parbattanews

রাজারবাগীদের অবৈধ আস্তানা উচ্ছেদের দাবিতে কক্সবাজারে মানববন্ধন

কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর বড়ছড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী স্কুল ও মসজিদ দখল করে গড়ে তোলা ‘ভন্ড’ ও মামলাবাজ রাজারবাগী পীরের আস্তানা উচ্ছেদ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে দরিয়ানগর গ্রামবাসী।

রোববার (২৪ অক্টোবর) সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে দরিয়ানগর বড়ছড়ার সর্বস্তরের জনগণের সমাবেশে বলা হয়, গত এক যুগের বেশি সময় ধরে দরিয়ানগরবাসী ‘ধর্মকে বিকৃতকারী, উগ্রবাদী, মামলাবাজ, ভূমিদস্যু, সমাজে  গুজব তৈরির মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী, ধর্মীয় অনুভুমিতে আঘাত দানকারী রাজারবাগী পীরের গ্রুপের হাতে জিম্মি।

৯০ এর দশকে এই গ্রামে কয়েকশত পরিবারকে পূনবার্সন এবং একটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পর এখানে বসতি শুরু হয়। পরবর্তীতে এখানে মসজিদ মক্তব, স্কুল, বনবিভাগের পিকনিক স্পট, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র ও অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বর্তমানে এই গ্রামে স্থায়ী ও অস্থায়ী অধিবাসী মিলে প্রায় ৩ হাজার মানুষ বসবাস করে। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই অশিক্ষিত ও জেলে, দিনমজুর, শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। তবে জেলা সদরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ উচ্চশিক্ষিত লোকজনও এই গ্রামে বাস করে। তবে এখানে শিক্ষিত লোকজনের মুখ খোলার সুযোগ নেই।

২০০৭ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের পীরের’ তকমা লাগিয়ে রাজারবাগী মোল্লারা এখানকার ঐতিহ্যবাহী ‘ঝাউবন প্রাথমিক বিদ্যা নিকেতন’ স্কুল এক একর জমিসহ দখল করে ‘মাদ্রাসার’ নামে আস্তানা গড়ে তুলে। তবে এখানে স্থানীয় কোন শিশুকে ভর্তি করানো হয় না। বর্তমানে এখানে মাত্র ৬ জন কথিত শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা অন্য এলাকার ছেলে।

সমাবেশে আরো বলা হয়, রাজারবাগীরা দরিয়ানগরে আস্তানা গাড়ার পর এক একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত গ্রামের জামে মসজিদটিও দখল করে নিজেদের নামে নামকরণ করে। এছাড়া সম্প্রতি দরিয়ানগর বড়ছড়া খালের গতিপথ পরিবর্তন করে তারা প্রায় কোটি টাকার সরকারি ভূমি জবর দখল করে রেখেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাজারবাগীরা এই গ্রামের স্কুল ও মসজিদ দখল করে নেওয়ার পর থেকে এই গ্রামের শিক্ষিত সমাজ তাদের মূল্য হারিয়েছে এবং কথা বলার অধিকার হারিয়েছে। রাজারবাগী মোল্লারা যাই বলে পীরের মুরীদরা তাই করে। জবর দখল করে রাখা গ্রামের মসজিদে তারা প্রতিদিনই কোরআন সুন্নাহ বিরোধী, মনগড়া, ধর্মীয় সহিষ্ঞতাবিরোধী ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে যাচ্ছে। যে কারণে দেশের ঐতিহ্যবাহী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হুমকীর মুখে পড়েছে। তারা গ্রামবাসীকে দলে উপদলে বিভক্ত করে মানুষের মাঝে হিংসার বীজ পুঁতে দিচ্ছে। গ্রামের মসজিদে রাজারবাগীরা ছাড়া অন্যদেরকে নামাজ পড়তে দেয়া হয় না। ফলে এলাকার অধিকাংশ মুসল্লী তাদের বিরোধী হওয়ায় গ্রামের বাইরের মসজিদে অথবা ঘরে নামাজ পড়তে বাধ্য হয়।

রাজারবাগীরা তাদের বেতনধারী সন্ত্রাসী প্রকৃতির কিছু মুরীদ দিয়ে পুরো গ্রামবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে। রাজারবাগী মোল্লা সিলেটের বাসিন্দা ফারুক নেপথ্যে এই গ্রামকে নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজারবাগী মোল্লা ব্যতীত কাউকে দিয়ে এখানে ওয়াজ মাহফিল, বিয়ে পড়ানো, দাওয়াত কিংবা জানাযা পড়ানো যায় না। ওরা বলে, রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমান (লা.আ) একজন আওলাদে রাসুল, তিনি এ যুগের শ্রেষ্ঠ মোজাদ্দিদ, গউসুল আযম তাকে মানতেই হবে।

বছরের পর বছর ধরে তারা এই ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালালেও তাদের মামলাবাজির ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি। কেউ সাহস করে মুখ খুললেই তার রক্ষা নেই।

এলাকাবাসী বলেন, সাহস করে মুখ খোলার কারণেই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেনকে দেশের বিভিন্ন থানায় ৪টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে রাজারবাগী চক্র। সেসব মামলায় তিনি দীর্ঘদিন বিনাবিচারে কারাভোগও করেছেন। এছাড়া রাজারবাগীরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেও নিরীহ মানুষকে মামলার আসামী করে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।

সাংবাদিক ও গবেষক আহমদ গিয়াসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে এলাকাবাসীর দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সামাজিক সংগঠন ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ ও ‘কক্সবাজার সোসাইটি’ ও ‘কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলন’সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বক্তব্য রাখেন- কক্সবাজার সোসাইটি’র সভাপতি কমরেড গিয়াসউদ্দিন, ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’র সাধারণ সম্পাদক নাজিমউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মহসীন শেখ, ‘কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলন’ সমন্বয়ক এইচএম নজরুল ইসলাম, বায়তুন নুর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ফরিদুল আলম, বায়তুল মা’মুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আনোয়ার সাকী, কলাতলীর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ মিঠু, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ইসমাইল, সমাজকর্মী লায়লা বেগম, দরিয়ানগর যুব সমাজের সভাপতি মাহবুব আলম, যুবনেতা মোশাররফ হোসেন পারভেজ এবং এলাকার ভূক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন ও তার কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপী প্রমূখ।

তারা গত এক যুগের বেশি সময় ধরে চলা রাজারবাগীদের মামলাবাজি, জমিদখল ও হামলাসহ নির্যাতনের নানা কাহিনী তুলে ধরেন। এসময় দর্শকদের অনেকেই নিজেদের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।

মানববন্ধন শেষে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে এলাকাবাসী। মানববন্ধন ও সমাবেশে স্থানীয় সহস্রাধিক গ্রামবাসী ছাড়াও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Exit mobile version