parbattanews

মেডিকেলে চান্স পেয়েও অর্থাভাবে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অনিশ্চিত রিফার !

দারিদ্র্যের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সদ্য প্রকাশিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন দরিদ্র পরিবারের অদম্য মেধাবী ছাত্রী সাদিয়া নাসরিন রিফা। এতে পরিবারের সবাই খুশি হলেও ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে রিফা’র। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। রিফা’র বাবা পেশায় একজন কৃষক। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি তিনি। রিফা’র বাবার আয় দিয়ে চলে তাদের সংসার। পাঁচ শতক জমির ভিটেমাটি, একটি গরু তাদের একমাত্র সম্পদ।

অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও মেধার জোরে সব বাধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেলেও আবার সেই আর্থিক দুশ্চিন্তাই ঘিরে ধরেছে মেধাবী ছাত্রী রিফা’র।

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। কোথায় পাবেন অর্থ, কে দেবেন অর্থের জোগান-এ শঙ্কায় দিন কাটছে দরিদ্র পরিবারের মেধাবী এ ছাত্রীর।

জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের পূর্ব বানিয়ারকুম গ্রামের দরিদ্র কৃষক নজির আহমের মেয়ে সাদিয়া নাসরিন রিফা। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। রিফা’র বড় ভাই আলী আহমদ তাকে মেডিকেলে পড়ালেখা করার প্রয়াস নিয়ে অজপাড়া গাঁ থেকে বোনকে নিয়ে শহরে চলে যান। চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করে বোনকে মেডিকেলে পড়ার জন্য যাবতীয় খরচ চালিয়ে যান। তার ছোট ভাই একজন কোরআনে হাফেজ। বড় বোনকে বিবাহ দেয়া হয়েছে।

ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিল রিফা। সংসারে অভাব লেগে থাকলেও কখনো পিছপা হননি স্বপ্ন থেকে। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন সব অভাব ও কষ্টকে পাড়ি দিয়ে। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। প্রত্যেক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পেয়েছেন সরকারি বৃত্তিও। শিক্ষকদের সহযোগিতা, মায়ের অনুপ্রেরণা, নিজের মেধা ও শ্রমের সমন্বয়ে তার এ পর্যন্ত পথচলা। স্বপ্ন পূরণের জন্য রিফা অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করেছেন। স্বপ্ন পূরণের এতো কাছে এসেও টাকার অভাবে স্বপ্ন ভেঙে যাবে তা মেনে নিতে পারছেন না রিফা।

সাদিয়া নাসরিন রিফা’র বাবা নজির আহমদ বলেন, আমার মেয়ে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তাই এলাকার সবাই খুশি। গ্রামের মানুষ তাকে দেখতে আসছে। কিন্তু আমি তার মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনা চালিয়ে নিতে খুবই অক্ষম। টাকার অভাবে মেয়েটার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে, বুকটা ধড়ফড় করতেছে। আমার মেয়ে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করছে। কখনো একটা প্রাইভেট খরচও দিতে পারিনি। সংসার চালানো যেখানে দায়, সেখানে মেয়ের মেডিকেলে লেখাপড়ার খরচ চালানো আমার কাছে দুঃস্বপ্ন। তবে স্বপ্ন দেখি আমার মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েকে ভর্তি ও পড়াশোনা করাতে পারবো কিনা জানি না।

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া রিফা বলেন, মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর এখন খুব চিন্তা হচ্ছে। মেডিকেলের বইয়ের দাম বেশি। রাঙামাটি পড়াশুনা করতে গিয়ে সেখানে থাকা-খাওয়াসহ অনেক খরচ হবে। এত টাকা আমার হতদরিদ্র কৃষক বাবা কোথায় পাবে? কীভাবে পড়ালেখার খরচ চালাব বুঝতে পারছি না। আমার বাবার পক্ষে সেই খরচ চালানো সম্ভব না। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আকুল আবেদন জানাচ্ছি, তিনি যেন আমার লেখাপড়া চালানোর দায়িত্ব নেন। পাশাপাশি সবার সহযোগিতা পেলে পড়াশুনা সম্পন্ন করে ভালো একজন চিকিৎসক হয়ে দেশ ও দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করে যেতে চান রিফা।

তিনি আরো বলেন, স্কুল পড়া-লেখার সময় কখনো বাবার কাছ থেকে প্রাইভেট খরচ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে স্কুল শিক্ষকরা আমাকে বিনা বেতনে পড়াতেন। সবসময় ভালো পরামর্শ দিতেন। আর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার সাহস ও প্রেরণা পেয়েছি মায়ের কাছে। তাই আমি একজন মানবিক চিকিৎসক হতে চাই। গরিব মানুষের সেবা করতে চাই।

সাদিয়া নাসরিন রিফা’র মা শামসুন নাহার বলেন, ছোটবেলায় রিফা একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। তিনি আমার মেয়ের চিকিৎসা দিয়ে কোনো টাকা নেননি। তখন ডাক্তারের এই মহৎকর্ম দেখে আমাকে অনুপ্রাণিত করে। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল সম্ভব হলে আমার মেয়েকে ডাক্তার বানাবো। আল্লাহর ইচ্ছায় সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। এখন শুধু ভয় কেবল অর্থের অভাব। অর্থের অভাবে আমার মেয়ের স্বপ্ন যেন অসম্পূর্ণ না থেকে যায়। তার পড়া-লেখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

কৈয়ারবিল পূর্ব বানিয়ারকুম গ্রামের বাসিন্দা আবু ইউসুফ বলেন, আমাদের গ্রাম থেকে আগে কোন মেয়ে মেডিকেলে চান্স পাইনি।
এই গ্রাম থেকে এবার আমরা ডাক্তার পাওয়ার স্বপ্ন দেখছি। ছোট থেকে মেয়েটি অনেক কষ্ট করে পড়ালেখার করে যাচ্ছেন। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে মেয়েটি ডাক্তারি পড়া শেষ করতে পারবে।

চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু শোয়াইব জানান, রিফা দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও সে অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্রী। সে স্কুল থেকে জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ৫ নিয়ে চমকপ্রদ রেজাল্ট করেছিল। প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে রিফা’র ডাক্তারি পড়া আটকাবে না।

এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, মেধাবী ছাত্রী সাদিয়া নাসরিন রিফা’র জন্য শুভ কামনা। তার পরিবারকে সম্মান জানাই। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অবশ্যই তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে ওই ছাত্রীকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

Exit mobile version