parbattanews

রামুতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু, ২ সহস্রাধিক বসতবাড়ি পানিবন্দি

কক্সবাজারের রামুতে কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে দুই সহস্রাধিক বসত বাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মৌলভীপাড়ায় বন্যার পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে ২ বছর বয়সী শিশু সামিয়া।

সোমবার (৭ আগস্ট) বিকাল ৫টার দিকে ওই এলাকার সৌদী প্রবাসী মৌলভী ওবাইদুল হকের শিশু কন্যা বর্ষণের ফলে জমে থাকা পানিতে ডুবে প্রাণ হারান। শিশুটির মা উম্মে হাবিবা জানান, শিশু সামিয়া বাড়ির ভেতরে খেলা করছিলো। এক পর্যায়ে বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়া বাড়ির উঠানে শিশুটি পড়ে গিয়ে প্রাণ হারায়।

এদিকে কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণে রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ২ হাজারের বেশি বসতবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধস, দেয়াল ধস, গাছপালা পড়ে একাধিক বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এবং প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে এলাকার জনসাধারণকে বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যা, জলাবদ্ধতা ও পাহাড় ধস থেকে জানমাল রক্ষায় সচেতন করা হচ্ছে। বর্ষণের ফলে কৃষকদের সদস্য রোপণ করা বিপুল রোপা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে শত শত কৃষক চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

টানা বর্ষণের ফলে রামুতে বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রামুতে কর্মরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রেস রিডার রুহুল আমিন জানান, বাঁকখালী নদীতে পানির বিপদ সীমার চিহ্ন ৫ দশমিক ২৮ মিটার, কিন্তু সোমবার সন্ধ্যা থেকে পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে ৫ দশমিক ৬৮ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছিলো।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম জানিয়েছেন, ইউনিয়নের ৫ শতাধিক বসতবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া অসংখ্য বসতঘর ও মাছের খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের মনিরঝিল, বৈলতলা, চরপাড়া, গাছুয়াপাড়া, ডিককুল, ডেপারকুল, লামারপাড়াসহ আরও কয়েকটি গ্রাম পানিতে একাকার হয়ে গেছে। কয়েকটি বাড়ি থেকে পানিবন্দি অবস্থায় লোকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ের উপরে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে ও সতর্ক থাকতে মাইকিং করা হয়েছে।

চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার জানিয়েছেন, কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে ইউনিয়নের ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে নতুন চরপাড়া, ফুয়ারচর, নাসিরাপাড়া, পূর্ব মোহাম্মদ পুরা, উত্তর চাকমারকুল, পশ্চিম চাকমারকুল, আলী হোসেন সিকদারপাড়ার একাংশ, জালাইলতলীসহ বিভিন্নস্থানে লোকজন পানিবন্দি হয়ে মানবেতর সময় পার করছে। জারাইলতলী এলাকায় গাছ পড়ে একটি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে দুর্গত লোকজনকে উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া মাইকিং করে লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে।

দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রীনা জানিয়েছেন, অতি বর্ষণের ফলে ইউনিয়নের ৫টিরও বেশি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে ২ শতাধিক বসতবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাহাড় ধস ও বন্যার ক্ষয়ক্ষতি রোধে জনসাধারণকে সজাগ থাকার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।

এছাড়াও রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, ফতেখাঁরকুল, রশিদনগর, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নে বর্ষণের কারণে শত শত বসতবাড়ি পানিবন্দি থাকার খবর পাওয়া গেছে।
অপরদিকে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর পাড়া ও গোদারপাড়া নামক স্থানে দুটি প্রভাবশালী চক্র মৎস্য চাষের উদ্দেশ্যে স্লুইস গেইটে পানি আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। একারণে ওইসব এলাকায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে।

এব্যাপারে জানার জন্য সোমবার রাতে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এদিকে সোমবার রাতে এ রিপোর্ট লেখাকালীন প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিলো। ফলে বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্চিলো। একারণে রামুতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়া সোমবার রামুর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ছিলো খুবই কম।

এদিকে দুর্গত অনেক এলাকার লোকজন অভিযোগ করেছেন, প্রবল বর্ষণে মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়লেও উপজেলা প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোন তৎপরতা তাঁরা দেখেননি।

Exit mobile version