parbattanews

মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় মাকে জবাই করে হত্যা

নিহত নাজমা আক্তার

ফলোআপ

মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় তার মা নাজমা আক্তারকে জবাই করে হত্যা করেছে বখাটে যুবক মো: হাসান। দীর্ঘ এক বছর ধরে নাজমা আক্তার ও কলিমউল্লাহর মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো ওই যুবক। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এঘটনায় স্বামী কলিম উল্লাহ বাদি হয়ে মোহাম্মদ হাসানসহ ৫-৬জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

গৃহবধু নাজমা আক্তার হত্যার একদিন পার হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিদের গ্রেফতারে কোন ধরণের অভিযানও চালানো হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গত এক মাসে চকরিয়ায় ১০টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ আটকের নামে গ্রেফতার বাণিজ্য, বিচার বাণিজ্য ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের সুযোগ নিয়ে উভয়পক্ষের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে ব্যস্ত থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

এদিকে নিহত নাজমা আক্তারের নামাজে জানাজা মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে অনুষ্ঠিত হয়। পরে হারবাং পুলিশ সংলগ্ন মাজার এলাকায় তাকে দাফন করা হয়েছে।

নিহত নাজমা আক্তারের দেবর মনজুর আলম জানান, তার বড় ভাই কলিম উল্লাহ রিকসা চালিয়ে সংসার চালায়। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে চট্টগ্রামে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে শাহিনা আক্তার হারবাং হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে এবারে দাখিল পাশ করেছে। তৃতীয় সন্তান শেফায়েত নবম শ্রেণিতে পড়েলেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, গত এক বছর ধরে অভিযুক্ত মোহাম্মদ হাসান (২৪) ভাতিজি শাহিনা আক্তারকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। বিভিন্ন সময় মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে বখাটে যুবক নিয়ে কু-প্রস্তাব দিতো। বখাটে মোহাম্মদ হাসান বড়ভাই কলিম উল্লাহর বাড়ির পাশ্ববর্তী খালার বাসায় নিয়মিত যাওয়া আসা করতেন। তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার সদর উপজেলায়।

স্থানীয়রা জানান, তিনমাস পূর্বে বখাটে হাসানকে নিহত নাজমা আক্তারের মেয়েকে বিয়ে দিতে তার খালা জাহেদা বেগম বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। বখাটের সাথে তার মেয়ে বিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যায় তারা।

মুলত ওই যুবক নেশাগ্রস্ত হওয়ায় বিয়েতে রাজি হয়নি নিহত নাজমা আক্তার। গত কয়েকদিন ধরে তাকে বিয়ে না দিলে তাদেরকে প্রকাশ্যে খুন করা হবে বলে হুমকি দিয়ে আসছিলো। এভাবে হুমকি দেওয়ায় একপর্যায়ে শাহিনা আক্তারকে হারবাং গোদারপাড়াস্থ দাদার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে থেকে সে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে নিহতের পুত্র শেফায়েত উল্লাহ ও তার মা নাজমা আক্তার ঘরে অবস্থান করেছিলো। এসময় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো। মোহাম্মদ হাসানের খালাতো ভাই সাইমন নিহতের বাড়িতে যান। ওইসময় সাইমন কৌশলে শেফায়েত উল্লাহকে নাস্তার কথা বলে ঘর থেকে চায়ের দোকানে যায়। এসুযোগে বখাটে হাসান ধারালো অস্ত্র দিয়ে নাজমা আক্তারকে জবাই করে পৈশাচিকভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়। পরে নিহতের পুত্র শেফায়েত উল্লাহ দোকান থেকে বাড়ি ফিরলে তার মাকে রক্ষাক্ত অবস্থায় দেখে স্ব-জোরে চিৎকার দেয়। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে নাজমা আক্তারের লাশ দেখতে পেয়ে হারবাং পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়। এঘটনায় হাসানের মামা-খালারাও জড়িত থাকতে পারে বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। ঘটনার পর থেকে তার মামা ও খালারা পলাতক রয়েছে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মেয়ের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বখাটে হাসান নাজমা আক্তারকে জবাই করে হত্যা করতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে সন্দেহভাজন হাসানকে আটক করতে পারলে হত্যা ক্লু উদঘাটন সহজ হবে বলে আশা করছি। পুলিশ সেভাবে কাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত ৮জুলাই রাত সাড়ে ৮টায় চকরিয়া উপজেলা হারবাং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মুসলিম পাড়ায় নাজমা আক্তার (৪৫) কে জবাই করে হত্যা করা হয়। নিহত নাজমা আক্তার ওই এলাকার কলিম উল্লাহর স্ত্রী।

Exit mobile version