দুই দিনব্যাপী শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত 

রাজস্থলীতে ১৭ দিনেও খোঁজ মেলেনি অপহৃত ছাত্রলীগ নেতার

fec-image

রাঙামাটির রাজস্থলীতে অপহরণের শিকার উপজেলা ছাত্রলীগের আইনবিয়ষক সম্পাদক সালাউদ্দিনকে উদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠছে পুরো উপজেলা। গত ৪ ডিসেম্বর উপজেলাধীন ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের আমতলি পাড়ায় এই অপহরণের ঘটনা ঘটে।

ইতোমধ্যেই সালাউদ্দিনকে উদ্ধারের দাবিতে গত মঙ্গলবার ও আজ বুধবার দুইদিন রাঙামাটি-বান্দরবান-রাজস্থলীর তিনটি সড়কে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয়রা।

সচেতন নাগরিক পরিষদের ব্যানারে একের পর এক কর্মসূচি ও আল্টিমেটাম দেওয়ার পরেও ছাত্রনেতা সালাউদ্দিনকে সন্ত্রাসীরা মুক্তি না দেওয়ায় সালাউদ্দিনকে উদ্ধারে প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ করছেন আন্দোলনকারীরা।

এদিকে, আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজপথে পিকেটিংয়ে অংশ নিয়েছেন ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিকদলগুলোর নেতৃবৃন্দ।

৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমা জানিয়েছেন, আমরা সালাউদ্দিনকে উদ্ধারের জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছি। অপহরণের পর থেকেই তার সন্ধানে আমরা বিভিন্নভাবে খোঁজ করছি। এখনো পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাইনি।

অপহৃত সালাউদ্দিনের ভাই রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফোরকান হোসেন মুন্না জানিয়েছেন, আমার ভাইকে উদ্ধারে প্রশাসনের ব্যর্থতা অবশ্যই রয়েছে। এখনো পর্যন্ত আমার ভাইয়ের ব্যাপারে আমাকে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য তারা দিতে পারেনি। যেকোনো উপায়ে আমার ছোট ভাইয়ে আমরা ফেরত চাই।

এদিকে এই অপহরণের ঘটনায় স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়ীরাও আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। বাঙ্গালহালিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পুলক চৌধুরী জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জেএসএসের সন্ত্রাসীদের কাছে আমরা কেউই নিরাপদ নয়। সালাউদ্দিনকে অপহরণের কিছুদিন আগেও একজন গরু ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে গেছে পরে তার লাশটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নয়ন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত পাহাড়ে বেছে বেছে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যা, খুন, গুমসহ অপহরণ করে ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের অস্ত্রধারীরা।

বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি মেম্বার মংউ চিং মারমা জানিয়েছেন, সালাউদ্দিনকে যদি সন্ত্রাসীরা ফিরিয়ে না দেয় তাহলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি পালন করবো আমরা। ইতিমধেই সংগঠনের নেতাকর্মীদের সকলকে রাজপথে সালাউদ্দিনের মুক্তির আন্দোলনে নামার নির্দেশনা দিয়েছি।

ছাত্রনেতা সালাউদ্দিনকে উদ্ধারের দাবিতে গঠিত বাঙ্গালহালিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক মিলন জানিয়েছেন, সন্তু লারমার জেএসএসের সন্ত্রাসীদের হাতেই অপহরণের শিকার হয়েছে।

তিনি জানান, জেএসএস সন্ত্রাসীদের অব্যাহত চাঁদাবাজি, অপহরণসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসী তৎপরতায় স্থানীয় সর্বস্তরের জনসাধারণ চরম নির্যাতনময় পরিবেশে বাস করছে। তাই বাধ্য হয়েই সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সচেতন নাগরিক কমিটি গঠন করে ছাত্রনেতা সালাউদ্দিনকে উদ্ধারের আন্দোলনে নেমেছি। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচির দিকে ধাবিত হবো।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অংসুই চিং মারমা বিজয় জানিয়েছেন, আমরা দলীয় হাই-কমান্ডকে বিষয়টি জানিয়েছি। জেলা ছাত্রলীগ থেকে নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক পদক্ষেপ নিবো।

তিনি জানান, নিখোঁজ সালাউদ্দিনের পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমরা তার খোঁজে সম্ভাব্য সকল প্রকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে, ছাত্রনেতা সালাউদ্দিনকে উদ্ধারে সম্ভাব্য সকল প্রকার তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, রাজস্থলী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাকির হোসেন।

তিনি জানান, আমরা প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা বাহিনীকে সাথে নিয়ে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছি। সকল প্রকার প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে আমরা আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি।

উল্লেখ্য, নিখোঁজ সালাউদ্দিন রাজস্থলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত মজিবুর রহমানের ছেলে এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফোরকান হোসেন মুন্নার ছোট ভাই। গত ৪ ডিসেম্বর রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন আমতলী পাড়া নামক এলাকা থেকে সালাউদ্দিন নিখোঁজ হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক কমিটির ব্যানারে দুইদিন শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অপহৃত, ছাত্রলীগ, রাজস্থলী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন