পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পাহাড়ের ঢালুতে জুম চাষাবাদে বিভিন্ন ফলদ বাগানের মাঝে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে সফলতা পেয়েছে দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীরা। জুম পাহাড়ের অনাবাদি জমিতে একই স্থানে বিভিন্ন ফলদ বাগানের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া চাষের হার দিনদিন বাড়ছে। এতে আর্থিকভাবে লাভের মুখ দেখছে পাহাড়ি জুম চাষীরা। চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিবিভাগ।
পাহাড়ে উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া নানাবিধ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আর খেতে সুস্বাদু, তাই এই সবজির চাহিদাও বাড়ছে বহুগুণে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় বলে স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে বছরজুড়ে জুমের মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যাচ্ছে।
জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলের পাদদেশে বসবাসরত ম্রো সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীদের জীবনধারণের প্রধান উৎস জুম চাষ হলেও বর্তমানে পাহাড়ের ঢালুতে মিশ্র ফলদ বাগানের পাশাপাশি একই জমিতে বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি কুমড়া সবজির চাষাবাদে ঝুঁকছেন। এই সবজি চাষ করে আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল হচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবান থানচি সড়কে টংকাবতী ইউনিয়ন এলাকার রামড়ী পাড়া, বাগান পাড়া, বসন্ত পাড়া, চিম্বুক, ওয়াইজংশন, এলাকা ছাড়াও রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলাগুলোতেও ব্যাপক ফলন হয়েছে মিষ্টি কুমড়ার। কৃষকরা ক্ষেত থেকে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে বিক্রির উদ্দেশ্যে রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে জমিয়ে রাখছে। বেপারীরা এসে চাষীদের কাছ থেকে এসব মিষ্টি কুমড়াগুলো বিভিন্ন দামে ক্রয় করে গাড়ি যোগে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ নানান প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।
বান্দরবান কৃষি বিভাগ সূত্র মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বান্দরবানে ২৪২ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়ার পরিমাণ ৪১৫৪ মেট্রিকটন। যার মধ্যে পাহাড়ের ঢালুতে জুম পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়া চাষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বান্দরবানে ২৪৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১২ মেট্রিকটন। গতবছরের তুলনায় এ বছর চাষ বেড়েছে ৬ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫৮ মেট্টিকটন বৃদ্ধি পেয়েছে।
বান্দরবান-থানচি সড়কে ১৬ মাইল এলাকার চাষী সিংচং ম্রো বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি কুমড়ার ফলন ভালো হয়েছে। চলতি মৌসুমে করোনার কারণে বাগানের আম বিক্রি করে তেমন লাভ হয়নি। এবারে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে ক্ষতির দিকটা মোটামুটি পুষিয়ে নিতে পারবো। গত বছরে প্রতিমণ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। তবে এই বছর প্রতি মণ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা করে বিক্রি করতে পারছি। এতে আর্থিকভাবে কিছুটা হলেও স্বচ্ছল হবো।
একই এলাকার আরেক চাষী রেংরাও ম্রো বলেন, গত বছরের করোনায় লক ডাউনের সময়ে বাইরে থেকে আড়তদার না আসার কারণে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে সম্প্রতি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকায় বেপারীরা সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করতে পারছেন। ফলে বিক্রিও বেড়েছে মিষ্টি কুমড়ার।
এ ব্যাপারে বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবানে পাহাড়ের মাটি আর আবহাওয়া মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য উপযোগী, তাই দিনদিন এই অঞ্চলে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বাড়ছে। বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ হচ্ছে। এতে কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ী উভয়পক্ষই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাছাড়া কৃষিবিভাগ কৃষকদের পরামর্শ ও বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে।