parbattanews

রামুতে ফসলি জমির টপ সয়েল বিক্রির হিড়িক

 image_47007

নিজস্ব প্রতিনিধি, রামু, কক্সবাজার :

কক্সবাজারের রামুতে উর্বর কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) বেচা-বিক্রির ধুম পড়েছে। প্রতিদিন শত শত মিনি ট্রাকে বিভিন্ন ইটভাটায় এসব মাটি পাচার হচ্ছে। মাটি কাটা অব্যাহত থাকায় কৃষি জমি বড় বড় গর্তে পরিণত হচ্ছে। ফসলী জমির মাটি কাটার কারণে ধীরে ধীরে জমিগুলো উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলছে। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে বলে আশংকা করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারা।

ইট ভাটার মালিক ও সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে নিয়মনীতি না মেনে এসব আবাদি জমির টপ সয়েল (উর্বর মাটি) দিনমজুর এবং এক্সেভেটর দিয়ে কেটে দেদারছে নিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোয়া, লম্বরীপাড়া, খোন্দকার পাড়া, সিপাহি পাড়া, মংলাউনের বিল, খেনছর ঘোনা, বাইপাস এলাকা, উত্তর ফতেখাঁরকুল, চাকমারকুল ইউনিয়নের কলঘর বাজারের আশপাশ, শাহামদের পাড়া, জারাইলতলী, ফুঁয়ার চর, দক্ষিণ চাকমারকুল, তেচ্ছিপুল, মোহাম্মদপুরা, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লট, উখিয়ার ঘোনা, লামার পাড়া, গনিয়া কাটা, স্কুলের পাহাড় এলাকা, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর মিঠাছড়ী, চা বাগান, ঘোনার পাড়া, ইলিশিয়া পাড়া ও রশিদনগর ইউনিয়নের মাছুয়া খালী, ধলির ছড়া, মামুন মিয়ার বাজারের আশপাশ, রাজারকুল ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া পাড়া এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষি জমিতে মাটি কাটা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদীর দু’তীরেও সমানতালে চলছে মাটিকাটা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব এলাকার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পাশাপাশি, শীতকালে নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার সুযোগে নদীর তীর এবং চরের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি কাটায় নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, এসব মাটি দিয়ে ইটভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। জমির মালিকরা প্রতি এক হাজার ঘনফুটে আট-দশ হাজার টাকা পাচ্ছেন। রামু কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এককানি (৪০ শতক) কৃষি জমি চাষাবাদে প্রায় ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার দরকার হলেও নির্বিচারে মাটি কাটার ফলে ওই জমিতে দ্বিগুণ সার দিতে হয়। অন্যদিকে জমিতে স্বাভাবিক ফলন উৎপাদন কম হয়। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এসব জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পরিত্যাক্ত হয়ে পড়বে।

রামু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জমির মালিকরা মোটা অঙ্কের টাকার লোভে ক্ষতিকর এ কাজ করছেন। তারা বুঝতে পারছেন না যে, ভবিষ্যতে এ জমি পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া জমির হারানো পুষ্টি ফিরে পেতেও পনেরো থেকে বিশ বছর সময় লাগবে। জমির উপরিভাগের চার-ছয় ইঞ্চি মাটিতেই মূলত বেশি পুষ্টি থাকে, যা ফসল উৎপাদনে সহায়ক। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন জানান, পরিবেশ আইন ও ভূমি নীতিমালা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Exit mobile version