parbattanews

রসের আকালে পানছড়িবাসী শীতের পিঠা-পুলি থেকে বঞ্চিত

Gaci PIC 1 copy

নিজস্ব প্রতিবেদক, পানছড়ি:

শীতকাল মানেই খেজুরের রসে ভিজিয়ে মিষ্টান্ন খাবারের আসল সময়। শহর বাদ দিয়ে গ্রামাঞ্চলে যারা বাস করে শীত মৌসুমে তাদের খাবারের মাঝে অন্যতম হলো খেজুরের রসে ভেজা পিঠা-পুলি। শীত মৌসুমে বিকাল থেকেই কোমরে হাড়ি বেঁধে গাছিদের গাছে উঠে ঠক ঠক শব্দে বুঝিয়ে দিত কাল সকালেই মিলবে হাড়ি ভরা রস।

কিন্তু কালের বিবর্তনে পানছড়ির বিভিন্ন এলাকায় আজ রসের আকাল।  এক সময় দেখা যেত পানছড়ির ফসলি জমির আইল, রাস্তার পাশে, গৃহস্থ বাড়ি ও পুকুর পাড়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। গাছিরা সে সময় এত গাছ কেটে হাড়ি বসানোর সুযোগ পর্যন্ত পেত না। তারপরও সে সময় গ্রাম-গঞ্জের প্রত্যেক ঘরে ঘরে রস পৌঁছে দিয়ে রপ্তানি হতো শহরে।

ফলে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে চলত রসের পিঠা-পুলির আসর। তাছাড়া শীতকালে গাছ মালিক ও গাছিদের জন্য রস বিক্রি ছিল একটি লাভজনক ব্যবসা। কিন্তু বর্তমানে পানছড়ির ৫টি ইউনিয়নে গাছের সংখ্যা মাত্র গুটি কয়েক। তাই পাল্টে যেতে শুরু করেছে ৬/৭ বছর আগে সারি সারি গাছে গাছিদের হাড়ি বসানোর চিত্র।

পানছড়ি মোল্লাপাড়া গ্রামের বয়োবৃদ্ধ গাছি আবদুল হক জানায়, খেজুর গাছের রসের কাহিনী শুনলে মনে হবে রূপকথার গল্প। গ্রামের গৃহবধুদের বানানো রসের পিঠাপুলি ও পায়েসের মিষ্টান্ন ঘ্রাণ বহুদুর পর্যন্ত পাওয়া যেত। সে সব এখন শুধু স্মৃতি। বর্তমানে এলাকায় গাছের সংখ্যা খুব কম তাই অন্য কাজের সন্ধানে বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকি।

পানছড়ি উপজেলার শনটিলা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ জানায়, এ বছর খেজুরের রস চোখেও দেখেনি। এক সময় শনটিলা এলাকায় সারি সারি খেজুর গাছ ছিল কিন্তু বর্তমানে গুটি কয়েক থাকলেও গাছিরা আগ্রহ হারিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

উপজেলার সূতকর্ম্মাপাড়া এলাকার দূর্বাদল চাকমা জানায়, আগে তাদের প্রায় ৮/১০টি গাছ ছিল। যা থেকে পুরো শীত মৌসুম রস পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১টি গাছ তাও আবার গাছি খুঁজে না পাওয়ার কারণে এবার রসের পিঠা-পুলি খেতে পারিনি। রসের পিঠা-পুলির গল্প হয়তো ভবিষ্যত প্রজন্ম শুনতেও পাবে না বলেও তার ধারনা।

পানছড়ির লোগাং, চেংগী, সদর, লতিবান ও উল্টাছড়ির বিভিন্ন এলাকায় রসের আকালের কথা সবার মুখে মুখে। উপজেলার সকল সম্প্রদায়ের সচেতন মহলের দাবি গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় জীবিত খেজুর গাছগুলি রক্ষার পাশাপাশি নতুন করে বিপুল সংখ্যক খেজুর গাছ রোপন করলে গ্রাম-বাংলার রাস্তা-ঘাটের সৌন্দর্য যেমনি বৃদ্ধি পাবে তেমনি পানছড়িবাসী আবারও প্রাণভরে রসের পিঠা-পুলি ও মিষ্টান্নের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে।

Exit mobile version