parbattanews

রামগড়ে একই রাতে ২ বাড়িতে ডাকাতি; আহত ৪

রামগড় পৌরসভার পাশাপশি দুই এলাকা পূর্ব চৌধুরিপাড়া ও কালাডেবায় রোববার গভীর রাতে দুটি বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। একই এলাকায় আরেকটি বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়েছে। ডাকাতরা দুটি বাড়ি থেকে নগদ এক লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ও প্রায় ৫ ভরি ওজনের স্বার্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে। ডাকাতদের দা’র কোপে একই পরিবারের চারজন আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও ডাকাতির শিকার পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার দিনগত রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে পূর্ব চৌধুরিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মফিজুর রহমানের বাড়িতে হানা দেয় ডাকাত দল। তারা ঘরের টিনের বেড়া খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় গৃহকর্তার দুই ছেলে বেলাল হোসেন (৩০) ও ইমাম হোসেন (১৭) ঘুম থেকে জেগে ডাকাতদের দেখে চিৎকার শুরু করলে পাশের রুম থেকে বাবা ও মা ছুটে আসে। এ সময় গৃহকর্তা মফিজ ও বড় ছেলে বেলাল একজন ডাকাতকে ঝাঁপটে ধরে ফেললে অন্যরা এসে ধারালো দা, লোহার রড ইত্যাদি দিয়ে ঘরের সবাইকে এলোপাতারিভাবে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে ডাকাতরা টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়।

পরে তাদের আর্ত চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ডাকাতদের দা’র কোপে আহত মফিজুর রহমান (৫০),  স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৪৮), ছেলে বেলাল হোসেন (৩০) ও ইমাম হোসেন (১৭) কে রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থা গৃহকর্তা মফিজুর রহমানকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, তার অবস্থা আশংকাজনক। রামগড় পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ শাহ জাহান কাজী রিপন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মফিজকে দেখতে যান। আহত বেলাল জানান, ডাকাতরা সংখ্যায় ৬ জন ছিল। গামছা দিয়ে সবার মুখ বাধা ছিল। ডাকাতরা ঘরে ঢুকেই বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়।

তিনি বলেন, কদিন আগে তারা এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় দুটি গরু বিক্রি করেন। ডাকাতরা সবগুলো টাকাই নিয়ে গেছে। এক ডাকাতকে ধরে ফেলার পর অন্যরা এসে দা ও লোহার রড দিয়ে তাদের ওপর এলোপাথারি আঘাত করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এ সময় তিনি এক ডাকাতের হাতে ও ঘাড়ে প্রচন্ড কামড় দিয়ে জখম করেন। ডাকাতরা সবাই বৈদ্য টিলা এলাকার দিকে পালিয়ে যায়।

তার ধারণা, গরু বিক্রির টাকার খবর পেয়েই তারা ডাকাতি করতে আসে। মুখ বাধার কারণে কাউকে চিরতে না পারলেও তার সন্দেহ ডাকাতরা আশেপাশের এলাকার লোক। এদিকে, একই রাতে পূর্ব চৌধুরিপাড়ার অদূরে কালাডেবায় সিরাজ কোম্পানির বাড়িতেও ডাকাতি হয়। গৃহকত্রী রহিমা বেগম (৪৫) জানান, শনিবার রাতে তারা কেউই ঘরে ছিলেন না। ডাকাতরা ঘরের দরজার ছিটকিনি ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে। তারা একাধিক রুমের আলমিরা, শোকেস, অয়্যারড্রপের তালা ভেঙ্গে কোরবানির গরু কেনার জন্য ছেলেদের পাঠানো ৩৫ হাজার টাকা, প্রায় ৫ ভরি স্বর্ণালংকার, জমিজমার দলিলপত্র প্রভৃতি লুটে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, বাড়িতে তিনি ও তার এক পুত্রবধূ থাকেন। চার ছেলের মধ্যে ২ জন প্রবাসি এবং অন্য দুজন চট্টগ্রামে থাকে। শনিবার সকালে তিনি তার এক মেয়ের বাসায় এবং সন্ধ্যায় ছেলের বউ বাড়ির পাশের তার আরেক মেয়ের বাড়িতে গিয়ে রাত্রি যাপন করে।

পুত্রবধূ রবিবার সকালে বাড়িতে এসে দেখেন লুটপাট করে সব নিয়ে গেছে। ঘরের প্রতিটি কক্ষেই ডাকাতরা সমস্ত জিনিসপত্র তছনছ করে। জানা যায়, সিরাজ কোম্পানির বাড়ি হতে কয়েক গজ দূরের নুরুল আমিন মেম্বারের বাড়িতেই হানা দেয় ডাকাতরা। কিন্তু ঘরের দরজা ভাঙ্গতে না পেরে তারা ব্যর্থ হয়।

গৃহকর্তা নুরুল আমিন মেম্বার জানান, ডাকাতরা দরজা ভাঙ্গার চেস্টা করলে তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। এ সময় ডাকাতরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বললে গৃহকর্তা জানালা খুলে তাদের দেখে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করেন। পরে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।

এদিকে, ডাকাতির খবর পেয়ে রতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) তারেক মো: আব্দুল হান্নান জানান, ডাকাতদের ধরতে রাত থেকেই পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।

Exit mobile version