রমজানের শেষ দশকের আমল ও ফজিলত

fec-image

মোমিন বান্দার ইবাদতের বসন্তকাল রমজানের শেষ দশক চলছে। পূর্ণ রমজানের তুলনায় শেষ দশকের ভিন্ন গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।

নবীজি সা. এ সময়টাকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতেন। আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। ইতিকাফ করে লাইলাতুল কদর বা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ ও মূল্যবান রজনী অনুসন্ধান করতেন।

করোনার কারণে এবারের রমজান একটু ব্যতিক্রমভাবে কাটাতে হচ্ছে আমাদের। তবুও যে অপূর্ণতা ও আমলের ঘাটতি এত দিনে আমাদের হয়ে গেছে, তা এখন পুষিয়ে নেয়া দরকার। গাফিলতি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে এখনই আল্লাহমুখি হওয়া খুব জরুরি।

রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে কয়েকটি আমল আমাদের বিশেষভাবে করতে হবে।
১. লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান
শেষ দশকের গুরুত্ব মূলত এই লাইলাতুল কদরের কারণেই এত বেশি। তাই শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদর খুঁজতে হবে। তাছাড়া, নবীজি সা. নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল-কদর খোঁজ করো। (বুখারী শরীফ : ২০২০)

আরেক বর্ণনায় নবীজি সা. আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে লাইলাতুল কদর খোঁজ করো। (বুখারী শরীফ : ২০১৭)

এ রাতের সুসংবাদ দিয়ে নবীজি সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও সওয়াবের আশা নিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করবে, তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।

২. রাত জেগে ইবাদত করা
হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে রমজানের শেষ দশকে নবীজি সা. ইবাদতের জন্য লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে ফেলতেন। অর্থাৎ ইবাদতের জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং নিজ পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

হজরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. আরও বলেন, ‘রমজানের শেষ দশকে নবীজি সা. যত পরিশ্রম করতেন, অন্য দশকে তা করতেন না’ অর্থাৎ, তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করতেন শেষ দশকে, আর তা অবশ্যই ইবাদতের মাধ্যমে। (মুসলিম শরীফ : ১১৭৫)

দিনের বেলা একটু বেশি ঘুমিয়ে হলেও রাতে আমরা বেশি বেশি ইবাদত করতে পারি।

৩. ইতিকাফ করা
হাদিসে আছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে নবীজি সা. প্রতি বছর রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। যে বছর তাকে তুলে নেয়া হয়, ওই বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। (সহিহ বুখারি)

শবে কদরের নির্ধারিত দিন-ক্ষণ যেহেতু হাদিসে বর্ণিত নেই। তাই ইতিকাফের মাধ্যমে কদরের রাত অনুসন্ধানে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

৪. বেশি বেশি সদকা করা
যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, তাদের জাকাত আদায় করে নেয়া উচিত। এছাড়াও যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা দরকার। নবীজি সা. রমজানে অধিক পরিমাণে দান করতেন। আয়েশা রা. বলেন, রমজানে নবীজি সা.-এর দান সদকা করার ব্যাপারে উৎসাহ উদ্দীপনা অনেক বেড়ে যেত।

তিনি রমজান মাসকে শাহরুল মুয়াসাত তথা সহানুভূতির মাস বলে ঘোষণা করেছেন। তাই আমাদের গ্রাম বা স্বজনদের মধ্যে যারা অভাবগ্রস্ত আছেন, নবিজীর সা. শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। ইনশাআল্লাহ, করোনা পরিস্থিতির কারণে সওয়াব আরও বেশি হবে।

এছাড়াও কোরআন তিলাওয়াত, অধিক পরিমাণে জিকির, বেশি বেশি নফল নামাজ এবং কাকুতি মিনতি করে দোয়া করার মাধ্যমে আমরা রমজানের বাকি দিনগুলো যাপন করতে পারি।

সূত্র: নয়া দিগন্ত

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন