রাখাইনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সরকারের সাথে একমত নয় রাজনৈতিক দলগুলো

fec-image

গৃহযুদ্ধে পর্যুদস্ত রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের কাছে জাতিসংঘ ‘করিডর’ দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একমত নয় দেশের রাজনৈতিক দলগুলো।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মনে করেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত এককভাবে নেয়া ঠিক হয়নি, বরং এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিনে নেয়া প্রয়োজন ছিল। কারণ, এর সাথে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িয়ে আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরকারের এই সিদ্ধান্তটি ব্যাপকভাবে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, এ বছরের প্রথমার্ধে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছিল জাতিসংঘ।

এ জন্য গৃহযুদ্ধে পর্যুদস্ত রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের কাছে জাতিসংঘ ‘করিডর’ দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো বলেন, এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলি রয়েছে, সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গৃহযুদ্ধের কবলে থাকা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের কাছে জাতিসংঘ ‘করিডর’ দেওয়ার অনুরোধ করেছিল।

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকারের করিডর দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত তাদের ‘একক’ সিদ্ধান্ত। তবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।

মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খাগড়াবাড়ি শেখ বাজারে গণসংযোগ কর্মসূচিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। জাতিগতভাবে সাহায্য করতেও আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এটা হতে হবে সবার সমর্থনে।

আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। আমরা যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। এখানে এসে অন্য কেউ গোলমাল করুক আমরা চাই না। একে তো রোহিঙ্গাকে নিয়ে আমরা সমস্যায় আছি। আবার মানবিক করিডোর দিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হোক এটা চাই না। সেগুলো আলোচনা করে করিডর দেওয়া উচিত ছিল।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান তাঁর ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‌’রাখাইন এর সাথে মানবিক করিডরের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এ বিষয়টি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার। কারণ, এর সাথে অনেক নিরাপত্তা বিষয় জড়িত থাকতে পারে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপি’র যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ তার ফেসবুকের এক পোস্টে লিখেছেন, “বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে রাখাইন স্টেটে ‘হিউম্যানিটারিয়ান করিডোর’ অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কার্যকর আলোচনা প্রয়োজন ছিল।

অন্তর্বতীকালীন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তামূলক নীতি গ্রহণে অবশ্যই ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে কোন সরকারেরই আন্তর্জাতিক ইস্যু ডিল করার ক্ষেত্রে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়।

প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ অথবা জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলে এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতে হবে। আলোচনা ব্যতিত এ ধরনের সিদ্ধান্তে অন্তর্বতীকালীন সরকারের ইনটেগ্রিটি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।”

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন