যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশে মহান বিজয় দিবস উদযাপন
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে সারাদেশে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে।ঢাকার তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের অনুষ্ঠানমালার সূচনা ঘটে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রীও এই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিকাল ৩টায় গণভবনে ডাক বিভাগের স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
ময়মনসিংহ: বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তপধ্বণি করা হয়। পরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. শরীফ আহমেদ এমপি।
এরপর একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, বিভাগীয় কমিশনার খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, রেঞ্জ ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি, জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪৮ তম বিজয় দিবস পালন করা হয়। বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে শহরের ফারুকী পার্কের পাশে ৩১ বার তোপধ্বনীর মাধ্যমে দিবসটির শুভ সূচনা হয়। পরে শহীদদের বেদীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাপ্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন ও পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজয় দিবস উপলক্ষে শিশু কিশোররা শারীরিক কসরত প্রদর্শন করছে
মানিকগঞ্জ: যথাযথ মর্যাদায় মানিকগঞ্জে বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে। ভোর সাতটায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠন, বিএনপির দু গ্রুপ, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতিসহ সর্বস্তরের মানুষ।
জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস এর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীমের নেতৃত্বে পুলিশ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তোবারক হোসেন লুডু শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে পুস্প স্তবক অর্পণ করেন। এরপর জেলা শহরে বের হয় বিজয় র্যালি। র্যালিটিতে নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ অংশ নেয়।
এছাড়াও চট্টগ্রাম, নীলফামারী, পাবনা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে তোপধ্বনি করাসহ শহীদদের বেদীতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করাসহ কোথাও কোথাও দিবসটি উপলক্ষে বিজয় মিছিল ও র্যালি বের করা হয়। হিলিতেও যথাযোগ্য মযাদায় দিবসটি পালন করা হয়।
এদিকে সারাদেশের মতো পার্বত্য চট্ট্রগ্রামের তিন জেলায় যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে।
রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে মহান বিজয় দিবসে উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ, রাঙ্গাামটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছাদেক আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ছুফি উল্লাহ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ কামাল উদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য সান্তনা চাকমা, রাঙ্গামাটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার রোবার্ট রোনাল্ড পিন্ট, রাঙ্গামাটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (সদর) এর কমান্ডার মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল শুক্কুরসহ জেলা পরিষদের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা।
পরে রাঙ্গামাটির ৬ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের হাতে ৩ হাজার, ৫৬জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ১ হাজার ৫ শত এবং ৩০জন মৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ১ হাজার ৫ শত টাকা করে প্রত্যেককে সম্মাননা ভাতা ও প্রত্যেককে একটি করে শীতবস্ত্র প্রদান করেন পরিষদ চেয়ারম্যান ও অন্যান্য অতিথিরা।
এদিকে মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পমাল্য অর্পন করে মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
খাগড়াছড়ি: সূর্য উদয়ের সাথে সাথে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কোয়ার সংলগ্ন শহীদ স্মৃতি ফলকে ফুল দিয়ে প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়ন, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
পরে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন, মার্চ পাস, স্কুলের ছাত্র ছাত্রী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, বিকেলে প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন ও সন্ধ্যায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বান্দরবান : সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বান্দরবানে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো হয়। এপর সকাল ৮টায় বান্দরবান জেলা স্টেডিয়ামে পুলিশ, আনছার, স্কাউটসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে শরীর চর্চা প্রদর্শন এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মহান বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে সালাম গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো: জাকির হোসেন মজুমদার, পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবীসহ সরকারী বেসরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এ ছাড়াও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশাসন দিবসটিকে পালন করেছে।
কক্সবাজার: যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কক্নবাজারের বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, পুলিশ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠন, বিএনপিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়।