মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় গণশুনানি: পুলিশের হয়রানির বর্ণনা প্রত্যক্ষদর্শীদের

fec-image

অব. মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যার বিষয়ে গণশুনানীতে পুলিশের বিভিন্ন হয়রানি মূলক কৃতকর্মের বর্ণনা দিয়েছে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।

বিশেষ করে শামলাপুর চেকপোস্ট এলাকায় অবস্থিত হেফজখানার কয়েকজন শিক্ষার্থী যারা মসজিদের ছাদ থেকে সেইদিনের সংঘটিত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে তারা সব তুলে ধরেছে।

বরিবার (১৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শামলাপুর মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত সিআইসি অফিসে গণশুনানি বা গণসাক্ষী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে ছাত্র, শিক্ষকসহ স্থানীয় ১২ জন ব্যক্তি তালিকাভুক্ত হন। সেখান থেকে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি।

গত ৩১ জুলাই শামলাপুর মেরিন ড্রাইভের পুলিশের চেকপোস্টে সিনহা নিহত হয়েছে সেই সময় বিভিন্নভাবে যেসব প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনা দেখেছিলেন তারা সাক্ষী প্রদান করেছে।

ঘটনার সঠিত তথ্য অনুসন্ধানে আয়োজিত এই গণশুনানিতে উৎসুক জনতা ভিড় লক্ষণীয় ছিল।

স্থানীয় জনতার দাবি, গণশুনানির মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত বিষয়ের উদঘাটন করা দরকার।

অদূর ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই বিষয়ের নিশ্চয়তা চায় তারা।

তাছাড়া অতীতের বিচারবহির্ভূত হত্যা ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক কারবারি নিহতের পর অনেক নিরপরাধ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে সেই মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা থেকে যাচাই-বাছাই করে নিরপরাধ ভুক্তভোগিদের রেহায় দিতে সরকারের প্রতি দাবি করেছে।

ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় নিরপরাধ মানুষকে মাদক, অস্ত্র, মানবপাচার, ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলায় হয়রানি করা হয়। থানা পুলিশের সহায়তায় অপরাধীরা অনেক সময় নিরীহ লোকজনকে অপরাধী বানিয়ে ছাড়ে।

অনেকে বাড়ি-ঘর, জমিজমা, গরু ছাগল বিক্রি করে এখন নিঃস্ব। তাদের দাবি, মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে।

শুনানিতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কর্নেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলি উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে গণশুনানি স্থলে আসতে শুরু করেন সবাই। বক্তব্য দিতে আগ্রহীরা নাম রেজিস্ট্রেশন বুথে যান। গণশুনানি উপলক্ষে মেরনি ড্রাইভের শাপলাপুর এলাকা, ক্যাম্পস্থল এবং আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে সেনাবাহিনী ও অন্য শৃঙ্খলাবাহিনী।

বিপুল পরিমাণ গণমাধ্যমকর্মীও উপস্থিত হন সেখানে। আশপাশে তাদের যাতায়াত অবাধ থাকলেও শুনানি কক্ষে গণমাধ্যমের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি।

সিনহা হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। এর মাঝে এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত, নাকি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে। কার নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেছিলেন লিয়াকত। ঘটনার সময় আদৌ সিনহার হাতে অস্ত্র ছিল কি না, এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র মতে, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে ফোন করে বলেছিলেন, তিনি সিনহাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গুলি করার আগে লিয়াকত ওসি না অন্য কারও কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে আরও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে তদন্তকারী দল।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।

এর মধ্যে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পুলিশের চার সদস্য এবং এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গত শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র‌্যাব।

যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তারা হলেন–সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।
এর আগে একই ঘটনায় টেকনাফ থানায় দুইটি, রামু থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ।

এই ৩টি মামলায় আসামি করা হয়েছে সিনহার সঙ্গি সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রাণী দেবনাথকে। তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ওসি, গণশুনানী, টেকনাফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন