন করে শুরু হয় গুলাগুলি ও বোমা নিক্ষেপ। ফলে প্রাণ হারায় অনেকে। তাই প্রাণ বাঁচাতে পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। দালালদের মাথাপিছু ২০-২৫ হাজার টাকা দিয়ে এপারে পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে এসেছে বলেও জানান ওই রোহিঙ্গারা।

অনেক পরিবার এপারে চলে আসলেও নৌকার জন্য ওপারে অপেক্ষা করছে শতশত রোহিঙ্গা পরিবার। বর্তমানে সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। দেখা দিয়েছে খাদ্যের তীব্র সংকট। যেকোনো সময় তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে অপেক্ষায় রয়েছেন বলেও জানান।

সীমান্তের বাসিন্দা আরেফ আহমেদ বলেন, রাতভর মিয়ানমারে বিকট আওয়াজে আমরা সীমান্তের মানুষ ঘুমাতে পারেনি। অনেকের ঘরের বাইরে রাত কেটেছে। একটু পরপরই বিকট গুলির শব্দে সীমান্ত কেঁপে ওঠে। এ পরিস্থিতিতে যেকোনো মুহূর্তে সীমান্তে আবারও অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।

টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা আরো জানান, গত নভেম্বর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাত তীব্র হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে।

চলমান সংঘাতের মধ্যে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, নাফনদী পার হয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন রোহিঙ্গারা। পরে তারা চলে যাচ্ছেন উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে।

এছাড়া মিয়ানমারের মংডু মগনিপাড়া, সিকদারপাড়া, ফয়েজিপাড়া, নুরুল্লাহপাড়া, সুদাপাড়া ও আইরপাড়া এলাকায় অন্তত ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়রা বলছেন, গত এক মাসে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ( বিজিবি) ও কোস্ট গার্ড সদা সীমান্ত পাহারা এবং নাফ বদীতে টহল জোরদার করলেও রাতের আধাঁরে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে একশ্রেনীর দালাল রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংক ও স্বর্ণালংকার।

বিশেষ করে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের জালিয়াপড়া, মিস্ত্রি পাড়া, সাবরাং, টেকনাফের, কেরুনতলী, হাবিরছড়া, রাজারছড়া, হ্নীলার, নাইট্যংপাড়া, দমদমিয়া, জাদিমুড়া, মোছনী, নয়াপাড়া, মোছনী, লেদার কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। এসময় বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের হাতে আটক হয়েছে অনেকে। পরে তাদেরকে পুশব্যাক করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ ২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশন করেছে। তবে বিজিবি অনুপ্রবেশ প্রতিনিয়ত প্রতিহত করে যাচ্ছে। মঙ্গলবারও বিজিবি এবং কোস্ট গার্ড সমন্বয়ে যৌথ টহল করা হয়েছে। এছাড়াও অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে টহল জোরদার করা হয়েছে। কিছু দেশীয় দালাল মিয়ানমারের দালালদের সাথে মিলে রোহিঙ্গা নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তাদের ব্যাপারেও আমরা আইনগত কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন