মেডিটেশন দিবসের পুরস্কার পেল লামার দুই শিক্ষার্থী
বিশ্ব মেডিটেশন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ৫৪ জন বিজয়ীর মধ্যে চিত্রাঙ্কনে পুরস্কার পেয়েছে বান্দরবান লামার কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের দুই শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত আইডিইবি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রত্যেকে বিজয়ীকে ১০ হাজার টাকার বই পুরস্কার দিয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মাদাম নাহার আল বোখারীর সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অভিযাত্রী ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার।
গত ২১ মে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস উপলক্ষে শিশু-কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন ও আশাবাদ জাগিয়ে তুলতে মোট চারটি গ্রুপে চিত্রাঙ্কন, রচনা, অডিও-ভিডিও, আলোকচিত্র ও বাক্য লিখন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কোয়ান্টাম। প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু ছিল, ‘ভালো মানুষ ভালো দেশ স্বর্গভূমি বাংলাদেশ’।
এই প্রতিযোগিতায় দেশ ও বিদেশের নানা বয়সী নানা পেশার প্রায় দুই হাজার প্রতিযোগী অংশ নেন। তার মধ্যে বান্দরবান লামার কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর পুরস্কার পাওয়া নিঃসন্দেহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জন্যে একটি বিশেষ অর্জন।
শিক্ষার্থী দুজনের একজন হলো মানবিক বিভাগে ১০ম শ্রেণির শৈমংসাইং মার্মা। আজ থেকে ১০ বছর আগে মাত্র ৪ বছর বয়সে সূচনা শ্রেণিতে ভর্তি হতে শৈমংসাইং তার মায়ের সাথে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে এসেছিল।
শৈমংসাইং মার্মার সাথে কথা বলে জানা গেছে, বান্দরবানের থানচি উপজেলার বলিপাড়া গ্রামে শৈমংসাইং-এর পরিবারের বসবাস। বাবা মারা গেছেন তখন তার বয়স মাত্র ৩ বছর। সেসময় তার মা সন্ধান পান কোয়ান্টামের। বলিপাড়া গ্রামেরই এক শিশু এই স্কুলে পড়ত তখন (এখন সেই ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে)। সেই ভরসায় ছোট্ট শৈমংসাইংকে তার মা দিয়ে যান এই স্কুলে। ছোট থেকেই তার ছবি আঁকার প্রতি একটা আগ্রহ আছে। তাই ‘ভালো মানুষ ভালো দেশ স্বর্গভূমি বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যের উপর সে যখন ছবি এঁকেছে, সে মনে করেছে, স্বর্গভূমি বাংলাদেশ মানে মাদকমুক্ত একটি দেশ। সেগুলোই তার ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছে। তার ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে বলে, আমি একজন দেশসেরা আইনবিদ হতে চাই। নিজ সম্প্রদায়ের উন্নতি করতে চাই।
আরেক বিজয়ী শিক্ষার্থী কসমো স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির লামিয়া আক্তার। সে প্রথম শ্রেণিতে এখানে ভর্তি হয়। তার যখন বাবা মারা যান লামিয়ার তখন বয়স অনেক কম। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে লামিয়া সবচেয়ে ছোট। লামিয়ার মা পারুল আক্তার ঢাকার একটি প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। ছোট সন্তানটিকে নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন, লামিয়া এক সময় ভালো কিছু করবে। এজন্যে এই আবাসিক স্কুলে তিনি লামিয়াকে দিয়ে যান। সন্তানের ছবি আঁকার প্রতিভা শুনে এবং পুরস্কার পাওয়ায় তিনি নিজেকে গর্বিত মনে করছেন।
স্বর্গভূমি বাংলাদেশ বলতে কী বোঝে লামিয়াকে জিজ্ঞেস করাতে উত্তরে সে বলে, ‘যেখানে সব মানুষ ভালো হবে, ধ্যানী হবে এবং দাতা হবে। এই বিষয়গুলো আমি আমার ছবিতে তুলে ধরেছি।’
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে মাত্র সাত জন ম্রো জাতিগোষ্ঠীর শিশু নিয়ে যাত্রা শুরু করে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ। ২০ বছরের পরিক্রমায় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এখন এখানে আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বঞ্চিত শিশু ও এতিমদের নিয়ে এই স্কুলের রয়েছে শিক্ষা ও ক্রীড়ায় দেশসেরা সাফল্য। ঢাকায় জাতীয় শিশু-কিশোর কুচকাওয়াজে তারা প্রথম হয়েছে ২০১৫ থেকে টানা পাঁচ বছর। বুয়েট, মেডিকেল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে তারা।