parbattanews

রাঙামাটির লংগদুতে ৪২ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ও অবৈধ বসতি স্হাপন

রোহিঙ্গা রাঙামাটিতে

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

পার্বত্য রাংগামাটি জেলার লংগদু উপজেলার বগাচত্তর এবং গুলশাখালীতে ৭ রোহিঙ্গা পরিবারের ৪২ জন সদস্যের অবৈধ বসতি স্হাপনের খবর পাওয়া গেছে । অনুসন্ধানে জানা যায়, আরাকানের পকতু এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা মহেশখালীর ধলঘাটায় কিছুদিন পালিয়ে অবস্হান করার পর কৌশলে পার্বত্য জেলা রাংগামাটির লংগদুতে অনুপ্রবেশ করে ।
 
সরেজমিনে ঘটনাস্হলে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায় । এসময় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ৪২ রোহিঙ্গার দলপতি মো. হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি প্রথমে নিজেদের রোহিঙ্গা পরিচয় দিতে অস্বীকার করেন । এসময় তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র অছে কিনা জানতে চাইলে পরক্ষণেই তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে আরাকানের পকতু এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মগরা তাদের বাড়ি ঘর জালিয়ে দেয় এবং অসংখ্য রোহিঙ্গা নর নারী ও শিশুদের হত্যা করে । এ সময় তারা জীবন বাচানোর তাগিদে ইঞ্জিন চালিতে বোটে করে নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে । বাংলাদেশে তাদের জন্য নির্ধারিত আশ্রয় কেন্দ্র টেকনাফের নয়াপাড়া কিংবা উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পে না গিয়ে সরাসরি মহেশখালীর ধলঘাটা ও চকরিয়া চলে আসে এবং কিছুদিন পালিয়ে বসবাস করে । এরপর দীর্ঘদিন যাবত রাংগামাটির কাট্টলী বিলে ভূয়া পরিচয়ে জেলে সেজে মাছ দরার কাজে নিয়োজিত অপর এক রোহিঙ্গার সহায়তায় তারা রাংগামাটির কাট্টলী বিলে চলে আসে । কাট্টলী বাজারের সংকীর্ণ স্হানে বসবাসের সুবিধাজনক স্হান না পাওয়ায় তারা লংগদু উপজেলার বাঙালী অধ্যুষিত এলাকা বগাচতর এবং গুলশাখালীতে প্রবেশ করে এবং স্হায়ীভাবে বসবাস করার উদ্দেশ্য তারা ইতোমধ্যই উক্ত এলাকায় কিছু পরিমাণ জমি ক্রয় করে অবৈধ বসতি স্হাপন করার চেষ্টা করছে ।
 
জানা গেছে, সিদ্দীক মাস্টার নামে স্হানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের কাছে ৪০ শতক জমি বিক্রয় করে । বর্তমানে রোহিঙ্গারা তাদের ক্রয়কৃত ঐ জমিতেই ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে । এমন কি বেশ কিছু রোহিঙ্গা শিশুকে নিকটস্হ প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ভর্তিও করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করা গেছে।
 
এ ব্যাপারে গুলশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রহিম বলেন, বিষয়টা আমি জানতাম না। পরে শুনেছি, আমাদের এলাকার সিদ্দিক মাস্টার নামে এক ব্যাক্তি কাঠাপ্রতি ২৫ হাজার টাকা দাম নিয়ে ৮ কাঠা জমি বিক্রয় করেছে। জানার পর কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নানা ব্যস্ততায় আমি সময় পাইনি। এখন ডেকে জিজ্ঞাসা করবো।
 
স্থানীয় জমি বিক্রেতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক মাস্টার টেলিফোনে পার্বত্যনিউজকে বলেন, তারা আমার কাজে জমি ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি তাদের কাছে চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট দেখতে চাই। তারা আমাকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এক চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট এনে দেখায়। কাজেই তারা রোহিঙ্গা বলে আমি জানি না। বাঁশখালী থানার কোন ইউনিয়ন পরিষদের সার্টিফিকেট দেখিয়েছে জানতে চাইলে সিদ্দিক মাস্টার পার্বত্যনিউজকে বলেন, সেটা এই মুহুর্তে আমার মনে নেই। আমি কাগজ দেখে আপনাকে পরে জানাবো।
 
স্থানীয় বাঙালীদের দাবী, জনসংখ্যার সুষম বিন্যাস হিসাবে যদি বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক এখানে এসে বসবাস করতো আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু ঘনসবতিপূর্ণ এই দেশে বিদেশী নাগরিকদের বসতি গড়তে দেয়ার মতো জায়গা নেই। একবার এই সুযোগ পেলে দলে দলে ওরা এই অঞ্চলে এসে জমা হবে। খোঁজ নিলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে এভাবে বিপুল রোহিঙ্গার বসতি স্থাপনের খবর চাওয়া যাবে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের অন্যান্য রেকর্ড বিশ্লেষণ করে স্থানীয় প্রশাসনকে মানবিক দিক ও বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনা করে একটি  সিদ্ধান্ত নিতে হবে।  
 
 
Exit mobile version