parbattanews

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় ফেসবুক রেকর্ড উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হতে পারে

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় যারা লড়ছেন, তারা আবারও আইনি ভিত্তিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন। গাম্বিয়ার প্রচেষ্টায় ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের পদক্ষেপগুলো নজিরবিহীন, এবং দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত ছিল।

কিন্তু গণহত্যার দায়বদ্ধতা প্রমাণ করাটা বিশেষভাবে কঠিন কারণ আদালতে গণহত্যার উদ্দেশ্য প্রমাণ করতে হবে। এবং আইনি প্রক্রিয়ায় এই উদ্দেশ্যের বিষয়টি প্রমাণ করাটা কঠিনতম কাজগুলোরএকটি।

কিন্তু যৌক্তিক তবে নজিরবিহীন পন্থায় গাম্বিয়ার জাস্টিস মিনিস্টার আবুবাকার তামবাদুর নেতৃত্বাধীন আইনি টিম মার্কিন কোর্টের কাছে বলেছে, যাতে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তারা ‘শুদ্ধি অভিযানের’ জন্য যে সব নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেগুলোর তথ্য দেয়ার জন্য ফেসবুকের উপর তারা চাপ দেয়।

এই আদেশদাতাদের মধ্যে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইংও রয়েছেন।

প্রসিকিউশান যদি কোন জায়গায় সামরিক বাহিনীর অভিযানের চিন্তা ভাবনা এবং তাদের পদক্ষেপগুলোর তথ্য পেতে চায়, তাহলে সেটা পাওয়া যাবে ফেসবুকের কাছে।

২০১৭ সালে, আমি লিখেছিলাম যে, রোহিঙ্গা-বিরোধী ঘৃণা ও অপপ্রচারের জন্য ফেসবুক কিভাবে প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, যেটার সূত্র ধরেই ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালানো হয়েছে। সে সময় যদিও আমি উগ্র জাতীয়তাবাদী ও বৌদ্ধ চরমপন্থীদের দিকে ইঙ্গিত করেছিলাম, কিন্তু সামরিক বাহিনীর নেতৃবৃন্দসহ অনেক সিনিয়র কর্মকর্তারাও সে সময় এই ইস্যুতে ফেসবুকে সরব ছিল।

প্রসিডিংসকে আগে থেকে বিচার না করেও এটা বলা যায় যে, সরকারের ও সামরিক বাহিনীর নেতৃস্থানীয় ওই সব কর্মকর্তারা ঘৃণামূলক বার্তাকে নিন্দা করেননি, বরং তাদের উদ্দেশ্য ছিল চরমপন্থীদের এই প্রচারণার পক্ষে যুক্তি দেখানো যাতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আচরণকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখানো যায়।

শুধুমাত্র এই দৃষ্টিকোণ থেকেই, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে একটা অনুমান করা যায়। কিন্তু সম্ভবত তার চেয়েও বড় বিষয় এখানে রয়েছে: জনগণের স্বার্থেই এটা দেখানো উচিত যে, সে সময় সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগের ধরণটা কেমন ছিল। এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে তাদের মনোভাবটা গণহত্যা সম্পর্কিত ব্যক্তিগত কথাবার্তায় কিভাবে ফুটে উঠেছে।

যে ভাবেই দেখা হোক না কেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বর্বরতার পরিকল্পনাকারীদের কাজের ধরণের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হতে পারবো না, যতক্ষণ না এই রেকর্ডগুলো আমাদের সামনে না আসবে।

মিয়ানমার সরকারের আর্কাইভে হয়তো আরও অন্যান্য সত্য ও নিখুঁত তথ্যাদি রয়েছে, কিন্তু প্রসিকিউশন টিমকে নিশ্চিতভাবে সেগুলো ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হবে না। ফেসবুকের কাছে যে সব রেকর্ড আছে, সেগুলো এ ক্ষেত্রে সত্যের কাছাকাছি একটা ধারণা দিতে পারে।

মার্কিন আদালত যদি এই অনুরোধ অনুমোদন দেয়, তাহলে আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গণহত্যার যেভাবে তদন্ত হচ্ছে, সেটার ক্ষেত্রে একটা অনন্য অগ্রগতি হবে। উদ্দেশ্য স্পষ্ট করাটা হঠাৎ করেই সেখানে অনেক সহজ হয়ে যাবে, এবং আমরা আশা করতে পারি যে, আরও বহু গণহত্যাকারী ভবিষ্যতে বিচারের মুখোমুখি হবে।

যদিও এ ধরণের পরিকল্পনাকারীরা পরবর্তীতে সতর্ক হয়ে যাবে এবং ফেসবুকে ষড়যন্ত্র করা থেকে দূরে থাকবে, কিন্তু এখানে একটা উদাহরণ সৃষ্টি হবে যার প্রভাব হবে অনেক বড়।

মূলত আমেরিকান কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে সারা বিশ্বে যে সব ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ করা হচ্ছে – যেটা বৈশ্বিক যোগাযোগের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে – সে সব তথ্যগুলোকে মার্কিন আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে, এবং সে ক্ষেত্রে গোপনে গণহত্যার পরিকল্পনা করাটা হঠাৎ করেই অনেক বেশি অবাস্তব হয়ে উঠবে।

Exit mobile version