parbattanews

রাজধানীতে পাহাড়ী স্বাদ জুমঘর

মেহেদী হাসান পলাশ:

এনজিও কর্মকর্তা  শাহনাজ পারভিন অফিসের কাজে খাগড়াছড়ি গিয়েছিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখেছেন। খেয়েছেন স্থানীয় নানা পদের রান্না। এর মধ্যে ব্যম্বু চিকেন ও পাঁজনের স্বাদ তার জিভে লেগে আছে। ব্যম্বু চিকেন রান্নার পদ্ধতি ভিডিও করে এনে পরিবারের সকলকে দেখিয়েছেন। সবার আগ্রহ দেখে শাহনাজের আফসোস, যদি কিছুটা নিয়ে আসা যেতো!

শাহনাজের মতো এমন আফসোস নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফেরেন অনেক পর্যটকই। তবে তাদের এই আফসোসের দিন শেষ। শুধু তিন পার্বত্য জেলা নয়, পাহাড়ী ঐতিহ্যবাহী স্বাদে এখন রসনা তৃপ্ত করতে পারবেন রাজধানী ঢাকাবাসীও। সে লক্ষ্যেই রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়াতে গড়ে উঠেছে পাহাড়ী রেস্টুরেন্ট জুমঘর।

এখানে এসে শুধু রসনা তৃপ্ত করতে পারবেন তাইই নয়, বাড়িতে পাহাড়ী রান্নার জন্য এখানে পাবেন নানা পাহাড়ী শাক সবজী, ফলমুল, মশলা ও মাছ মাংস। প্রতিদিন পাহাড় থেকে নিয়ে আসা টাকটা শাক সবজী, ফলমূল, মাছ, রান্না খাবার ইত্যাদি আপনি শুধু জুম ঘরে এসে ক্রয় করতে পারবেন তা নয়, প্রয়োজনে ঘরে বসে অনলাইনে/মোবাইলে অর্ডার করলে হোম সার্ভিস দেয়ারও সুযোগ রয়েছে এখানে। সমতলের পর্যটকদের পাশাপাশি রাজধানীতে বসবাসকারী বিপুল পাহাড়ী জনগোষ্ঠীও এই রেস্টুরেন্টের মূল ক্রেতা।

এ লক্ষ্যে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার-দাবার নিয়ে ঢাকা মিরপুর কাজীপাড়াতে সম্প্রতি চালু হয়েছে জুমঘর নামক হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট। গত ১২ মার্চ এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে। মূলত এই রেস্টুরেন্টটি ঢাকায় অবস্থিত পাহাড়ী ব্যাচেলরদের টার্গেট করে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু রেস্টুরেন্ট নয়। এখানে তিন পার্বত্য জেলা থেকে ফরমালিনমুক্ত বাজারও সরবরাহ করা হচ্ছে। রয়েছে আলাদা সবজি বাজারও।

জুমঘর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে যেসব খাবার পাওয়া যাবে

চিকেন: ব্যাম্বো চিকেন, চিকেন সালাদ, চিকেন ফ্রাই, ব্যাম্বো শুট চিকেন, ঝাল চিকেন ও চিকেন ঝুরি (দেশী ও বয়লার) অর্ডার অনুযায়ী।

পিঠা: বিনি চাউলের বড়া পিঠা ( অথেন্টিক ), ঝাল বড়া পিঠা, কলা পিঠা, নারকেল পিঠা, বিনি পিঠা (পাহাড়ের পোলাও চাউল দিয়ে বানানো হয়)।

হেবাং: দেশী মুরগির হেবাং, ছুটকি মাছ হেবাং(লত্তি, হাংয়র, ছুরি, চিংড়ি ইত্যাদি ছুটকি)। হাঁসের হেবাং, গরু মাংসের হেবাং, তাজা ছোট-ছোট খালের মাছ-চিংড়ির হেবাং ইত্যাদি। (কলা পাতা এবং বাঁশ দিয়ে বানানো হয়; চাহিদা অনুযায়ী)।

সালাদঃ ঝাল মরিচের সালাদ, গুদিয়ে, মিক্স মরিচের সালাদ, পাহাড়ের জুম্মো মরিচের সালাদ(চাহিদা অনুযায়ী)।

সবজি: স্পেশাল ‘পাজন’, মুলো শাক, ঢেঁকি শাক, নারেজ শাক, তিতা শাক, নাপ্পি দিয়ে বেগুন, নাপ্পি দিয়ে মরিচ সালাদ ইত্যাদি। (চাহিদা অনুযায়ী)।

