parbattanews

রহস্যময় ডিজিটাল ব্যানারে রোহিঙ্গাদের ২১ দফা দাবি!


নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান
আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই, আমাদের অধিকার আমরা চাই, মারামারি নয়, হানাহানি নয়, খুনাখুনি নয়, অধিকার নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে চাই’। রোহিঙ্গারা আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নাকি রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোন কু-চক্রী গোষ্ঠি পরিকল্পিতভাবে ২১টি দফা দাবি সম্বলিত ডিজিটার ব্যানার লাগিয়েছে তা ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না করতেই বান্দরবান-উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গাদের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনের কর্মসুচীর অংশ হিসাবে ২১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গারা দাবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার প্রকাশ করেছে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পের ভেতরে বাইরে প্রধান সড়কের পাশে এবং দর্শনীয় স্থানে লাগানো হয়েছে এ ব্যানার।

ব্যানারে বাংলা ও ইংরেজী দুই ভাষায় ২১ দফা উল্লেখ করা হয়েছে “রোহিঙ্গা অধিকার প্রতিষ্ঠা কমিটি” নামে। তবে সোমবার কে বা কারা এ ব্যানার তৈরি করেছে বা কারা লাগিয়েছে সন্ধান পাওয়া যায়নি। সাধারণত ডিজিটাল ব্যানারে প্রেসের ঠিকানা থাকে। কিন্তু এ ব্যানারে ঠিকানা নেই। এ ব্যানার সকলের নজর কাড়লেও ব্যানার তৈরিতে কে বা কারা জড়িত তার দায়-দায়িত্ব কেউ স্বীকার করেনি।

ব্যানারে প্রথম লাইন লাল কালিতে ইংরেজী এবং ২য় লাইন কাল কালিতে বাংলা লেখা হয়েছে। ২১ দফা দাবি হচ্ছে ১. সকল রোহিঙ্গা জনগণকে বাধ্যতামুলক নাগরিক অধিকার দিতে হবে ও বার্মা সরকারের পক্ষ থেকে কোন শর্ত না দিয়ে আমাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে। ২. রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আগে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর যেগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার সম্পুর্ণ ক্ষতিপুরণ সরকারী ভাবে দিতে হবে। ৪. রোহিঙ্গাদের সকল শিক্ষার অধিকার দিতে হবে। ৫. রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরের জমি জমা কোন শর্ত ছাড়াই কাগজে-কলমে ফেরৎ দিতে হবে। ৬. রোহিঙ্গাদের পুরানো নাম আরাকান স্টেট দিতে হবে। ৭. রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে ব্যবসা বাণিজ্যের অধিকার দিতে হবে এবং ব্যবসা বাণিজ্যের মালামালের নিরাপত্তা দিতে হবে। ৮. আরাকানে রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা বিচার ব্যবস্থা করতে হবে। জজ, ম্যাজিস্ট্রেট রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে দিতে হবে। ৯. রোহিঙ্গাদের ধরে ধরে জেল হাজতে বন্দি রেখে দিনের পর দিন নির্যাতন করছে তাদের শর্তবিহীন ছেড়ে দিতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা জেলখানা আরাকানের ভেতরে স্থাপন করতে হবে। ১০. রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা সরকারী মুসলিম মন্ত্রণালয় স্থাপন করতে হবে। ১১. যেকোন এনজিও দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদেরকে আরাকানে প্রবেশ করার অধিকার দেওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব টিভি চ্যানেল পরিচালনায় কোন বাধা দিতে পারবেনা। ১২. আরাকানের জমিতে অবস্থানরত বৌদ্ধ ধর্মের লোকদের বাড়িতে যে অস্ত্র ও বোমা দেয়া হয়েছে তা সম্পুর্ণ সরকারী ভাবে ফেরৎ নিতে হবে। ১৩. রোহিঙ্গা নারী শিশু যুবকদের উপর যুগ যুগ ধরে গোপনে প্রকাশ্যে যে গণহত্যা নারী ধর্ষন করা হয়েছে তার বিচার আর্ন্তাতিক আদালতে হতে হবে। ১৪. রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি থানায় ওআইসি এবং জাতিসংর্ঘের শান্তি মিশনের ফোর্স নির্ধারিত থাকতে হবে। ১৫. রোহিঙ্গাদের মসজিদ মাদ্রাসা মক্তব তবলীগের মরকজসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্টান স্থাপন করতে দিতে হবে। ১৬. রোহিঙ্গাদের সকল প্রকার সরকারী ডিপার্টমেন্টে চাকরি দিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের অধিকার দিতে হবে। ১৭. পুরো আরাকানে ও বার্মার যে কোন স্থানে রোহিঙ্গাদের চলাফেরা করার অধিকার দিতে হবে। ১৮. রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ভিসা পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। পাসপোর্ট অফিস আরাকানের ভেতরে হতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের বিদেশ গমনাগমণের সুযোগ দিতে হবে। ১৯. কোন মামলা ছাড়া মিলেটারী পুলিশসহ যেকোন বাহিনী অনর্থক রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে চেক করার নামে ঢুকতে পারবেনা। ২০. রোহিঙ্গা আলেম ওলামাদের পাঞ্জাবী পায়জামা টুপি পরনে বাধা না দেয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় কাজে বাধা দিতে পারবেনা। ২১. গবাদিপশু হাঁস-মুরগী পালনে কোন ক্ষতিপুরণ নিতে পারবে না।

এদিকে ব্যানার নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয়দের মধ্য নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা মনে করেন, এ ধরনের কর্মকান্ড মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। এতে সীমান্ত এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ অশুভ শক্তির ইঙ্গিত বহন করে। টেকনাফ এবং উখিয়ায় ২টি নিবন্ধিত এবং একাধিক অনিবন্ধিত ক্যাম্প গত ২ যুগ ধরে চলছে।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের অতীত ইতিহাস অন্তত সীমান্ত এলাকার মানুষ ভুলে যাননি। এরা বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের উপর সশস্ত্র হামলা, ক্যাম্প অভ্যন্তরে ঢুকতে না দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা, কথায় কথায় রেশন বর্জন ও অপপ্রচার চালিয়ে আর্ন্তজাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন, পুলিশ-বিডিআরের উপর হামলা এমনকি ম্যাজিস্ট্রেটের উপর হামলা করতে মোটেও কুন্ঠাবোধ করেনি।

তাছাড়া রোহিঙ্গাদের অঘটন-অপকর্মের ফিরিস্তি অনেক লম্বা। টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, এসব ভাল লক্ষণ নয়। এই রোহিঙ্গাদের পেছনে আর্ন্তাতিক চক্র রয়েছে। মহলটি আমাদের মাতৃভুমি বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানাতে তৎপর। রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে তাদের দাবি বাস্তবায়নে বড় বড় ডিজিটাল ব্যানার প্রচার করবে আর আমাদের দেশের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরব থাকবে তা মেনে নেয়া যায় না।

Exit mobile version