রামগড়ে চাঁদার জন্য কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিসহ ২ জন অপহৃত

খাগড়াছড়ির রামগড়ে চাঁদার জন্য ফেনীর একটি প্লাস্টিক ডোর (দরজার) কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ও এক কমর্চারিকে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ’র প্রসীত গ্রুপকে দায়ি করা হয়েছে এ ঘটনার জন্য। সোমবার সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে রামগড় থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, রবিবার ফেনী থেকে খাগড়াছড়ি উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা জুয়েল ট্রেডার্সের প্লাস্টিক দরজাবাহী পিকআপ রামগড়ের যৌথ খামার এলাকায় পৌঁছলে সন্ত্রাসীরা গাড়িটি আটক করে। তারা প্রথমে চালকের কাছে চাঁদা পরিশোধের টোকেন চায়। কিন্তু চালক টোকেন দেখাতে না পারায় সন্ত্রাসীরা অস্ত্রেরমুখে গাড়িটি প্রধান সড়ক থেকে দাঁতারামপাড়া রাস্তা হয়ে ভিতরে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে গাড়িতে থাকা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি মঞ্জুরুল আলম(৩৫) ও কর্মচারি মো. রাজু(২৮)কে ২টি মোটরসাইকেলে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এসময় তারা গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে চালক মিজানকে ছেড়ে দেয়।
চালক মিজান বলেন, খাগড়াছড়ি সদরের এসএস ট্রেডার্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্ডারের ৩০টি প্লাস্টিক ডোর ডেলিভারি দিতে তারা যাচ্ছিলেন। রামগড়-জালিয়াপাড়া সড়কের য়ৌথ খামার অতিক্রম করার সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে ৪ জন উপজাতি সন্ত্রাসী পিকআপের সামনে এসে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে তার গাড়িটি আটকায়। চাঁদার টোকেন নাই বলার সাথে সাথে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রেরমুখে রাস্তা থেকে প্রায় ৩- ৪শ গজ দূরে একটি জঙ্গল এলাকায় গাড়িসহ তাদের সবাইকে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ইউপিডিএফের প্রসীত গ্রুপের ঐ সন্ত্রাসীরা তাকে জানায়, জুয়েল ট্রেডার্সের মালিকের কাছে চাঁদার ২০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। গত ৩-৪ মাস আগে চাঁদার এ বকেয়া টাকা চাইলে কোম্পানির মালিক তাদেরকে গালিগালাজ করে। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়।
তিনি বলেন, তারা কোম্পানির মালিককে কল করে চাঁদার বকেয়া টাকা পাঠাতে বলে। এ টাকা ছাড়া কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না বলেও তারা সাফ জানিয়ে দেয়। এ সময় কোম্পানির মালিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রামগড় থানার পুলিশের এক কর্মকর্তা ঐ সন্ত্রাসীদের লিডারকে মোবাইল ফোনে গাড়ি ও লোকজনদের ছেড়ে দিতে বলায় তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি মঞ্জুরুল আলম ও ফিটিংস মিস্ত্রি রাজুকে ২টি মোটরসাইকেলে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এসময় তারা গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে(চালক) চলে যেতে বলে। তিনি আরও জানান, রবিবার রাত পর্যন্ত অপহরণকারীদের সাথে মালিকের ফোনে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু আজ(সোমবার) সকাল হতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
এদিকে রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, রবিবার অপহরণের এ ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজেই প্রয়োজনীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরে বিজিবিও আসে। অপহৃতদের উদ্ধারে তারা যৌথভাবে পুরো এলাকায় তল্লাসী অভিযান চালিয়েও কোন হদিস পাননি।
ওসি বলেন, চাঁদার টাকা নিয়ে ঝামেলার কারণেই কোম্পানির ওই দুই লোককে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করেছে। তিনি জানান, অপহরণকারীরা ইউপিডিএফের প্রসীতখীসা গ্রুপের সদস্য। তিনি জানান, এ বাপারে সোমবার গাড়ির চালক মিজানুর রহমান বাদি হয়ে রামগড় থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে, অপহৃতদের উদ্ধারের জোর দাবি জানিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের রামগড় উপজেলা শাখা। সংগঠনের সমন্বয়ক এম ইউনুছের প্রেরীত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপহৃতদের উদ্ধার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি হাতে নিতে বাধ্য হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।