ভুনাঃ কাঁকড়া ভুনা, দেশী মুরগি ভুনা, তরতাজা চিংড়ি মাছের ভুনা, হাংগর ছুটকি ভুনা, গরু মাংসের ভুনা, মুরগির কলিজা ভুনা, খাসির কলিজা ভুনা ইত্যাদি। (চাহিদা অনুযায়ী)।

পানীয় খাবার

মালটা জুস, লেমন জুস, তরমুজের জুস, বেলের শরবত, কমলা জুস, আনারস জুস, চা-কফি ইত্যাদি।

জুম ঘর’ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট বিভিন্ন ধরণের ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ের খাবারের অনলাইনে বা টেলিফোনে অর্ডার নেয় ও হোম সার্ভিস দিয়ে থাকে।

‘জুমঘর’ বাজারের সেবাসমূহের মধ্যে আরো রয়েছে

রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলা থেকে সম্পূর্ণ ফরমালিনমুক্ত পাহাড়ের শাক-সব্জি, মাছ,মাংস ও ফলমূল সরবরাহ করা।

শাক-সবজিঃ বাঁশকড়োল, কচু, শিম, বেগুন, করলা, কলমী, পুঁইশাক, গাজর, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, ওলকপি, লাউ, ডুমুর, মিষ্টিমুমড়া, ঢেঁড়স, গোলআলু, মিষ্টি আলু, মুলা, ঝিঙে, লালশাক ইত্যাদি।

ফলঃ পাকা কলা,পাকা পেপে, আনারস, লেবু, কাঠাল, আখ, কমলালেবু, মালটা ইত্যাদি।

মাছ ও শুটকিঃ চিংড় শুটকি, হাঙর শুটকি, লইট্যা শুটকি ইত্যাদি।

মাংসঃ দেশী মুরগি, শুকরের মাংস ইত্যাদি। অত্যন্ত সুলভ মুল্যে এগুলো ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করা হয়।

‘জুমঘর’ এ তিন জন উদ্যোক্তা রয়েছে। রেস্টুরেন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছেন লক্ষ্ণী চাকমা ও বিটন চাকমা। এবং জুমঘর কাঁচা বাজারের দায়িত্বে রয়েছেন মিটুন চাকমা।

জুমঘরের অন্যতম উদ্যোক্তা বিটন চাকমা ও লক্ষ্ণী চাকমা জানান, আমাদের জুমঘর রেস্টুরেন্টের মূল উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরের বসবাসরত পাহাড়ীদের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষদের কাছে ফরমালিনমুক্ত বাজার সরবরাহ ও ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি করা। পাহাড়ের সব শ্রেণীর মানুষ যাতে ঢাকাতে বসে ন্যায্য দামে খাবার খেতে পারে সেকারণে আমরা জুমঘর রেস্টুরেন্টটি খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলাম।

লক্ষ্ণী চাকমা জানান, আমাদের রেস্টুরেন্টটি খোলার অল্প দিনের মধ্যে বেশ সাড়া পাচ্ছি। বিশেষ করে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাচেলররা আমাদের থেকে খাবার সংগ্রহ করছেন। খাবারের দাম ও অন্যান্য পাহাড়ী রেস্টুরেন্টের চেয়ে তুলনামূলক কম। পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙ্গালিরাও এখানে খাবার খেতে ও বাজার নিতে আসে।

বিটন চাকমা জানান, খাবারের দাম ব্যাচেলরদের অনূকুলে থাকার কারণে জুমঘর থেকে পছন্দ অনুযায়ী তারা খাবার সংগ্রহ করছেন। মাসিক ৩৫০০ টাকা চুক্তিতে দুই বেলা পেটপুরে এখানে খেতে পারবেন পাহাড়ী খাবার। খাবারের মান, পরিমাণ ও বৈচিত্র থাকবে মাসিক মেন্যুতে।

তিনি আরো বলেন, ঢাকাতে মোট পাহাড়িদের জুমঘরসহ ৩ টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে আমাদের জুমঘর রেস্টুরেন্টটি মধ্যবিত্ত ও ব্যাচেলরদের জন্য পারফেক্ট।এখানে ৯০ ভাগ পাহাড়ীরা খেতে আসে।

ঠিকানা: জুমঘর, ৫৬২ বেগম রোকেয়া স্মরণী, কাজী পাড়া।

Exit mobile version