রাজবন বিহারে ৪৬তম কঠিন চীবর দানের প্রস্তুতি

fec-image

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বর ৪৬তম কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সভাকক্ষে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্বে করেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা। এ সময় রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার মোঃ ইসলাম উদ্দিন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী ক্য হ্লা খই, পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরুনেন্দু ত্রিপুরা, কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক রনি, রাঙ্গামাটি সেনাবাহিনী ২০ বীর সেনানিবাসের সার্জেন্ট মোঃ আলাউদ্দিন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারি পরিচালক রতন কুমার নাথসহ বিদ্যুৎ বিতরণ এবং গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বিগত বছরের কার্যবিবরণী পর্যালোচনা এবং উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পর কঠিন চীবর দানোৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে গৃহীত প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সম্পর্কে সভায় উপস্থাপন করা হয়।

বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বৃহৎ এ উৎসব কঠিন চীবর দান সুস্থ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এবং আগত পূর্ণার্থীদের সুবিধার্থে আইনশৃংখলা বাহিনীকে সড়ক ও নৌ পথের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রয়োজন অনুযায়ী টহল ব্যবস্থা গ্রহণ ও মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেক করা, যানজট নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ট্রাফিক মোতায়েন, সমগ্র এলাকায় আইনশৃংখলা রক্ষার স্বার্থে পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, স্বাস্থ্য বিভাগকে মেডিকেল টিম ও এম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা, সুষ্ঠভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা, পানি সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, সেনিটারী লেট্রিনসমূহের দ্বারা পরিবেশ দূষণ এর বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য উপস্থিত সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের প্রধানকে বিহার পরিচালনা কমিটিকে সহযোগিতা প্রদানের জন্য রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা অনুরোধ জানান।

বৃহৎ এ ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি সুস্থ ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য রাঙ্গামাটির রাজ বনবিহার পরিচালনা কমিটিকে পরিষদ হতে ৩লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান ও বেইন ঘরে যাওয়ার রাস্তাটি সংষ্কার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন পরিষদ চেয়ারম্যান।

অনুষ্ঠানমালায় আগামী ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় বেইন কর্মীদের পঞ্চশীল গ্রহণ, ৩টা ১মিনিটে বেইন ঘর উদ্বোধন, ৩টা ১১মিনিটে চর্কায় সুতা কাটা উদ্বোধন, বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে সুতা লাগানো শুরু, সন্ধ্যা ৬টা ১মিনিটে সুতা সিদ্ধ ও রং করা শুরু, ৭টা ১মিনিটে সুতা টিয়ানো শুরু, রাত ৮টায় সুতা শুকানো শুরু, ৮টা ৩০মিনিটে সুতা তুম ও নীল ভরা শুরু এবং রাত ১০টা ১মিনিট থেকে ৮ নভেম্বর শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বেইন টানা ও বেইন বুনা হবে।

আগামী ৮ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৬টায় বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, ৬টা ১মিনিট থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত চীবর সেলাই, সকাল ৬টা ১০মিনিটে পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, সকাল ৯টায় পরম পূজ্য বনভন্তের প্রতিচ্ছবিসহ পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের মঞ্চে আগমন ও আসন গ্রহণ, ৯টা ১০মিনিটে ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন, ৯টা ২০মিনিটে পঞ্চশীল গ্রহণসহ বুদ্ধমুর্তি দান, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, ১১টায় ভিক্ষুসংঘকে পিন্ডদান, দুপুর ১২টা ৩০মিনিটে শোভাযাত্রা সহকারে কঠিন চীবর ও কল্পতরু মঞ্চে আনয়ন, বেলা ২টায় অতিথিবৃন্দের অনুষ্ঠান মঞ্চে আসন গ্রহণ, ২টা ২০মিনিটে পূজনীয় ভিক্ষুসংঘ মঞ্চে আগমন ও আসন গ্রহণ, ২টা ২৫মিনিটে ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন, ২টা ৩০মিনিটে পঞ্চশীল গ্রহণ, ২টা ৫০মিনিটে কঠিন চীবর উৎসর্গ ও দান, বিকাল ৩টায় বিশ্বশান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা, ৩টা ১০মিনিটে বনবিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের স্বাগত বক্তব্য, ৩টা ২০মিনিটে অতিথিবৃন্দ ও প্রধান পৃষ্টপোষক (চাকমা রাজা)’র বক্তব্য, ৩টা ৪০মিনিটে পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের ধর্মদেশনা, বিকাল ৪টায় পরম পূজ্য শ্রাবকবুদ্ধ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তের ধর্মদেশনা (ক্যাসেট হতে) ও সন্ধ্যা ৬টায় প্রদীপ পূজা প্রজ্জলন অনুষ্ঠিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কঠিন চীবর, বৌদ্ধ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন