পরিবহন ও শ্রমিক সিন্ডিকেটের কারণে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

মিয়ানমার থেকে আসছে পেঁয়াজের বড় বড় চালান

fec-image

টেকনাফ স্থল বন্দরে পরিবহন ও শ্রমিক সিন্ডিকেট এবং বাড়তি খরচের কারণে পেঁয়াজ ও অন্যান্য পণ্যাদির দাম বাড়ছে। টেকনাফ স্থল বন্দর হতে ঢাকা-চট্টগ্রামে পেঁয়াজ পরিবহনে ট্রাক প্রতি ৪০ হাজার টাকা খরচ বেশি হয়। ফলে পরিবহনের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। পাশাপাশি শ্রমিক সমস্যা রয়েছে। একজন ব্যক্তি ৫-৬ বছর ধরে শ্রমিক নিয়ন্ত্রন করছে। টেন্ডার ওপেন পদ্ধতিতে না হওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে। দেশে পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে মিয়ানমার থেকে বেশি বেশি পেঁয়াজ আমদানী করছে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, ১৬ অক্টোবর (শনিবার) বেলা ১১টায় টেকনাফ স্থলে বন্ধর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এইচ, এম শফিকুজ্জামান।

এসময় আমদানী রপ্তানিকারক, ট্রাক মালিক, শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিএন্ডএফ এজেন্ট, গণমাধ্যমকর্মী, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও স্থল বন্দরের নিয়োজিত সকল দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, দেশে পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য মিয়ানমার থেকে বেশি বেশি পেঁয়াজ আমদানী করতে হবে। পেঁয়াজ আমদানিতে যে শুল্ক ছিল তা প্রত্যাহার করা নেওয়া হয়েছে। বিনা শুল্কে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানী করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানান।

টেকনাফ স্থল বন্দর হতে ঢাকা-চট্টগ্রামে পেঁয়াজ পরিবহনে ট্রাক প্রতি ৪০ হাজার টাকা খরচ বেশি হয়। ফলে পরিবহনের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। বিষয়টি সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ে তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি শ্রমিক সমস্যা রয়েছে। একজন ব্যক্তি ৫-৬ বছর ধরে শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। টেন্ডার ওপেন পদ্ধতিতে না হওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।

তিনি আরো বলেন, পণ্য বোঝাই ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধি, শ্রমিক সমস্যা, সোনালী ব্যাংকের বুথ স্থাপন, বিশ্রামগারের ব্যবস্থাসহ বন্দরের বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. পারভেজ চৌধুরী, ২বিজিবি ব্যাটালিয়ানের উপ-পরিচালক লে. এম মুহতাসিম বিল্লাহ শাকিল, রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুন নুর, বন্দরের ব্যাবস্থাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, কোয়ারান্টাইন কর্মকর্তা, সিএন্ডএফ এজেন্টের সভাপতি আব্দুল আমিন, বাণিজ্য ব্যবসায়ী, সংবাদকর্মীসহ বন্দরে নিয়োজিত সকল স্থরের কর্মকর্তাগণ।

অপরদিকে বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে ৮ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে মিয়ানমার থেকে। এসব পেঁয়াজ ১০ থেকে ১২ জন ব্যবসায়ী আমদানি করেছেন। স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন। পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য হওয়ার পাশাপাশি দেশের বাজারে দাম স্বাভাবিক রাখতে স্থলবন্দর থেকে সারাদিন এ পণ্য ট্রাকভর্তি করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। বাজারের দাম স্বাভাবিক রাখতে আরও কয়েক হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ ২-৩ দিনের মধ্যে স্থলবন্দরে এসে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে টেকনাফের বাজারসমূহে পেঁয়াজের দাম দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। টেকনাফ স্থল বন্দর সূত্রে আরো জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমার থেকে ২৮ হাজার বস্তা ভর্তি আটটি পেঁয়াজের ট্রলারে করে এমএ হাসেম, এহতেশামুল হক বাহাদুর, শওকত আলম, মো. ফারুক মো. জব্বারের কাছে আসে। এসব ট্রলারে ৮০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ছিল। শ্রমিকরা পাচঁটি পয়েন্টে পেঁয়াজের বস্তাগুলো ট্রলার থেকে খালাস করে ট্রাকে বোঝাই করেছেন। এসব পেঁয়াজ টেকনাফ স্থল বন্দর হয়ে সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানি করে লাভবান হচ্ছিনা। শুধু মাত্র দেশের চাহিদা ও বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছি।

টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘বাজারের পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখতে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করছেন। তাছাড়া পেঁয়াজ পঁচনশীল পণ্য। ফলে রাতদিন চব্বিশ ঘন্টায় ডেলিভারি দিচ্ছি। যাতে বাজারে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক থাকে’।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন