রাঙামাটিতে বেপরোয়া টেন্ডারবাজি: পিডিবির ৭ গ্রুপ টেন্ডারে আ’লীগ-বিএনপি ভাগাভাগি

Rangamati PDB pic,1

স্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি:
রাঙামাটিতে চলছে বেপরোয়া টেন্ডারবাজি। ক্ষমতাসীন দলীয় একটি চক্রের নিয়ন্ত্রণহীন টেন্ডারবাজি রীতিমতো অশান্তি সৃষ্টি করেছে শহরে। অতিষ্ঠ করে তুলেছে সাধারণ ঠিকাদারসহ শহরবাসীকে। এতে জিম্মি সরকারের সংশ্লিষ্ট টেন্ডার আহবানকারী কর্তৃপক্ষগুলো।

টেন্ডারবাজি নিয়ে শহরে একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটলেও নির্বিকার সরকারের প্রশাসন। ফলে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে টেন্ডারবাজ চক্র। এতে বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। নীরব দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া কারও কিছুই করার ক্ষমতা বা সাহস নেই। এবার টেন্ডারে ভাগ বসিয়েছে বিএনপিও। বৃহস্পতিবার পিডিবির ৭ গ্র“প টেন্ডারের কাজ ভাগাভাগি করে নিল বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা।

সোমবার পিডিবির ৫ গ্রুপের টেন্ডার জমা নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয়ের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। ঘটনার পর সমঝোতার জন্য দফায় দফায় বৈঠক বসে সংক্ষুব্দ নেতাকর্মীদের নিয়ে। এতে টেন্ডারে ভাগ বসায় বিএনপির নেতাকর্মীরাও। শেষে বুধবার আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমঝোতা করে পিডিবির ৭ গ্রুপের টেন্ডারের কাজ ভাগাভাগি করে। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে দুই গ্রুপ কাজ দিয়ে বাকি ৫ গ্রুপ ভাঘাভাগি করে নিজেরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে ভাগাভাগির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ এমরান রোকন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ আলমসহ নিয়ন্ত্রণকারী অন্য নেতারা। এটি প্রায় ৭৭ লাখ টাকার টেন্ডার।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রক্যেশলী (বিভাগ-১) অতিক্রম চাকমা ৭ গ্রুপ কাজের পুন:দরপত্র বিজ্ঞপ্তি আহবান করেন গত ২২ এপ্রিল। দরপত্র গ্রহণ করা হয় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত।

টেন্ডারের ৭ গ্রুপ কাজ হল পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প, বিউবো রাঙামাটির অধীন বান্দরবান সদর উপজেলাধীন চাউপাড়া ও আশেপাশের এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণের কাজ, একই জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলাধীন কচ্ছপতলী, রেংছড়ি কান্তার, টেম্পুপাড়া, বাঘমারা, মনজয়পাড়া ও আশেপাশের এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণের কাজ, একই জেলার লামা উপজেলাধীন গজালিয়া, আজিজনগর মোহাম্মদপুর, গাইন্নাপাড়া, বড়বুনু, হেডম্যানপাড়া, বাইশফাঁড়ি, বটতলীপাড়া, ত্রিপুরাপাড়া, মেরাখোলা ও আশেপাশে এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণের কাজ, রাঙামাটি সদর উপজেলাধীন বাইজ্যাতলী হেডম্যানপাড়া, ভাঙামুড়া, দোসরীপাড়া রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে ও আশেপাশে এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণের কাজ, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন বঙ্গলতলী হেডম্যান বাড়ি হতে বটতলী, করেঙ্গাতলীমুখ, দাঙ্গাছড়া ও আশেপাশের এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণের কাজ, লংগদু উপজেলাধীন আটারকছড়া প্রশান্ত অরণ্যকুটির ও আশেপাশে এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণের কাজ এবং বান্দরবান সদর উপজেলাধীন চকোরিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতাধীন গুইন্যাকাটা, ক্যাম্প বাজারপাড়া, মগবাজার, মুসলিমপাড়া, দশ মাইল ও আশেপাশের এলাকায় ১১ কেভি ও এলটি লাইন নির্মাণের কাজ।
এসব কাজের মধ্যে আওয়ামী লীগ পাঁচটি এবং বিএনপি দুইটি ভাগাভাগি করে বৃহস্পতিবার সিডিউল জমা দেয়া হয়। ওই সময় কেউ যাতে টেন্ডার জমা দিতে না পারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীরা মিলে টেন্ডারবাক্সে পাহারা বসায়।

তবে এ ব্যাপারে ফোনে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ আলম বিষয়টি এড়িয়ে বলেন, তিনি পিডিবির ঠিকাদার নন। কাজেই এসব ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, তিনি টেন্ডারে জড়িত নন। বৃহস্পতিবার টেন্ডার জমা নিয়ে তার কিছুই জানা নেই। তবে সকালের দিকে বাসায় অবস্থানকালে পিডিবি অফিস এলাকায় লোকজনের ভিড় দেখেছিলেন।

এদিকে টেন্ডারে ৭ গ্রুপ কাজের মোট ৫৩ সিডিউল বিক্রি হলেও জমা পড়েছে কেবল ১৮টি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রক্যেশলী (বিভাগ-১) অতিক্রম চাকমা জানান, শান্তিপূর্ণভাবে দরপত্র গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশি সহায়তা নেয়া হয়েছে। দরপত্র গ্রহণকালে পুলিশি টহল জোরদার ছিল।

কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মাসুদ বলেন, আগের অপ্রীতিকর ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি ঘটতে না পারে সেজন্য দরপত্র গ্রহণকালে পিডিবি অফিস এলাকায় পুলিশের বিশেষ টিম অবস্থানে ছিল।

গত সোমবার ২৫ লাখ টাকার পাঁচ গ্রুপ কাজের টেন্ডার গ্রহণকালে সিডিউল জমাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তার আগে গত ৩০ এপ্রিল ৭ গ্রুপ কাজের টেন্ডার গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সেসব দরপত্র আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে সমঝোতা করে ভাগবাটোয়ারা করে নেয় ঠিকাদার সিন্ডিকেটটি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন