parbattanews

মুখোশবাহিনী দিয়ে আন্দোলন নস্যাতের ষড়যন্ত্র হচ্ছে: পিসিপি

মুখোশবাহিনী দিয়ে আন্দোলন নস্যাতের ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতারা বলেছেন, দমন-পীড়ন, অধিকার হরণ, ভূমি বেদখল ও মুখোশবাহিনী দিয়ে আন্দোলন নস্যাতের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে।

পাকিস্তানের বেলুচরে জিমেন্ট কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে আগ্রাসনের ৭২ বছর উপলক্ষে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের এক আলোচনা সভায় তারা এমন অভিযোগ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক কার্জন হলের মাঠে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, ঢাকা শাখার সভাপতি শুভাশীষ চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক তুলতুল চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা করেন পিসিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরুপা চাকমা ও পিসিপির ঢাকা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তীর্থ ত্রিপুরা।

আলোচকরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এক সময় স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাজ্য ছিল।মুঘল আমলে নামমাত্র কার্পাস কর দিয়ে এখানকার রাজা এ রাজ্য স্বাধীনভাবে শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। ব্রিটিশরা বাংলায় শাসন ক্ষমতা নেয়ার পর কয়েক বছর পর তাদের আগ্রাসী নীতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অধিক কর দাবি করলে তাদের সাথে সেই সময়ের চাকমা রাজার সাথে ব্রিটিশদের যুদ্ধ এবং সন্ধি হয়।

ব্রিটিশরা পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাতন্ত্র্যকে মেনে নেয় উল্লেখ করে তারা বলেন, ব্রিটিশদের কর প্রদান করলেও ১৮৬০ সাল পর্যন্ত পার্বত্যবাসীরা ব্রিটিশের প্রজা ছিলেন না। ১৮৬০ সালে তাদের রাজ্য গ্রাসী নীতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তারা অধিনস্ত করে জেলায় পরিণত করে।

তারা বলেন, ব্রিটিশরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে তাদের শাসন কাঠামোর আওতায় আনলেও পাহাড়িদের বিশেষ রীতি ও বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ১৯০০ রেগুলেশন আইন তৈরি করে। এ আইনের ফলে সমতল থেকে বাঙালিরা অনুমতি ছাড়া প্রবেশ ও বসবাস করতে পারতনা।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি আইন অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কথা ছিলনা মন্তব্য করে আলোচকরা বলেন, শিখদের খুশি করার জন্য পাঞ্জাবের দু’টি তহশিল (প্রশাসনিক ইউনিট) ফিরোজপুর ও জিরা ভারতের অন্তর্ভূক্ত করে দেয়া হয়েছিল, অন্যদিকে পাকিস্তানের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কখনো এই অন্তর্ভূক্তি মেনে নিতে পারেনি। এ কারণে ১৫ আগস্ট রাঙামাটিতে ভারতীয় পতাকা এবং বান্দরবানে বার্মা পতাকা উত্তোলন করা হয়।

২০ আগস্ট বেলুচরে জিমেন্ট সশস্ত্র আগ্রাসন চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করেছিল উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, ফজলুল কাদের চৌধুরী গং ১৯৫৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানের একটি সাধারণ জেলায় পরিণত করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কিন্তু রাঙ্গামাটির তৎকালীন ইংরেজ জেলা প্রশাসক নিবলেট আর পাহাড়ি নেতাগণের প্রচেষ্টার ফলে সে ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।

১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের চীন সফরকালে ফজলুল কাদের চৌধুরী একদিনের জন্য পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হলে ঐ দিনেই তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের “বিশেষ অঞ্চলের” মর্যাদা খারিজ করে তার আগের ষড়যন্ত্র সফল করেন বলেও মন্তব্য তাদের।

তারা বলেন, পাকিস্তান আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম “বিশেষ অঞ্চলের” মর্যাদায় সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের কাশ্মির ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে শাসিত হতো, পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা থেকে নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ অঞ্চলের মর্যাদা বাতিল করে দেয়ায় সে সময় অনেক প্রতিবাদ ও দেনদরবার করা হলেও পাকিস্তান আমলে আইনগতভাবে তা আর পুনঃস্থাপিত হয়নি, অনেকটা ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয়।

পিসিপি নেতারা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি  “বিশেষ অঞ্চল” সংবিধানে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়। বরং জুম্ম নেতৃবৃন্দকে “বাঙ্গালি” হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাসমূহের জন্য অবমাননাকর। আশির দশক থেকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সমতলের সাধারণ বাঙ্গালি জনগণ কেরেশনিং ব্যবস্থাসহ পাহাড়িদের জায়গা-জমি দখল করে বসতি করে দেয়া হয়।

Exit mobile version