রাখাইন রাজ্যের মংডুতে রাতভর গোলাগুলি, একদিনে ৫০০ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

fec-image

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। এ সংঘর্ষকে ঘিরে সীমান্ত দিয়ে একদিনেই ৫০০ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ করেছে।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে গোলার বিকট শব্দ শোনা যায়। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত গোলাগুলি চলছিল। এতে নতুন করে সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে দেখা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

টেকনাফে ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এখন পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাই যেকোনো সময় তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটতে পারে। কিন্তু যারা এপারে আসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের এখানে না আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক বলেন, ওপারে গোলাগুলির শব্দে রাতভর নির্ঘুম কেটেছে। শনিবার সারা রাত গোলাগুলি চলছে ওপারে। তাই আমরা রাত জেগে বসেছিলাম। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভয়ে ছিল।

সীমান্তের বাসিন্দা ইমান শরীফ বলেন, ‘রাতভর মংডুতে তুমুল যুদ্ধে আমরা সীমান্তের মানুষ ঘুমাতে পারেনি। অনেকের ঘরের বাইরে রাত কেটেছে। একটু পরপরই বিকট গুলির শব্দে সীমান্ত কেঁপে ওঠে। ভয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ি। রাতের মতো এমন গুলির শব্দ আগে কখনও শুনেনি। এ পরিস্থিতিতে যেকোনো মুহূর্তে সীমান্তে আবারও অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।

এদিকে মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছে। শনিবার একদিনেই বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়েছে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা।

টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত নভেম্বর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাত তীব্র হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে।

চলমান সংঘাতের মধ্যে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, নাফনদী পার হয়ে ফের বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন রোহিঙ্গারা। পরে তারা চলে যাচ্ছেন উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে।

এছাড়া মিয়ানমারের মংডু মগনিপাড়া,সিকদারপাড়া ও আইরপাড়া এলাকায় অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়রা বলছেন, গত এক মাসে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।

টেকনাফে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার মাইন উদ্দিন বলেন, কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছে। তাঁদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে আশ্রয়শিবিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদী থেকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন