রাঙামাটিতে উৎযাপিত হচ্ছে প্রবারণা পূর্ণিমা
দেশে সুখ, শান্তি, মঙ্গল প্রার্থনা ও পরস্পর ক্ষমা প্রদর্শনের মধ্যদিয়ে সারাদেশের ন্যায় রাঙামাটি বৌদ্ধ বিহারগুলোতে প্রবারণা পূর্ণিমা পালিত হচ্ছে।
বুধবার (২০অক্টোবর) সকাল থেকে বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধমুর্তিদান, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কারদান, পিন্ডদানসহ নানাবিধ দানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে ঐদিন সকাল থেকে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের ভক্তি শ্রদ্ধায় ও পূজার মধ্যদিয়ে মুখর হয়ে উঠেছে রাজবন বিহার। প্রবারণা উৎসবকে ঘিরে পুরো রাজবন বিহার আলোক সজ্জিত করা হয়।
এছাড়াও বিশ্ব শান্তি তথা দেশে মঙ্গল কামনায় পাঁচ মিনিট ভাবনা (নিরবতা) পালন করেন পুণ্যার্থীরা।অতীতের সমস্ত ভুল, অপরাধ, গলদ ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক নারী-পুরুষ বিভক্ত হয়ে অধিস্থান করা হয় প্রবারণা পূর্ণিমায়।
আয়োজিত ধর্মীয় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান।বিশেষ বক্তব্য রাখেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী।
পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন, ৬নং বালুখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয়গিরি চাকমা। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ানসহ গন্যামন্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শত শত ধর্মপ্রাণ নর-নারী অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে পুণ্যার্থীদের উদ্দেশ্য বনভান্তের উদ্ধৃতি দিয়ে, একে-অপরের প্রতি হিংসায় লিপ্ত না হয়ে সৎ চিন্তা ও সৎ কুশলকর্ম সম্পাদন পূর্বক নিজেকে আত্মসংযম রেখে ভগবান বুদ্ধের নিয়ম-নীতি পালনের আহবান জানিয়েছেন রাঙামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ ও আবাসিক প্রধান ভদন্ত শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এসময় আরো ধর্মদেশনা প্রদান করেন, রাজবন বিহারের সিনিয়র ভিক্ষু ভদন্ত জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির।
প্রবারণার পরিসমাপ্তির মধ্যদিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে পার্বত্য তিন জেলাতে শুরু হচ্ছে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব। তবে এবছরে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হলেও রাজবন বিহারে বেইন বুনা হবে না বলে জানিয়েছেন রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটি।
প্রবারণা অনুষ্ঠান বৌদ্ধদের অন্যতম একটি ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। প্রবারণা শব্দের পালি আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অনুরোধ, নিষেধ, ত্যাগ বা সমাপ্তি। যা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাসের পরিসমাপ্তি, বর্ষাবাস ত্যাগ, প্রায়শ্চিত্তকে বুঝায়। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিনমাস বর্ষাবাস শেষে তাদের অজান্তে ভুল- ক্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য একে অপর ভিক্ষুদের নিকট প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও প্রবারণাকে আত্ম অন্বেষণ ও আত্ম সমর্পনের তিথি বলা যায়। আবার এই দিনে পূর্ণাঙ্গ অভিধর্ম দেশনা সমাপ্ত হওয়ায় এই দিবসকে অভিধর্ম দিবসও বলা হয়।