parbattanews

মোটর সাইকেল চালকদের চাঁদাদানে বাধ্য করা ও পাহাড়ি-বাঙালি দাঙ্গা সৃষ্টি করতেই শান্তকে হত্যা করা হয়

ফলোআপ: মাটিরাঙার শান্ত হত্যা

Ramgarh 27.2.16

পার্বত্যনিউজ রিপোর্র্ট:

ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের উপজাতীয় সংগঠনের নির্ধারিত চাঁদা দিতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা উপজেলার মোটরসাইকেল চালক আজিজুল হাকিম শান্তকে হত্যা করা হয়।

পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত ধন বিকাশ ত্রিপুরা ও অন্যদুইজন মিলে শান্তকে হত্যা করে। এরপর আরেক গ্রেফতারকৃত খগেন্দ্র ত্রিপুরাকে শান্ত’র লাশ পুড়িয়ে ফেলে গুম করার জন্য ৫০০ টাকা ও মদ অফার করে। খগেন্দ্র ত্রিপুরা তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে লাশ পুড়িয়ে সরিয়ে ফেলার জন্য ঘটনাস্থলে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় স্থানীয় জনগণ ধরে ফেলে পুলিশে দেয়। পরে তার দেয়া তথ্য মতে লাশ উদ্ধার ও ধন বিকাশ ত্রিপুরাকে গ্রেফতার করে।

খগেন্দ্র ত্রিপুরার ১৬৪ ধারার জবানবন্দী ও ধন বিকাশ ত্রিপুরার রিমান্ডে পুলিশকে দেয়া তথ্যে এ সকল খবর পাওয়া গেছে বলে পার্বত্যনিউজকে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

পুলিশের মতে, এ কিলিং মিশনে অংশ নেয়া তিন খুনির মধ্যে ধন বিকাশ ত্রিপুরা একজন। অন্য দুজনকে ধরতে তারা জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।

ধন বিকাশ ত্রিপুরাসহ তিনজন মিলে আলুটিলার গহীন জঙ্গলে নিয়ে শান্তকে জবাই করে খুন করে। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের চাঁদা দিতে বাধ্য করতে ভয়ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে একটি আঞ্চলিক উপজাতীয় সংগঠনের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।

এদিকে ধৃত খগেন্দ্র ত্রিপুরা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রƒয়ারী ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক আজিজুল হাকিম শান্ত নিখোঁজ হওয়ার চারদিনে মাথায় ২১ ফেব্রুয়ারি উপজেলার আলুটিলার রিছাং ঝরণা পর্যটন এলাকা সংলগ্ন গভীর জঙ্গল থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ২১ ফেব্রুয়ারী সকালে নিখোঁজ আজিজুলে সন্ধানে নিয়োজিত তার স্বজনরা আলুটিলার রিছাং ঝরণা সংলগ্ন গহীন জঙ্গল থেকে সন্দেহজনকভাবে খগেন্দ্র ত্রিপুরাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

থানায় জিজ্ঞাসাবাদে সে লাশের সন্ধান দিলে পুলিশ তাকে সাথে নিয়ে গহীন ঐ জঙ্গল থেকে আজিজুলের লাশ উদ্ধার করে। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ধন বিকাশ ত্রিপুরা নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে গ্রেফতারকৃত খগেন্দ্র ত্রিপুরাকে দুদিন ও ধন বিকাশ ত্রিপুরাকে তিন দিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাটিরাঙ্গা থানার এসআই জিল্লুর রহমান বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে খগেন্দ্র ত্রিপুরা জানায় আজিজুল হাকিম শান্তকে খুন করার পর জনৈক তিন খুনি তাকে নগদ পাঁচশত টাকা ও মদের বিনিময়ে লাশটি গুম করার উদ্দেশ্যে গভীর খাদে ফেলা দেয়া এবং পড়ে পুড়িয়ে ফেলার প্রস্তাব দেয়। এতে সে রাজী হয়ে লাশটি গহীন জঙ্গলের ভিতর নিয়ে ফেলে রাখে।

লাশ পুড়িয়ে ফেলার জন্য সে সুযোগের অপেক্ষায় ঐ এলাকায় অবস্থান করছিল। এ অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারি সে শান্ত’র স্বজনদের হাতে ধরা পড়ে যায়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও জানান, খগেন্দ্র ত্রিপুরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। তবে অপর আসামী ধন বিকাশ ত্রিপুরা শান্ত কিলিং মিশনে অংশ নেয়া দুজনের নামধাম পুলিশকে জানালেও নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেনি।

আইও জানান, ধন বিকাশ ত্রিপুরা সুকৌশলে নিজেকে স্বাক্ষী হিসাবে উপস্থাপন করার চেস্টা করছে। তবে তার হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য প্রমান রয়েছে পুলিশের হাতে।

তিনি আরও জানান, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া অপর দুজনকে গ্রেফতার করা গেলে খুনের আদ্যপান্ত উদঘাটন করা যাবে। এ জন্য জোর তৎপরা চালানো হচ্ছে ওদের ধরতে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ধন বিকাশ ত্রিপুরা পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি বিরোধী একটি আঞ্চলিক সংগঠনের সদস্য। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে ঐ সংগঠনের সন্ত্রাসীরা চালকদের মধ্যে আতংক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে আজিজুল হাকিম শান্তকে নৃশংসভাবে খুন করে।

সূত্র জানায়, এ হত্যাকান্ড ঘটিয়ে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি বাঙ্গালিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক হানাহানি সৃষ্টিরও লক্ষ্য ছিল। এ কারণে সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে মিথ্যা ও কাল্পনিক তথ্য প্রচার করে পাহাড়িদের উসকানিও দেয়। কিন্ত প্রশাসনের ত্বরিত ভুমিকায় এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় সংগঠনটি।

Exit mobile version