parbattanews

রামগড়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের ঘটনা নিয়ে স্বার্থাণ্বেষী মহলের জঘন্য অপপ্রচার

নিজস্ব সংবাদদাতা, রামগড়:
খাগড়াছড়ির রামগড়ের সোনাইআগা নামক এলাকায় শুক্রবার রাতে একদল সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের ঘটনাকে নিয়ে একটি স্বার্থাণ্বেষী মহল জঘন্য মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। ঐ মহলটি সোনাইআগা গ্রামে পাহাড়িদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য প্রচার করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তারা শুক্রবার রাত থেকেই এসব মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। আজ শনিবার সকালে সোনাইআগা প্রাইমারী স্কুল মাঠে পাহাড়ি বাঙালি গ্রামবাসীদের অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মিথ্যা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, একদল পাহাড়ি সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন থেকে এলাকার ব্যবসায়ি, কৃষক সবার কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে। তাদের অত্যাচারে গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। কালাডেবা এলাকার বাসিন্দা ও পৌরসভার কাউন্সিলর কাজী আবুল বসর জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কালাডেবা সংলগ্ন স্লুইস গেট এলাকায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা ৩-৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষন করে। গুলির শব্দে কালাডেবা বাজারের লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা সোনাইআগা এলাকায় ঢুকে পড়ে।

খবর পেয়ে বিজিবি ও পুলিশও ঐ এলাকায় ছুটে যায়। পরে পাহাড়ি ও বাঙালি গ্রামবাসীরা সন্মিলিতভাবে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করলে তারা সোনাইআগা গ্রাম ছেড়ে পার্শ¦বর্তী দুর্গম এলাকায় পালিয়ে যায়। রাতে হঠাৎ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শতাধিক গ্রামবাসী ক্ষুব্দ হয়ে প্রতিরোধে এগিয়ে এলে সোনাইআগা গ্রামের পাহাড়িদের মধ্যে আতংক দেখা দেয়। এ ঘটনাকে নিয়ে শুক্রবার রাতেই পাহাড়িদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নি সংযোগের মিথ্যা , বানোয়াট ও কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে অপপ্রচার শুরু করে। কেউ কেউ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবিকে নিয়েও জঘন্য মিথ্যা প্রচারণা চালায়।

সোনাইআগা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার ক্যাওরী মারমা বলেন, পাহাড়ি বাঙালি সবাই মিলেই সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করা হয়েছে। এখানে কেউ কোন পাহাড়ির বাড়িঘরে হামলা করেনি। সোনাইআগার বয়োবৃদ্ধ বাসিন্দা ক্যায়ংপ্রু মারমা বলেন, সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করতে বাঙালিদের সাথে আমার ছেলে এবং ভাতিজাও যায়। তিনি সোনাইআগা এলাকার পাহাড়ি বাঙালি বাসিন্দারদের নিরাপত্তার জন্য একটি বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের দাবী জানান।

এদিকে শনিবার সকালে সোনাইআগা প্রাইমারি স্কুল মাঠে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি গ্রামবাসীরা এক বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সন্মিলিতভাবে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলার ব্যাপারে সকলে মতামত ব্যক্ত করেন।

রামগড় থানা অফিসার ইনচার্জ মো. শরিফুল ইসলাম জানান, বাঙালিরা সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিলে সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে কোথাও কোন হামলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এলাকায় পুলিশ-বিজিবির টহল রয়েছে। এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত।

এ দিকে, শনিবার বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পাহাড়ি ও বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন সমাবেশে যোগ দেন। ৪৩, বিজিবির উপ অধিনায়ক মেজর হুমায়ুন কবীর, রামগড় সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. ফরহাদ,ওসি শরিফুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাদের,পৌর কাউন্সিলর আহসান উল্ল্যাহ, আওয়ামীলীগ নেতা, বিশ্বত্রিপুরা, মো, কামাল, দেবু শর্মা, লিটন দাশ, মো. শিপন পৌর কাউন্সিলর কাজী বসর ও স্থানীয় সাংবাদিকসহ এলাকাবাসী শান্তি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও পাহাড়ি বাঙালি নেতৃবৃন্দ বলেন, গুজবের মাধ্যমে এলাকার শান্তি সম্প্রীতি নস্ট হয়, হিংসা হানাহানি মত বড় ধরণের ঘটনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে সোনাইআগার ঘটনা নিয়ে জঘন্য মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য অপপ্রচার করে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি অপচেস্টা চালায় স্বার্থাণ্বেষী গোষ্ঠী। এসব অপপ্রচারকারী ও গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনকে অবহিত করার আহবান জানানো হয় বৈঠকে।

বক্তারা শান্তি সমাবেশে বলেন, কোন ধরনের গুজবে কান না দিয়ে পাহাড়ি-বাঙ্গালি সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করতে হবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা চলবে না, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হবে। সন্ত্রাসীদের কোন দলীয় পরিচয় নেই, এরা সকলের শক্র।

Exit mobile version