রামুতে দুই ভাইকে এসিড নিক্ষেপ, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

fec-image

কক্সবাজারের রামুতে টিপু বড়ুযা ( ৩৪) ও দিপক বড়ুয়া (৩৩) নামের দুই ভাইকে এসিড নিক্ষেপের ঘটনার প্রতিবাদে এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়াসহ জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এসএসসি ২০০৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিকাল তিনটার দিকে রামু চৌমুহনী স্টেশনে এ প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসুচিতে রামু প্রেসক্লাব, রামু উপজেলা ছাত্রলীগ, রামু চৌমুহনী বনিক সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সংহতি প্রকাশ করেন।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়ার শাস্তির দাবি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। অন্যতায় বৃহত্তর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেওয়া হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত মঙ্গলবার ( ২৫ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ঘরে ফেরার পথে রামুর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী স্টেশনের ভিক্টর প্লাজার সামনে পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়াসহ আরও কয়েকজন অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত সিএনজি অটো রিকশার ওপর থেকে টিপু বড়ুয়া ও দিপক বড়ুয়াকে এসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এতে এ দুইজনে পুরো শরীর ঝলসে যায়। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

শুধু তাই নয়, এ ঘটনার প্রায় একমাস আগে রাতে বাড়ি ফেরার পথে একইভাবে এ দুই যুবককে ছুরিকাঘাত ও ক্ষুর দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে পালিয়ে যায়।

বক্তাদের দাবি- নিখিল বড়ুয়া নামের এক পুলিশ কনস্টেবল এ এসিড সন্ত্রাসের মূল হোতা। নিখিল বর্তমানে চট্টগ্রাম সিআইডিতে কর্মরত থাকলেও ছুটিতে এসে এলাকায় এ ধরনের জঘন্য অপরাধ সংঘঠিত করেছে।

এসএসসি ২০০৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রামু ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো। এ সময় অন্যাদের মধ্যে রামু প্রেস ক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, জেলা যুবলীগ নেতা পলক বড়ুয়া আপ্পু, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিপুল বড়ুয়া আব্বু, ইউপি সদস্য ও রামু বনিক সমিতির নেতা আজিজুল হক আজিজ, ব্যবসায়ী মো. সেলিম, এসিড সন্ত্রাসের শিকার টিপু বড়ুয়া মা প্রকৃতা বড়ুৃযা প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও এসএসসি ২০০৫ ব্যাচের সদস্য জিৎময় বড়ুয়া।

এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ৭২ ঘণ্টা পার হলেও এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। দুই দুইবার টিপু ও দিপক বড়ুয়া’র উপর হামলা হলেও এখনো কোন অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করা লজ্জাজনকও। সমাবেশে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয় এই সমাবেশে।

এসিড সন্ত্রাসের শিকার টিপু বড়ুয়া রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দ্বীপ শ্রীকুল গ্রামের নিরধন বড়ুয়া আর দিপক একই গ্রামের শুভধন বড়ুয়ার ছেলে। তারা সম্পর্কে চাচাতো জেঠাতো ভাই। আর অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়া তাদের ভগ্নিপতি।

পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটাচ্ছে এ কথা জানিয়ে এসিড সন্ত্রাসের শিকার ভুক্তভোগী টিপু বড়ুয়া মুঠোফোনে জানান, নিখিল তার ছোট বোনের জামাই। তার বোনকে বিয়ে করার কয়েক বছর পর ২০১৯ সালে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে তাকে বিয়ে করে ফেলে ।

বিয়ের পর তার বোনকে বাদী বানিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হলে ,পরে ওই মেয়েকে ডিভোর্স দেয় নিখিল। কিন্তু এর মধ্যে সে আমার ভাই, ভাইপো,চাচাসহ পরিবারের অনেক জড়িয়ে মিথ্যা মামলা করে। এ অবস্থায় আমার বোনকে ম্যানেজ করে তার বিরুদ্ধ করা মামলাটি আপোষ করে ফেলে। এরপর থেকে নিখিল আমাকে হত্যার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এক মাসের মধ্যে দুইবার হামলা চালায়। সর্বশেষ আমরা দুই ভাইকে এসিড নিক্ষেপ করে।

রামু প্রেসক্লাবের সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া মানববন্ধনে বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি, পারিবারিক কলহের জের ধরে পুলিশের কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়া এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগে ছুরিকাঘাতের ঘটনার নেপথ্যেও আছে নিখিল। যতদূর জেনেছি, নিখিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ( সিআইসি) চট্টগ্রামে কনস্টেবল হিসাবে কর্মরত আছেন। পুলিশ সদস্য হয়ে এসিড সন্ত্রাসের মত অপরাধে জড়ানোর বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

সভাপতির বক্তব্যে ফতেখাঁকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ভুট্টো বলেন, ‘অপরাধী পুলিশ সদস্য হোক বা অন্য কেউ হোক, অপরাধীরা দেশ ও সমাজের শত্রু। তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে।

তিনি বলেন, ‘রামুতে এসিড সন্ত্রাসের মত ঘটনা কোন দিন ঘটেনি। এটি শান্ত রামুকে কলঙ্কিত করেছে। আশা করছি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়া’র বিরুদ্ধে আরও একাধিক প্রতারণা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ করেন টিপু বড়ুয়া’র পরিবার। টিপু বড়ুয়া’র চাচা বিমল বড়ুয়া জানান, কনস্টেবল হয়েও এএসআই পরিচয়ে আইডি কার্ড নিয়ে চাঁদাবাজি, আসল পিতা রাজারকুল গ্রামের সীতানাথ বড়ুয়া হলেও পিতার নাম বদলে প্রদীপ বড়ুয়া বলে ভুয়া পরিচয়ে পুলিশের চাকরি নেওয়া, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এক মেয়েকে বিয়েসহ একাধিক অভিযোগ থাকলেও নিলিখ বড়ুয়া এখনো বেপরোয়া হয়ে নানান হুমকি ধমকি দিচ্ছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়া’র সাথে মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসিড হামলার ঘটনায় আমি জড়িত নয়। তাছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে ও অন্যান্য অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

এসিড হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী বলেন, তাদের পরিবার অভিযোগ দিয়েছে। সন্ধায় তাদের আবার আসতে বলেছি, মামলা হবে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে কর্তৃপক্ষের আদেশের কথাও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন