মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পেকুয়ার মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেল পারাপার, ফেরি চালুর দাবি

fec-image

মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোটে করে কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামা কুতুবদিয়া চ্যানেল পার হয়ে কুতুবদিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করছে। আবার তারা পার হয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকা,কক্সবাজার এ যাতায়াত করে। বিশেষ করে ৩ কিলোমিটারের এ নৌ পথটিতে মালামাল নিয়ে পারাপার হওয়া যেমন কষ্টের তেমনি বাড়ছে খরচও। এমনকি মুমূর্ষু রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য নদী পার হতে গিয়ে মারাও যান। তাই এ ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছেন দ্বীপ উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ।

এ দ্বীপটিতে দেড় লাখ মানুষের বসতি। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তারা। বিপদসংকুল পরিস্থিতিতেও লক্কর ঝক্কর নৌকা, ট্রলারে করে নদী পার হতে হয় দ্বীপবাসীদের। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এই নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালু না হওয়ায় আক্ষেপ রয়েছে তাদের।

এছাড়া ইজারাদারদের সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মগনামা-কুতুবদিয়া ঘাট পারপারে টুলসহ নিয়ম মোতাবেক ২০ টাকা ট্রলার ভাড়ার মধ্যে ইজারাদাররা নেয় ৩০-৪০ টাকা। স্পিডবোটে করে ৭০ টাকার জায়গায় তারা নিচ্ছে ১০০ টাকা। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় দ্বীপবাসিদের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্বল ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে খেসারত দিতে হচ্ছে তাদের। যুগের পর যুগ ধরে এই নৌপথে ফেরি চালুর দাবি জানানো হলেও তাদের কথার কোনো মূল্যায়ন হয়নি।

দ্বীপের আলী আকবর ডেইলের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, ‘বন্যা তাড়িতদের কপাল যেন আজীবন পোড়া। স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হয়ে গেল কিন্তু এখনো ফেরি চালু হয়নি। দ্বীপের নেতাদের কোনো যোগ্যতা নাই। ফেরি সার্ভিস চালুর বিষয়ে কোনো নেতাকে মাথা ঘামাতে দেখিনা আমরা।’

চারদিকে সমুদ্রে ঘেরা এ উপজেলার উৎপাদিত পণ্য দ্রুত পরিবহনের অভাবে প্রতিবছর আর্থিকসহ বিবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কৃষকরা। চট্টগ্রাম, চকরিয়া ও কক্সবাজার থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য বড়ঘোপ-মগনামা নৌ রুটের নদীতে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমদ সাকিল বলেন, ‘কক্সবাজার জেলায় কুতুবদিয়া শিক্ষায় সবচেয়ে উন্নত উপজেলা। এখানকার শতশত শিক্ষার্থীকে নদী পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার শহরে স্কুল, কলেজ মাদরাসায় যেতে হয়। জন্মের পর থেকে শুনে আসছি ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে আমাদের নদী পার হতে হবে না। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের নদী পার হতে হয়। এছাড়া নৌকার লোকরা ভাড়াও অতিরিক্ত রাখে। সবমিলিয়ে এক দুঃখময় জীবন পার করছে কুতুবদিয়াবাসী।’

জানা যায়, কুতুবদিয়ার বাসিন্দা ও সাবেক সচিব আ ম ম নাসির উদ্দিনের প্রচেষ্টায় ২০০৮ সালে সী ট্রাক চালু হয়। কয়েকমাস পর তা অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহল ও ঘাট ইজারাদারদের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করে অনেকে। যত দ্রুত সম্ভব ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি কুতুবদিয়া দ্বীপবাসীর।

এদিকে জাতীয় সংসদে ১৮ তম অধিবেশনের বাজেটে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক স্থানীয় জনগনের দাবির বিষয়টি জাতীয় সংসদে গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করে বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর ওই রুটের ২৯টি ফেরি থেকে অন্তত দু-একটি ফেরি কক্সবাজার-মহেশখালী ও পেকুয়ার মগনামা-কুতুবদিয়া রুটে ফেরির চালুর দাবি জানিয়েছিলেন । কিন্তু তার বাস্তবায়নের কোন রূপরেখা এখনো দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী-লীগের সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ফেরী যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর পূর্বে যেসব যানবাহন আসা যাওয়া করবে এর জন্য সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করতে হবে। যেখানে ডেনিস বোটের জন্য যাত্রীরা দশ মিনিট অপেক্ষা করতে পারে না স্পীডবোট নিয়ে পার হয়ে যায়। সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা কীভাবে অপেক্ষা করবে? আগে রাস্তাঘাট চলাচলের উপযোগি হওয়া প্রয়োজন। তারপরে ফেরীর বিষয়ে আগানো যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কুতুবদিয়া, পেকুয়া, ফেরির দাবি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন