রামুতে যুবককে হত্যা করে ডাকাতদলের গরু লুট

fec-image

কক্সবাজারের রামুতে থানার পাশ্ববর্তী গ্রামে যুবককে হত্যা করে ২টি গরু লুট করেছে ডাকাতদল। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের অফিসেরচর চরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মীর কাশেম (৩২) ওই এলাকার মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে।

লুট হওয়ার গরুগুলোর মালিক মোহাম্মদ আলী জানান, রাত ৩টার দিকে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল তার গোয়াল ঘরে থাকা ৭টি গরু নিয়ে যায়। তার মেয়ে রাতে দেখতে পান গোয়ালঘর খালি। এসময় বাড়িতে থাকা জামাতা ফারুকসহ পরিবারের সদস্যরা ছুটাছুটি শুরু করে। প্রধান সড়কে গিয়ে দেখতে পান ডাকাতদল ৭টি গরু গাড়ি তুলতে শুরু করে। এসময় তারা লুট করা গরুগুলো ডাকাতদলের কবল থেকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এসময় ডাকাতদল ফারুককে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তা লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান ফারুক।

তিনি আরো জানান, নিহত মীর কাশেম তার ভাতিজা। রাতে ঘটনার পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। সকালে স্থানীয়রা মীর কাসেমের মৃতদেহ পাশ্ববর্তী সবজি ক্ষেতে দেখতে পান। রাতে ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলায় ডাকাতরা তাকে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং হাত-পা-মুখ বেধে সেখানে ফেলে যান। গরু লুট করতে আসা ডাকাতরাই মীর কাশেমকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। মীর কাশেমের মৃতদেহে দুহাত পেছনে, মুখ, চোখ, এবং পা জোড়া বাধা অবস্থায় পাওয়া যায়। সকালে রামু থানার ওসি (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে।

গৃহকর্তার ছেলে তারেক ও মেয়ে শামীমা আকতার জানান, ডাকাতি চলাকালে ৯৯৯ এ কল করে পুলিশের সহায়তা চাইলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ১ ঘন্টারও বেশি পরে। অথচ থানা থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। দেরিতে আসার পরও পুলিশের এক কর্মকর্তা বাড়ির সদস্যদের ৯৯৯ এ কল করায় তাদের বকাঝকা করেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, চুরি হলে আমরা কি করবো, ডাকাতি হলে আসতাম। এসময় স্কুল ছাত্রী শামীমাকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তুমি ক্লাস নাইনে পড়, নাইন বানান জানো? তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম তারা জানাতে পারেননি। সকাল ১০টায় থানায় যোগাযোগ করতে বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আলম জানান, রাতে গরু ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলে। মীর কাশেম মানসিক ভারসাম্যহীন। সে অপরিচিত লোকজন দেখলে চিল্লাচিল্লি করে। তাছাড়া গভীর রাতে হওয়ায় সে হয়তো চিৎকার দিতে চেয়েছিলো। এজন্য ডাকাতরা তাকে মারধর এবং হাত-পা-মুখ বেধে হত্যা করেছে।

মোহাম্মদ আলীর জামাতা ফারুক জানান, গরুগুলো গাড়িতে তোলার সময় দুজন ডাকাত তাকে মারধর শুরু করে এবং তাকেও বেধে রাখার চেষ্টা চালায়। এসময় তিনি একজন ধরে রাখলে আরো ৪ জন ডাকাত এসে তাকে মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পরে বড় সাইজের দুটি গরু নিয়ে ডাকাতদল গাড়িযোগে সটকে পড়ে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, যে মারা গেছে সে মানসিক রোগী। গরু ডাকাতি হয়েছে রাতে, আর তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে সকালে। বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।

উল্লেখ্য রামুতে সাম্প্রতিক সময়ে গরু ডাকাতির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫দিন পূর্বে রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকার নুরুল হকের বাড়িতেও ডাকাতদল হানা দিয়ে ৪টি গরু লুট করেছে। একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গরু, ডাকাত, যুবক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন