মিয়ানমার আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আরাকান আর্মি

fec-image

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের কাচিন রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় ভোরের দিকে ধুলোর ঝড় উঠতে শুরু করেছে। কারণ আরাকান আর্মিতে নিয়োগ পাওয়া নতুন জনবল এ সময় সামরিক প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে পাহাড়ি রাস্তা ধরে দৌড়াদৌড়ি করছে।

আরাকান আর্মিতে নতুন জনবল যোগ দিচ্ছে এবং কাচিন রাজ্যে তারা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করেছে। কাচিন রাজ্য মূলত আরাকান আর্মির সহযোগী সংগঠন নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের সদস্য কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির (কেআইএ) কর্তৃত্বাধীন জায়গা।

আরাকান আর্মি (এএ) গঠিত হয় ২০০৯ সালে। বর্তমানে তারা রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে এবং অস্ত্রবিরতির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ার কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সহিসংতার মাত্রা অনেক বেড়েছে।

আরাকান আর্মি মূলত ইউনাইটেড লিগ অব আরাকানের সশস্ত্র শাখা, যাদের সদর দপ্তর লাইজাতে। লাইজা হলো কেআইএ-নিয়ন্ত্রিত কাচিন রাজ্যের রাজধানী, যেটার অবস্থান চীন সীমান্তের কাছে।

আরাকান আর্মি জানিয়েছে, এই মুহূর্তে তাদের বাহিনীতে সাত হাজারের মতো সদস্য রয়েছে।

দেশের যে সব সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠি এখনও কোন অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি তাদের একটি আরাকান আর্মি জানিয়েছে যে, তারা আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন এবং নিজেদের অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণের দাবিতে লড়াই করছে।

আরাকান আর্মিতে সদ্য নিযুক্ত এক নারী সদস্য সো সো বললেন, “আমার আরাকান আর্মিতে যোগ দিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার কারণ হলো আমি আর দেখতে চাই না যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনের মানুষের উপর নির্যাতন করছে”।

“মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আমাদেরকে সম্ভাব্য সকল উপায়ে নির্যাতন করছে এবং আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করছে। এটা সহ্য করতে পারছি না বলে আরাকান আর্মিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি”।

রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠিকে বার্মার জনগণ সাধারণত বাঙ্গালি বলে সম্মোধন করে। প্রতিবেশি বাংলাদেশ থেকে এসেছে বোঝাতে তুচ্ছার্থে এই শব্দ ব্যবহার করা হয়।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিধন অভিযান থেকে প্রাণ বাঁচাতে সাড়ে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে নয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাস করছে এবং আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপগুলো মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত করছে।

রাখাইন রাজ্যের স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে যদিও জাতিগত বৌদ্ধের সংখ্যা বেশি, তবুও বার্মিজ সেনাবাহিনীর হামলার শিকার হচ্ছে তারা।

রাখাইন রাজ্যে চীন ও ভারতের অর্থায়নে যে সব বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে, সেগুলোর কারণে এরই মধ্যে বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ ও মুসলিম জনগোষ্ঠিকে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে।

৪৮৪ মিলিয়ন ডলারের কালাদান প্রকল্পের মাধ্যমে সিত্তুই বন্দরের সাথে পূর্ব ভারতের কলকাতা বন্দরকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কিয়াউকফিউতে গভীর সমুদ্র নির্মাণের জন্য সহায়তা দিচ্ছে চীন, যেটার জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ডলার।

একই সাথে বঙ্গোপসাগর থেকে চীন পর্যন্ত ১.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পাইপলাইনও স্থাপন করা হবে।

পাইপলাইন ও সমুদ্র বন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো গ্যাস ও তেল সরবরাহ পাবে। কিন্তু স্থানীয় জনগণ এখনও দেখতে পাচ্ছে না যে, এখানে তাদের কি লাভ হবে।

প্রশিক্ষণের ফাঁকে আরাকান আর্মির সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট কিয়াউ থান বললেন, “একদিন আমি পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি রাজধানীর দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে চারদিকে আলোর ছড়াছড়ি। এরপর আমার গ্রামের দিকে তাকালাম, সেখানে কোন আলো নেই। সেখানে শুধুই অন্ধকার”।

আরাকান আর্মির ডেপুটি কমান্ডার নিও তুন অং জোর দিয়ে বললেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আমরা সাম্য এবং স্বাধিকার চাই”।

“আমাদের সংগঠনের এটাই মূল দাবি ও নীতি। ভবিষ্যতে আমরা আমাদের নিজেদের আরাকান রাষ্ট্র গঠন করতে চাই”।

সূত্র: সাউথএশিয়ানমনিটরডটকম

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আরাকান আর্মি, মিয়ানমার, সেনাবাহিনী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন